ডিজিটাল যন্ত্রে পড়াশোনা কেমন হয়, যা বলছে নতুন গবেষণা
এখন তো সব দিকেই ডিজিটাল যন্ত্র (ডিভাইস)। ছাপা বই জাদুঘরে চলে যাবে—এমন আধেয় ডিজিটাল যন্ত্রের পর্দায় মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। জ্ঞান–বিজ্ঞানের তথ্য থেকে শুরু করে সৃজনশীল সাহিত্য ডিজিটাল পর্দায় পড়তে হবে ভবিষ্যতে—এমন ভাবনা অনেকেরই। নতুন তথ্য বলছে, ডিজিটাল যন্ত্র পড়ার সুযোগ দিলেও পড়ার মান তেমন উন্নত করছে না। ভবিষ্যতে কীভাবে পড়বে, তা নিয়ে গবেষকেরা নতুন এক পরামর্শ দিয়েছেন।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের হাতে পড়ার জন্য ডিজিটাল যন্ত্র তুলে ধরতে বারণ করছেন গবেষকেরা। বিশেষ করে অল্পবয়সীদের ডিজিটাল যন্ত্রের চেয়ে বেশি ছাপা বা প্রিন্টের বই পড়তে উৎসাহিত করছেন একদল গবেষক। পড়ার জন্য ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করলে তা একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় তেমন কাজে আসে না। নতুন গবেষণায় জানা যাচ্ছে, মুদ্রিত যেকোনো কিছু পড়লে মানুষের পড়তে শেখার ক্ষমতা উন্নত হয়।
গত কয়েক দশকে পড়ার জন্য ডিজিটাল যন্ত্রের ব্যবহার বহুমাত্রায় বেড়েছে। ই–বুক, মুঠোফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটারসহ নানান যন্ত্র নতুন ধরনের পড়ার উপকরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতে পড়ার সুযোগ বেড়েছে, কিন্তু পড়ার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
একটি সমীক্ষা এখন প্রস্তাব করছে, ডিজিটাল পড়া এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়া বোঝার উন্নতির মধ্যে কার্যত একটি অস্তিত্বহীন সম্পর্ক রয়েছে। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিডিয়া আলতামুরা বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা আসলে শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে তেমন কাজে আসছে না। ছাপা বই পড়লে যতটা প্রভাব তৈরি হয়, ডিজিটাল যন্ত্রে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। ছাপা বই পড়ার মাধ্যমে পাঠ্য বোঝার ক্ষমতা বেশি বাড়ে।
গবেষকেরা ডিজিটাল যন্ত্রের ক্ষেত্রে এমনটা কেন হচ্ছে, তার দুটি কারণ বের করেছেন। মুদ্রিত বই পড়ার মতো ডিজিটাল মাধ্যমে পড়ার একই প্রভাব দেখা যায় না ডিজটাল পর্দায়, পাঠক বা পড়ুয়া বিভ্রান্ত হয়। যন্ত্র হাতে নিলেই পড়ার চেয়ে অন্য অনেক কাজে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ইন্টারনেট বা অনলাইনের উপস্থিতি নতুন ধরনের পঠনপ্রক্রিয়া চালু করেছে। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে কম ও দ্রুতগতির লেখা বেশি থাকে। কম পরিশীলিত শব্দভান্ডার ব্যবহার করা হয় বলে পাঠকের পঠনক্ষমতা দুর্বল থাকে। আলতমুরা তাই বলছেন, ‘আমরা শিক্ষক ও অভিভাবকদের অল্পবয়সীদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইসের চেয়ে বেশি প্রিন্টের বই তুলে দিতে অনুরোধ করব। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, যদি একজন শিক্ষার্থী অবসর সময়ে ১০ ঘণ্টা মুদ্রিত বই পড়তে ব্যয় করে, তবে তাদের বোঝার ক্ষমতা ডিজিটাল যন্ত্রে পড়ার চেয়ে ছয় থেকে আট গুণ বেশি হবে। আমরা আশা করেছিলাম, তথ্য জানার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে পড়ার বিষয়টি ইতিবাচক। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, উইকিপিডিয়া বা অন্যান্য শিক্ষামূলক ওয়েবপেজ পরিদর্শন বা খবর পড়লে শিক্ষার্থীদের বোঝার ক্ষমতা বাড়ে। আসলে গবেষণায় দেখছি, তেমনটা হচ্ছে না।’
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ান কমিউনিটির ১০টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ৬০৪ শিশু-কিশোর এ গবেষণায় অংশ নেয়। গবেষকেরা তাদের পড়াশোনার মাত্রা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ডেটা সংগ্রহ করেন। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে, যারা বেশি সময় ছাপা বই পড়ে, তাদের চিন্তাভাবনা ডিজিটাল মাধ্যমে যারা পড়ে, তাদের চেয়ে আলাদা। যারা ছাপা মাধ্যমে সাহিত্য পড়ে, তারা ডিজিটাল মাধ্যমে যারা পড়ে তাদের চেয়ে বেশি বুঝতে পারে, প্রকাশ করতে পারে।
সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডটকোডটইউকে