পুরোনো ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় জানতে হবে
পড়ালেখা শেষ করে বেশ কিছুদিন ধরে চাকরির চেষ্টা করছেন তারেক মাহমুদ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করার পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজের জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান তিনি। কিন্তু কিছুতেই চাহিদা ও সাধ্যের সমন্বয় হচ্ছিল না। বিভিন্ন দোকানে ঘোরাঘুরির পর অবশেষে জীবনে প্রথমবারের মতো ল্যাপটপ কিনেছেন তারেক। তা–ও আবার মাত্র ১৫ হাজার টাকায়। এত কম দামে কোর আই ৩ এবং ৪ গিগাবাইট র্যামের একটি পুরোনো ল্যাপটপ কিনে খুব খুশি তারেক। পুরোনো হলেও ল্যাপটপটিতে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এক মাসের সার্ভিস ওয়ারেন্টির সুবিধা দিয়েছে। ফলে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে থাকেন। কিন্তু দুই মাসের মাথায় তাঁর ল্যাপটপের চার্জার নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ৫০০ টাকা দিয়ে চার্জার কিনতে বাধ্য হন তারেক। পুরোনো ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে তারেকের মতো অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হন। আর তাই পুরোনো ল্যাপটপ কেনার সময় বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
পুরোনো ল্যাপটপের সমস্যা
পুরোনো ল্যাপটপের দাম কম হলেও সব যন্ত্রাংশ ভালোভাবে কাজ না-ও করতে পারে। বিক্রয়োত্তর সেবাও মেলে না। ফলে অনেকেই না বুঝে পুরোনো ল্যাপটপ কিনে সমস্যায় পড়েন। এ জন্য কেনার আগে অবশ্যই ল্যাপটপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের তথ্য ভালোভাবে জানতে হবে। এ বিষয়ে কম্পিউটার ও প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রায়ানস কম্পিউটারসের মাল্টিপ্ল্যান শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুর রহিম বলেন, ‘পুরোনো ল্যাপটপগুলো বাজারে কম দামে পাওয়া যায়। এর মূল কারণ হলো, সেখানে যে যন্ত্রাংশ রয়েছে, সেগুলো বেশ পুরোনো প্রজন্মের। এর ফলে যন্ত্রাংশগুলো নতুন প্রজন্মের যন্ত্রাংশের তুলনায় ঠিকমতো কাজ করতে পারে না যেমন কোর আই ৫–এর নতুন প্রজন্মের প্রসেসর কোর আই ৭–এর পুরোনো প্রজন্মের তুলনায় দ্রুত কাজ করতে পারে।’
কম্পিউটার ও প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান স্টার টেকের পণ্য ব্যবস্থাপক রাজু আহমেদ পুরোনো ল্যাপটপ কেনার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘পুরোনো ল্যাপটপগুলো দেখতে নতুন মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা থাকে। অনেক সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান যে যন্ত্রাংশগুলো ফেলে দেয়, সেগুলো ঠিক করে এসব ল্যাপটপে ব্যবহার করা হয়। তাই পুরোনো ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ কত দিন ভালোভাবে কাজ করবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর তাই পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রেতারা শুধু সার্ভিস ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকেন। সার্ভিস ওয়ারেন্টি আর পার্টস ওয়ারেন্টি আলাদা বিষয়। পার্টস ওয়ারেন্টি বলতে, ভেতরের যন্ত্রাংশে কোনো সমস্যা থাকলে তা প্রয়োজনে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। সার্ভিস ওয়ারেন্টিতে সে সুযোগ নেই।’
পুরোনো ল্যাপটপ কি কেনা উচিত?
নতুন ল্যাপটপের দাম বাড়ার পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে পুরোনো ল্যাপটপ কিনে থাকেন। কারণ, দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের উপযোগী সাধারণ মানের একটি নতুন ল্যাপটপ কিনতে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। অনেকের পক্ষে এত দাম দিয়ে নতুন ল্যাপটপ কেনা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পুরোনো ল্যাপটপই একমাত্র ভরসা।
কিনতেই যদি হয়
দোকান থেকে ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার সময় দেখতে নতুন এমন ল্যাপটপ না কিনে পুরোনো ধরনের ল্যাপটপ কেনা উচিত। এ বিষয়ে মোহাম্মদ আবদুর রহিম বলেন, ‘এটি একটি ভালো উপায় হতে পারে। এতে অন্তত বোঝা যাবে, ল্যাপটপটি পুরোনো হলেও সেখানে ত্রুটিযুক্ত যন্ত্রাংশ যুক্ত করা হয়নি। তবে পরিচিত কারও ব্যবহার করা ল্যাপটপ কিনলে সবচেয়ে ভালো হয়।’
মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সেন্টারের বেশ কিছু দোকান রয়েছে, যারা পুরোনো ল্যাপটপ কেনাবেচা করে। দোকান থেকে পুরোনো ল্যাপটপ কেনার আগে অবশ্যই সেটি চালু করে প্রসেসর, র্যাম ও এসএসডির (সলিড-স্টেট ড্রাইভ) ক্ষমতা ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে। ল্যাপটপের পর্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই পর্দায় কোনো ডটবিন্দু বা আলো কম–বেশি হয় কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে। ল্যাপটপের পর্দার কোনো অংশ ভাঙা বা স্ক্র্যাচ পড়লে সেটি না কেনা ভালো। কি-বোর্ডের সব অংশ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা আলাদাভাবে পরখ করতে হবে। শুধু তা–ই নয়, ল্যাপটপ কেনার আগে ব্যাটারি, চার্জার বা পাওয়ার অ্যাডাপ্টর ভালোভাবে কাজ করছে কি না, তা–ও জানা প্রয়োজন।