মহাকাশে টানা ৩৭৪ দিন থাকার রেকর্ড করে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন দুই নভোচারী

মহাকাশে থাকার রেকর্ড গড়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন নভোচারি ওলেগ কোনোনেনকো ও নিকোলাই চুব (ডানে)নাসার ভিডিও থেকে নেওয়া

টানা ৩৭৪ দিন মহাকাশে থাকার রেকর্ড গড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) ছেড়েছেন দুই রুশ নভোচারি ওলেগ কোনোনেনকো ও নিকোলাই চুব। একই সঙ্গে কক্ষপথে ১ হাজার ১১১ দিন থাকার রেকর্ডও গড়েছেন কোনোনেনকো। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারী ট্রেসি ডাইসনও স্টেশনে ছয় মাস কাটিয়ে কাজাখস্তানের উদ্দেশ্যে সয়ুজ স্পেস ক্যাপসুলে আরোহণ করেন।

রেকর্ড সৃষ্টি করা অভিযানের পর নাসার দুই নভোচারীকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে সয়ুজ। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মহাকাশচারী ওলেগ কোনোনেনকো, প্রথমবারের মহাকাশচারী নিকোলাই চুব ও নাসার প্রবীণ মহাকাশচারী ট্রেসি ডাইসন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে ‘আনডক’ করে কাজাখস্তানে একটি নিখুঁত অবতরণের মধ্য দিয়ে রেকর্ড গড়ে গত সোমবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

সয়ুজ এমএস–৭৫/৭১–এস মহাকাশযান সোমবার ভোর ৪টা ৩৬ মিনিটে স্টেশন থেকে আনডক করে। দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব ট্র্যাজেক্টরি বরাবর সুস্পষ্ট বায়ুমণ্ডলে ফিরে এসে, মহাকাশযানটি একটি বড় লাল-সাদা প্যারাসুটের নিচে মেঘহীন নীল আকাশের মধ্য দিয়ে নেমে আসে। কাজাখস্তানের মাটি স্পর্শ করে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৯ মিনিটে।

কাজাখস্তানে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে, গত ২৩ মার্চ উৎক্ষেপণের পর থেকে কক্ষপথে ১৮৪ দিন সম্পন্ন করেন ডাইসন। ১৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি সয়ুজে চড়ে কোনোনেনকো ও চুব, মহাকাশে ৩৭৪ দিন অর্থাৎ এক বছরের বেশি সময় কাটান যা এখন পর্যন্ত কোনো মহাকাশচারীর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করা দীর্ঘতম সময়। আগের চারটি ভ্রমণসহ, মহাকাশে কোনোনেনকোর কাটানো মোট সময় এখন ১ হাজার ১১১ দিন, যা আগের রেকর্ডধারী মহাকাশচারী গেনাডি পাডালকার রেকর্ড গড়া ৮৭৮ দিনের চেয়ে ২৩৩ দিন বেশি।

এর আগে রোববার দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিদায়ী স্টেশন কমান্ডার কোনোনেনকো ফাঁড়িটি উইলিয়ামসের হাতে তুলে দেন, যিনি বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে ৬ জুন ল্যাবে পৌঁছেছিলেন। উইলিয়ামস ২০১২ সালে ল্যাবটিতে শেষবার আইএসএসের কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

উইলিয়ামস স্টারলাইনার ও স্টেশন অপারেশনে তাঁর সহযাত্রী নভোচারীদের প্রভাব উল্লেখ করে বলেন,‘অভিযান–৭১ আমাদের সবাইকে নমনীয়তা সম্পর্কে শিখিয়েছে।’ তিনি ওলেগ কোনোনেনকোকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ওলেগ, আমরা রাতের খাবার টেবিলের চারপাশে আপনার শত শত গল্প মিস করব। তবে আমার ধারণা, আপনি মহাকাশে এক হাজার দিনের বেশি থাকার জন্যই গল্পগুলো পেয়েছেন, তা–ই না?’ উইলিয়ামস উল্লেখ করেন, স্টেশন ক্রুরা চুবের নির্ভুলতা ও পেশাদারত্ব মিস করবেন এবং ট্রেসির সাংগঠনিক দক্ষতা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে শৃঙ্খলা তৈরি করার ক্ষমতাকে মিস করবেন। উইলিয়ামস তাঁদের তিনজনকেই ধন্যবাদ জানান।

ফিরে আসা মহাকাশচারীদের সংকুচিত সয়ুজ ডিসেন্ট মডিউল থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করার জন্য রুশ পুনরুদ্ধার দল, ফ্লাইট সার্জন ও নাসার সহায়তাকর্মীরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা মহাকাশচারীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং তাঁদের পরিবার ও বন্ধুদের বাড়িতে স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ করতে সাহায্য করেন।

মহাকাশের ওজনহীন পরিবেশে পেশির ভর ও হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য সাধারণত নভোচারীদের প্রতিদিন ব্যাপক ব্যায়াম করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে থাকার কারণে ফিরে আসার পর নভোচারীদের মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে কয়েক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় লাগে। অবশ্য ফিরে আসা তিন সদস্যকেই সুস্থ দেখাচ্ছিল। ডিসেন্ট মডিউল থেকে টেনে বের করে নিকটবর্তী রিক্লাইনারে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁদের চেহারায় ছিল বিস্তৃত হাসি।

এদিকে অন্য চার নভোচারী কমান্ডার ম্যাথিউ ডমিনিক, মাইক ব্যারাট, জিনেট এপস ও আলেকজান্ডার গ্রেবেনকিন বর্তমানে তাঁদের ছয় মাসের সফরের শেষের দিকে আছেন। আগামী অক্টোবরের শুরুর দিকে তাঁরা আরেকটি ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তার আগে কোনোনেনকো, চুব ও ডাইসনকে তাঁদের ম্যারাথন অভিযানের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা দরকার ছিল।
সোমবার সয়ুজ ক্রুদের বাড়িতে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে নাসা ও স্পেসএক্স আবহাওয়ার অনুমতি দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার একটি ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে নভোচারী নিক হেগ ও আলেকজান্ডার গরবুনভকে ফিরিয়ে আনার কথা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি