২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

যেভাবে তৈরি হয় প্রাকৃতিক গোলাপি হীরা

মডেলের হাতে ধরা এটি ১৮,১৮ ক্যারেটের ফরচুন পিংক নামের গোলাপি হীরা। গত বছরের নভেম্বরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক নিলামে এর দাম হাঁকা হয়েছিল ৩ কোটি মার্কিন ডলার
রয়টার্স/ডেনিস ব্যালিবাউস

হীরা নিয়ে মানুষের আগ্রহ হাজার বছরের। মূল্যবান হীরা নিয়ে নানা কিংবদন্তি চালু আছে। নানা রঙের হীরা প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। গোলাপি রঙের হীরা বেশ দুর্লভ ও মূল্যবান। বিশ্বের বেশির ভাগ গোলাপি হীরা অতিকায় মহাদেশ বা সুপারকন্টিনেন্ট নুনার বিচ্ছেদ থেকে উদ্ভূত বলে মনে করছেন একদল বিশ্লেষক। হীরা গোলাপি আভার হতে প্রকৃতির হেঁয়ালির প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচণ্ড চাপে হীরার স্ফটিক জালি বিকৃত হলে গোলাপি হীরা উদ্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শক্তিশালী চাপের কারণে হীরার সাধারণ আলোক প্রতিফলনের পরিবর্তন আসে।

অতিকায় মহাদেশ নুনা কলম্বিয়া ও হাডসনল্যান্ড নামেও পরিচিত। ২৫০ কোটি থেকে ১৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর প্রাচীন সুপার মহাদেশ হিসেবে নুনা টিকে ছিল। এই অতিকায় মহাদেশের অংশবিশেষ এখনকার ভারতের পূর্ব উপকূল ও পশ্চিম উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পশ্চিম কানাডার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি গোলাপি হীরা পৃথিবীর সুপার মহাদেশ নুনা ভেঙে যাওয়ার কারণে গঠিত হতে পারে। গবেষকেরা নেচার কমিউনিকেশন সাময়িকীতে হীরা তৈরি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার আর্গিল খনির হীরা বহনকারী শিলা প্রায় ১৩০ কোটি বছর আগে গঠিত হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশাল এক ফাটলের কারণে সুপারকন্টিনেন্ট নুনা ভেঙে যায়। গবেষকেরা হীরার জন্মরহস্য উন্মোচনে পুরোনো ফাটল যেসব অঞ্চলে আছে, তা নিয়ে বেশ ভালোভাবে অনুসন্ধান করেন। সাধারণভাবে মনে করা হয়, ভূপৃষ্ঠে কার্বন পরমাণু নরম ও সরল আকৃতির গ্রাফাইট গঠন করে। ভূপৃষ্ঠের বেশ অভ্যন্তরে চরম পরিস্থিতিতে কার্বন উপাদান কঠিন আকরে পরিণত হয়। এসব আকর থেকে হীরকখণ্ডগুলো দ্রুততার সঙ্গে ম্যাগমাসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। পৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে বিভিন্ন গলিত উপাদান দৃঢ় আকার গঠন করে, যা কিম্বারলাইট পাইপ নামে পরিচিত। বেশির ভাগ হীরা এই পাইপ থেকে পাওয়া যায়।

আর্গিল খনির অবস্থা কিংবা সাধারণ হীরা কেন গোলাপি হয়, তা সরলভাবে ব্যাখ্যা করা কঠিন। হীরার আভা তৈরিতে ভূত্বকের ঠিক নিচে স্তর বা ম্যান্টেলের সাধারণ অবস্থা যথেষ্ট নায়। আরও শক্তিশালী কোনো শক্তির উপস্থিতিতে স্ফটিক কাঠামো বিকৃত হয়। সাধারণভাবে যেভাবে আলো শোষণ করে কিংবা প্রতিফলন করে, সেই বৈশিষ্ট্য বদলে যায়। আর্গিলের গোলাপি হীরা কিম্বারলাইট পাইপে পাওয়া যায় না। এগুলো আগ্নেয় প্রকৃতির ল্যামপ্রোইট পাইপে পাওয়া যায়।  সাধারণত কম গভীরতায় এসব হীরার দেখা মেলে।

কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মায়া কপিলোভা বলেন, আর্গিল খনির অবস্থান অতি প্রাচীন মহাদেশীয় সীমানার মধ্যে। প্রায় ১৮০ কোটি বা ১.৮ বিলিয়ন বছর আগে দুটি মহাদেশীয় প্লেটের সংঘর্ষে সুপার মহাদেশ নুনার বড় একটি অংশ তৈরি হয়। সেই সংঘর্ষের কারণে এসব হীরা গোলাপি আভা লাভ করে। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর পরে যখন নুনা ভেঙে যায়, তখন আর্গিল খনি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তখন হীরকখণ্ডগুলো ভূপৃষ্ঠের ওপরের দিকে চলে আসে। কয়েক দশক ধরে মনে করা হচ্ছে, টেকটোনিক প্রক্রিয়ায় হীরকখণ্ড ধ্বংস হয়ে যায়। বরং এখন ধারণা করা হচ্ছে, সংঘর্ষের কারণে হীরকখণ্ড পৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে।

আর্গিলের হীরা গঠনের অদ্ভুত অবস্থা নিয়ে অনেক বছর ধরেই ভূতাত্ত্বিকেরা বিভ্রান্তিতে আছেন। গেল শতাব্দীর আশির দশকে বেশ কয়েকটি রাসায়নিক বিশ্লেষণের পরীক্ষা চালানো হয়। এতে জানা যায়, প্রায় ১২০ কোটি বা ১.২ বিলিয়ন বছর আগে এসব হীরা গঠিত হয়। অবশ্য তখন কার্বনডেটিং পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। অন্যান্য খনিজ বা প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদানের কারণে হীরার গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার পার্থের কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষক হুগো ওলিরুক বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পাচ্ছি এসব হীরকখণ্ডের বয়স ১৩০ কোটি বছরের বেশি।
সূত্র: সায়েন্স নিউজ