আপনার ড্রয়ার থেকে ই-বর্জ্য সংকট তৈরি হচ্ছে না তো
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে শখ করে হয়তো এমপিথ্রি প্লেয়ার কিনেছিলেন বা ডিজিটাল ক্যামেরা। অনেক বছর পর দেখা যায়, সেই ক্যামেরা বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ঠাঁই হয়েছে বাড়ির খাটের নিচে বা আলমারির ওপরে। এমন করে আমাদের ঘরে অনেক অব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ও প্রযুক্তিপণ্য জমতে থাকে। এ ধরনের গেরস্তালি পণ্যের কারণে বৈশ্বিক ই-বর্জ্য বাড়ছে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাজ্যের অলাভজনক সংস্থা ম্যাটেরিয়াল ফোকাস অনুমান করছে যে চার বছর ধরে গড়ে ৩০টি বৈদ্যুতিক যন্ত্র বাড়িতে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। চার বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ২০–এর মতো। বাড়িতে পড়ে থাকে, এমন শীর্ষ ১০টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে রিমোট কন্ট্রোল, মুঠোফোন আর হেয়ার ড্রায়ার। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ইলেকট্রনিক বর্জ্য পাঁচ গুণ দ্রুত বাড়ছে বলে জানা গেছে।
ম্যাটেরিয়াল ফোকাসের নির্বাহী পরিচালক স্কট বাটলার বলেন, ‘আমাদের সবার বাড়িতে একটি বিশেষ ড্রয়ার আছে। সেখানে এমন সব তার আর বৈদ্যুতিক বস্তু আছে, যা আমরা জানি না কিসের জন্য রাখা আছে। ডিভিডির জন্য কেনা একটি ডিভিডি রিমোট হয়তো রেখে দিয়েছি। কিন্তু ডিভিডি আমাদের ঘর থেকে হারিয়ে গেছে অনেক আগে।’
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ঘরবাড়িতে ৮৮ কোটির বেশি অব্যবহৃত যন্ত্র পড়ে আছে। এ ধরনের বর্জ্যকে কখনোই সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মেলানো যাবে না। আমরা যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক যন্ত্র ফেলে দিচ্ছি, তার মূল্য ১০০ কোটি পাউন্ডের বেশি। পুরোনো যন্ত্রপাতির বিভিন্ন উপাদান সবুজ প্রযুক্তির বিভিন্ন পণ্যে ভবিষ্যতে ব্যবহারের সুযোগ আছে। পুরোনো ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক টুথব্রাশ এবং শেভারের ভেতর ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, লিথিয়াম ব্যাটারি আছে, যা লিথিয়ামের বড় উৎস হতে পারে। এসব যন্ত্রে সোনাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু সংরক্ষিত আছে কিন্তু।
যুক্তরাজ্যের বৈদ্যুতিক পুনর্ব্যবহার কেন্দ্র সুইপের ব্যবস্থাপক জাস্টিন গ্রিনওয়ে বলেন, কম্পিউটারে বিভিন্ন মূল্যবান উপাদান ব্যবহার করা হয়। এসব বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সোনাসহ বিভিন্ন ধাতু সংগ্রহের সুযোগ আছে। এসব বর্জ্য পুতে ফেললে বা পুড়িয়ে ফেললে অনেক মূল্যবান পদার্থ হারিয়ে যায়। এসব উপাদান পরিবেশে ফেললেও বন্য প্রাণীর ক্ষতি হতে পারে। এসব বর্জ্য জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিকর অবদান রাখে।
ম্যাটেরিয়াল ফোকাস জানাচ্ছে, বছরে এক লাখ টনের বেশি বৈদ্যুতিক গেরস্তালি যন্ত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আবার ৩ লাখ টনের বেশি বৈদ্যুতিক বর্জ্য চুরি করে পাচারের ঘটনাও ঘটছে। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়েছিল। গড়ে একজন মানুষ ৭ দশমিক ৩ কিলোগ্রাম ই–বর্জ্য তৈরি করছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে ২০৩০ সালে এই আকার ৭ কোটি ৪৭ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। সারা বিশ্বের মাত্র ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ ই-বর্জ্য এখন সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহার বা রিসাইকেল করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা থেকে জানা যায়, ই-বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর দেশে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য। এর মধ্যে কেবল মুঠোফোন থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ লাখ টন ই-বর্জ্য। অন্তত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২টি নষ্ট টেলিভিশন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ১ লাখ ৭০ হাজার টনের মতো ই-বর্জ্য।
সূত্র: বিবিসি