বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের বায়ুকল
শিল্পকর্ম নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁরা ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের বিখ্যাত সব ছবির গল্প জানেন। ভ্যান গঘ ১৮৮৬-৮৭ সালে মন্টেমার্ট্রে সিরিজের অংশ হিসেবে অনেকগুলো ছবি আঁকেন। ছবিগুলোর মধ্যে ১৭টি ছবিতে একটি বায়ুকল (উইন্ড টারবাইন বা উইন্ডমিল) দেখা যায়। ছবিতে থাকা সেই বায়ুকল ছিল কাঠের তৈরি। এরপরে সভ্যতার অগ্রগতিতে সারা দুনিয়া দখল করে নিয়েছে ইস্পাতের তৈরি বায়ুকল। কিন্তু আবারও কাঠের বায়ুকল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন প্রকৌশলীরা। এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের বায়ুকল তৈরি করেছে সুইডেনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মোডভিয়ান। বায়ু শক্তির জন্য ভবিষ্যতে কাঠের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়টিকে জনপ্রিয় করতেই কাঠের তৈরি বায়ুকলটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী অটো লুন্ডম্যান বলেন, ‘আমরা কাঠের তৈরি বায়ুকলে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছি। বায়ুকলে ব্যবহৃত একেকটি ব্লেডের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৪৯২ ফুট। সবচেয়ে উঁচু এই বায়ুকল থেকে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সুইডেনের গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রায় ৪০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে কাঠের তৈরি বায়ুকলটি।’
২০১০ সালে বিশ্বের বায়ুচালিত বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২০০ গিগাওয়াট, যেখানে ২০২৭ সালে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৭০০ গিগাওয়াট। কাঠের বায়ুকল ও স্টিলের তৈরি বায়ুকলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মোডভিয়ানের তৈরি বায়ুকলের ১০৫ মিটার লম্বা টাওয়ারে ১৪৪ স্তরের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। কাঠ ও আঠা ব্যবহার করে তৈরি টাওয়ার সহজে পরিবহন করা যায়। এসব কারণে লম্বা কাঠের টাওয়ার তৈরি করা বেশ সহজ।
সিমেন্স গেমসা বিশ্বের বৃহত্তম বায়ুকল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের প্রধান ড. ম্যাক্সিমিলিয়ান স্নিপারিং বলেন, কাঠের বায়ুকল ইস্পাতের বায়ুকলের পরিপূরক হতে পারে। ইস্পাতের বায়ুকল নির্মাণে কার্বন নিঃসরণ শূন্য করতে কাঠের ব্যবহার দারুণ এক সুযোগ তৈরি করবে। বায়ুর মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের বিদ্যুৎ কম খরচে উৎপাদন করা যায়।
প্রকৌশলী অটো লুন্ডম্যান জানিয়েছেন, বায়ুকল টাওয়ার তৈরির জন্য প্রায় ২০০টি গাছ ব্যবহার করা হয়েছে। স্প্রুস নামের গাছের প্রজাতি টাওয়ার নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গাছ সাধারণত ক্রিসমাস ট্রি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৭ সালে ১০০টি কাঠের টারবাইন তৈরি করা হবে।
সূত্র: বিবিসি