ডাইনোসরের আকার ভিন্ন ছিল কেন
বিশাল আকারের কোনো কিছুর কথা বোঝাতে অনেকেই ডাইনোসরের উদাহরণ দেন। কিন্তু সব ডাইনোসরের আকার কী একই ধরনের ছিল? না তা নয়, আকারে বেশ ভিন্নতা ছিল ডাইনোসরের। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস ও যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ডাইনোসরের নানা ধরনের আকার নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁদের নতুন গবেষণা জার্মান জীববিজ্ঞানী বার্গম্যানের সূত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কার্ল বার্গম্যান ১৮৪৭ সালে পরিবেশ ও প্রাণীর বিকাশ সম্পর্কে এই সূত্র প্রকাশ করেন। তাঁর সূত্র অনুসারে, পেঙ্গুইন যত শীতল এলাকায় থাকে, তত আকারে বড় ও ওজনে ভারী হয়। বাস্তবেও তা দেখা যায়। এই নীতি অনুসারে যেসব প্রাণী যে উচ্চ-অক্ষাংশে থাকে শীতল জলবায়ুতে অবস্থান করে, তারা উষ্ণ জলবায়ুতে বসবাসকারীদের চেয়ে আকারে বড় হয়। সেই হিসাবে ডাইনোসরের আকার নিয়ে পুরোনো জীবাশ্ম থেকে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।
বার্গম্যানের সূত্র ডাইনোসরের জন্য প্রযোজ্য কি না, তা জানতেই গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস ও যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক লরেন উইলসন বলেন, ডাইনোসর ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরের বিভিন্ন আকারের বিবর্তনকে কেবল অক্ষাংশ বা তাপমাত্রার হিসাবে নির্ধারণ করা যায় না। বার্গম্যানের নিয়ম শুধু যেসব প্রাণীর শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে, তাদের জন্য প্রযোজ্য। একসময় মনে করা হতো, এসব কারণে ডাইনোসরের আকার ভিন্ন হতো। বিষয়টি বুঝতে বিভিন্ন জীবাশ্ম রেকর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে ডাইনোসরদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে উত্তরের আলাস্কার বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া ডাইনোসরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এসব এলাকার ডাইনোসর তুষারপাতের মুখোমুখি হতো। পরিবেশ ভিন্ন হলেও গবেষকেরা আর্কটিকের ডাইনোসরদের দেহের আকারে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি খুঁজে পাননি।
আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরের গবেষক প্যাট ড্রাকেনমিলার বলেন, আধুনিক বাস্তুতন্ত্র বুঝতে অতীতের বিবর্তনের তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে। অতীতের দিকে তাকিয়ে বুঝতে হবে, কীভাবে বর্তমান প্রাণীরা এমন আকার পেয়েছে। জীবাশ্মবিদেরা এখনো নিশ্চিতভাবে জানেন না, কেন ডাইনোসর একেক রকমের ছিল। বহুল প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, বড় শরীর শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করে। আবার আকার বড় হলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজভাবে। এসব কারণে বড় আকারের ডাইনোসরের বিকাশ ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।
সূত্র: ফিজিস ডটঅর্গ