বিশ্বের উজ্জ্বলতম এক্স-রে মেশিন চালু
লিনাক কোহেরেন্ট লাইট সোর্স ২ (এলসিএলএস–টু) এক্স-রে লেজার নামের শক্তিশালী এক্স-রে মেশিন তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, বিশ্বের উজ্জ্বলতম এই এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ ও অন্যান্য রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় পরমাণু ও অণুর অবস্থান ধারণ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে চিকিৎসা খাতে যে এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করা হয়, তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ উজ্জ্বল ছবি প্রদর্শন করতে পারে এই এক্স-রে মেশিন।
নতুন এক্স-রে মেশিনটিতে বিশাল একটি তামার প্লেট উচ্চশক্তির এক্স-রের জন্য ইলেকট্রনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে এক্স-রে মেশিনটির মাধ্যমে গবেষকেরা পরমাণু, অণু ও রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোকে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর গবেষণাগারে সংযোজন করা এক্স-রে মেশিনটি এলসিএলএস এক্স-রে মেশিনের তুলনায় ১০ হাজার গুণ বেশি উজ্জ্বল ছবি তৈরি করতে পারে। আর তাই চালুর পরপরই এটি নিখুঁত ছবি ধারণ করে বিশ্বের উজ্জ্বলতম এক্স-রে মেশিন হিসেবে আলোড়ন তৈরি করছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে এই এক্স-রে মেশিন তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, এলসিএলএস-টু লেজারের মাধ্যমে ইলেকট্রন, মাইক্রোওয়েভ ও চুম্বকীয় শক্তির জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছবি ধারণ করতে পারে এক্স-রে মেশিনটি। এ জন্য এক্স-রে মেশিনটিতে অতিবেগুনি লেজার রশ্মি ব্যবহার করে তামার প্লেট থেকে ইলেকট্রনগুলোকে ছিটকে দেওয়া হয়। ছিটকে যাওয়ার আগে একটি যন্ত্রের সাহায্যে তাদের গতি বাড়ানো হয়, ফলে তীব্র মাইক্রোওয়েভ শক্তি নির্গত হয়। আর এই শক্তিকে বস্তুর ওপরে ফেললে নিখুঁত এক্স-রে চিত্র তৈরি হয়।
শুরুর দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। চুম্বকের গোলকধাঁধাকে গবেষকেরা নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। পুরো যন্ত্রের ব্যবস্থাপনা অনেক জটিল বলা যায়। বিজ্ঞানীরা প্রথম ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নাইওবিয়াম টানেলের মাধ্যমে ইলেকট্রন পাঠাতে শুরু করেন। প্রায় ১২ মাস ধরে তাঁরা এক্স-রে যন্ত্রের সব অংশকে ক্যালিব্রেট করেন। ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তি বাড়াতে থাকেন বিজ্ঞানীরা।
অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী নাদিয়া জাটসেপিন বলেন, পারমাণবিক স্কেলে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটে, তা বিস্তারিতভাবে জানাবে এই এক্স-রে মেশিন। যে ছবি তোলা হচ্ছে, তা দিয়ে গবেষকেরা জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্যনির্ভর সিনেমাও বানাতে পারবেন। স্তন্যপায়ীর দৃষ্টি–কৌশল, সালোকসংশ্লেষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা আর জিন নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলোও এই এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে জানা যাবে। শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপের মতো কাজ করায় এই এক্স-রে মেশিন কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষণ যন্ত্র বা পরবর্তী প্রজন্মের সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট