মানুষের মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা
প্রায় ৩ হাজার ৩০০ বিভিন্ন রকম কোষ রয়েছে মানুষের মস্তিষ্কে। এত দিন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা না থাকলেও এবার মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বিস্তারিত বা পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা। বলা হচ্ছে, নতুন মানচিত্রটি এখন পর্যন্ত তৈরি করা মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ও বিস্তারিত মানচিত্র। এই মানচিত্রে রয়েছে নানা ধরনের মস্তিষ্কের কোষের বিন্যাস ও অভ্যন্তরীণ কাজের বিবরণ। এই মানচিত্র নিয়ে সায়েন্স, সায়েন্স অ্যাডভান্সেস ও সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন জার্নালে ২১টি নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর ব্রেন সায়েন্সের নিউরোসায়েন্টিস্ট ও প্রকাশিত পাঁচটি গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক এড লেইন এমআইটি টেকনোলজি রিভিউকে বলেন, ‘এটিকে শুধু একটি মানচিত্র বলা যাবে না। সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ নতুন একটি ক্ষেত্র উন্মোচন করা হয়েছে আমাদের সামনে। আপনি এখন মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষের খোঁজ জানবেন আরও নিখুঁতভাবে। আগে এত বিস্তারিত তথ্য আমাদের সামনে ছিল না।’
মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে করা হয়েছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হচ্ছে ইঁদুর, মানুষ ও বানরের মস্তিষ্কে পাওয়া বিভিন্ন কোষ তালিকাভুক্ত করা। বিভিন্ন কোষের মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের কোষ নিউরন। নিউরন রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিক বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করে। এ ছাড়াও রয়েছে নন-নিউরোনাল কোষ। নন-নিউরোনাল কোষগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্লিয়া। গ্লিয়া এমন ধরনের মস্তিষ্কের কোষ, যা নিউরনের কাঠামোগত সহায়তা ও পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি সংকেত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কে আনুমানিক ৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকে। এ বিষয়ে সায়েন্স জার্নালের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক মাতিয়া মারোসো বলেন, ‘মানুষের মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরি করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কোষের আরএনএ তালিকাভুক্ত করতে বিজ্ঞানীরা ট্রান্সক্রিপ্টমিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। আরএনএ হচ্ছে বিশেষ ধরনের জেনেটিক অণু, যার মধ্যে প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা থাকে। এই গবেষণায় কয়েক লাখ কোষের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
গবেষণায় বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের একক কোষ স্কেলনির্ভর মানচিত্র তৈরি করেছেন গবেষকেরা। আর তাই এই মানচিত্র মানুষ ও অন্য প্রাণীদের মস্তিষ্কের মধ্যে সরাসরি তুলনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ, আমাদের মস্তিষ্কে থাকা কোষের মতো কোষের সন্ধান মিলেছে শিম্পাঞ্জি ও গেরিলার মস্তিষ্কেও। নতুন মানচিত্রের মাধ্যমে কোন কোষ কীভাবে কাজ করে তা জানা যাবে। এ বিষয়ে অ্যালেন ইনস্টিটিউটের স্নায়ুবিজ্ঞানী ট্রাইগভি ব্যাক্কেন বলেন, ‘বিভিন্ন কোষ আলাদাভাবে কাজ করে। এই মানচিত্রের মাধ্যমে কোন কোষের কী কাজ, কীভাবে এই কোষগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা আমরা আরও ভালোভাবে জানতে পারব। মানুষ কেন শিম্পাঞ্জি থেকে আলাদা, তা এই মানচিত্রের মাধ্যমে বের করা যাবে। এই মানচিত্র থেকে বিশদ বিবরণ পাওয়া গেলেও এটি আসলে মস্তিষ্কের মানচিত্রের প্রথম খসড়া। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের নতুন আবিষ্কৃত কোষগুলোর কার্যকারিতার আরও বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করতে চান। মস্তিষ্কের গভীরতা সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি হবে তখন। এই মানচিত্র স্নায়বিক রোগের বিকাশ সম্পর্কে জানারও সুযোগ করে দেবে।’
সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও নেচার