কার্পেটের মতো যন্ত্র তৈরি করবে সবুজ জ্বালানি তেল
আলাদিনের সেই বিখ্যাত কার্পেটের কথা মনে আছে? আরব্য রজনীর বিখ্যাত চরিত্র আলাদিন ঘুরে বেড়াতেন উড়ন্ত কার্পেটের মাধ্যমে। সূর্যের আলো, পানি আর কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে বিকল্প জ্বালানি তৈরির জন্য এবার কার্পেটের মতো দেখতে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের দাবি, ওজনে হালকা যন্ত্রটি দিয়ে পেট্রল বা ডিজেলের বিকল্প সবুজ জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব। জ্বালানি তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় নেট-শূন্য জ্বালানি বা নেট জিরো ফুয়েল তৈরি করা হবে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির মতো কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করবে না।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ জ্বালানি প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছে যন্ত্রটি। গালিচার আদলে তৈরি যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা ভাসমান পাতার মতো। পাতা যেমন পানিতে পড়লে ভাসতে থাকে, তেমনি এই যন্ত্রও পানিতে পাতার মতোই ভেসে থাকে। এই পাতলা আর নমনীয় যন্ত্রটি বড় পরিসরে ব্যবহার করা গেলে সবুজ জ্বালানি তৈরির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি ও সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের অধ্যাপক এরউইন রেইসনার বলেন, ‘সৌর প্যানেল বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিশ্বকে নেট-শূন্য জ্বালানি সরবরাহ করে দুর্দান্ত অবদান রাখছে। সূর্যের আলো ব্যবহার করে নন-ফসিল জ্বালানি তৈরি করা যায়। এই জ্বালানি গাড়ি বা জাহাজশিল্পে ব্যবহার করা সম্ভব।’
যন্ত্রটির ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে রেইসনার বলেন, ‘এই কার্পেটের মতো যন্ত্রটি বিভিন্ন হ্রদ ও নদীর মোহনায় ভাসানো হবে। সেখান থেকে সূর্যের আলো, পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইডকে পেট্রল ও অন্যান্য জ্বালানির বিভিন্ন উপাদানে রূপান্তর করবে যন্ত্রটি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে কার্বনের ব্যবহার কম হবে। কার্বন বর্তমানে জ্বালানির প্রধান উপাদান হলেও আমরা কার্বনের প্রাচীন উৎস যেমন কয়লা, তেল ও গ্যাস ব্যবহার বন্ধের চেষ্টা করছি। আমরা যে রাসায়নিক তৈরি করছি, তা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজেল বা পেট্রলের বিকল্প নিয়ে কাজ করছি আমরা। বিমানের জন্য টেকসই সবুজ কেরোসিন তৈরিরও কাজ চলছে। আমাদের আরেকটি লক্ষ্য হলো জাহাজশিল্পের জন্য জ্বালানি তৈরি করা। কার্যকর সবুজ বিকল্প জ্বালানি বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে বড় ভূমিকা পালন করবে।’
জানা গেছে, কার্পেটের মতো যন্ত্রটি আলো শোষণের পর কৃত্রিম অনুঘটক ব্যবহার করে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানিকে কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন মিশ্রণে পরিণত করতে পারে। এই মিশ্রণ শিল্প খাতে ‘সিনগাস’ নামে পরিচিত। বর্তমানে বিভিন্ন রাসায়নিক ও জ্বালানি উৎপাদনে মিশ্রণটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্র: গার্ডিয়ান