ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের এক অজানা ভূমিকম্পের কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই ভূমিকম্পে গঙ্গা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায় বলে একটি নতুন গবেষণায় জানা গেছে। গবেষণা অনুসারে, আড়াই হাজার বছর আগে ভূমিকম্পের কারণে গঙ্গার পথ হঠাৎ স্থানান্তরিত হয়ে যায়। ভূতাত্ত্বিক প্রমাণের মাধ্যমে সেই স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিকে প্রমাণ করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের আঘাতে নদীর তলদেশে থাকা পলি বা বালু আগ্নেয়গিরির লাভার মতো উৎক্ষেপিত হয়ে নদীর চলার পথ বদলে দেয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে এ ধরনের পরিবর্তন খেয়াল করছেন বিজ্ঞানীরা। অনুরূপ স্থানান্তরের মতো আজ বিশ্বের বিভিন্ন নদীর কারণে বন্যা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ এলিজাবেথ চেম্বারলেইন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে নদীর বাঁক পরিবর্তনের বিষয়টি কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েক শতাব্দী পরে টের পাওয়া যায়। যদিও ভূমিকম্পের কারণে অনেক সময় বাঁক পরিবর্তনের বিষয়টি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক দিনের মধ্যে দেখা যায়। নদীর পথ পরিবর্তন হলে পুরোনো জলপথটি ধীরে ধীরে পলি দিয়ে ভরাট হয়ে যায়। পুরোনো পথে পলি মাটির প্রমাণ থেকে যায়। ভূমিকম্পের কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন গঙ্গা নদীর বাঁক বদলে গিয়েছিল।
গাঙ্গেয় বদ্বীপের উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নতুন তথ্য পেয়েছেন। বর্তমান গঙ্গা নদীর অবস্থান থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে একটি অর্ধচন্দ্রাকার আকার দেখা যায়। প্রায় দুই কিলোমিটার প্রশস্ত ও কয়েক অর্ধশত কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত সে পথটি আদি গঙ্গার মূল পথ ছিল। গবেষকেরা মনে করেন, তখন রিখটার স্কেলে ৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।
এলিজাবেথ চেম্বারলেইন বলেন, স্যান্ডউইচ বানানোর সময় একটার ওপর একটা পাউরুটি রাখলে যেমন আলাদা স্তর তৈরি হয়, তেমনি নদীর গতিপথ পরিবর্তনে মাটির ওপরে পলি বা বালু জমা পড়ে আলাদা স্তর দেখা যায়। অনেক সময় দূরের কোনো ভূমিকম্পের কারণে ভূঅভ্যন্তরের মাটি বা পলি বের হয়ে নতুন স্তর তৈরি করে। একে বিজ্ঞানীরা বালুর আঘাত হিসেবে অভিহিত করেন। বর্তমানে একই ধরনের ভূমিকম্প হলে গঙ্গা নদী ও এর শাখা–প্রশাখা পদ্মা নদীর আশপাশের জনগোষ্ঠী হুমকির মুখে পড়বে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
সূত্র: সায়েন্স নিউজ ডট অর্গ