মার্ক জাকারবার্গের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী
সব বিখ্যাত মানুষই চান মানুষ তাঁকে মনে রাখুক। নিজের সেরা কাজের জন্য সবাই চান মৃত্যুর পরেও মানুষ যেন তাঁকে স্মরণ করে। ম্যাক কম্পিউটার বা আইফোনের জন্য সবাই যেমন স্টিভ জবসকে স্মরণ করে। মার্ক জাকারবার্গের ইচ্ছা, তাঁকেও যেন সবাই মনে রাখে।
মার্ক জাকারবার্গ মেটাকে শুধু একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানি হিসেবে দেখতে রাজি নন। এ প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে সংযোগের জন্য অগ্রগামী মাধ্যম হিসেবে ভাবতে চান তিনি।
অগমেন্টেড রিয়েলিটির (প্রতিস্থাপিত বাস্তবতা) মতো প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে মেটা। ডিজিটাল মিথস্ক্রিয়াকে নতুন আকৃতি দিতে নানা উদ্ভাবন ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে মেটা কাজ করছে। ভবিষ্যতের দুনিয়া মার্ক জাকারবার্গকে কীভাবে মনে রাখবে, তা নিয়ে এক সাক্ষাত্কারে নিজের কথা প্রকাশ করেছেন তিনি। উদ্ভাবন ও মানুষের সংযোগের ওপর গভীর মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন জাকারবার্গ। একক কোনো পণ্য বা অ্যাপের জন্য তিনি সবার কাছে পরিচিতি চান না। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী একটি মাধ্যম তৈরি করা, যেটি দিয়ে মানুষ বিশ্বজুড়ে সংযোগ স্থাপন করে জীবনকে রূপান্তরে সহায়তা করে। এ বিষয়কেই তিনি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার পরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখছেন।
মেটা আসলে একটি মাধ্যম তৈরিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্দিষ্ট কোনো অ্যাপ নিয়ে মেটার আগ্রহ নেই। এক সাক্ষাৎকারে মেটার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন মার্ক। মানুষের মধ্যে সংযোগের জন্য মৌলিক মাধ্যম বিকাশের জন্য চেষ্টা করছে মেটা। শুধু অ্যাপ তৈরি করতে চায় না মেটা। মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ‘আপনি যদি এখন থেকে ২০-৩০ বছর পেছনে তাকান, তখন আমরা চাইতাম একটি প্রযুক্তি কোম্পানি হোক। এখন আমরা একটি অ্যাপ কোম্পানি নই। মেটার সব উদ্যোগ সফল না হলেও, মেটা ঝুঁকি নিচ্ছে। নানা ধরনের উদ্ভাবন করছে। আমি চাই, সবাই ভবিষ্যতে আমাদের দিকে দেখবে। তখন বলবে, আমরা সত্যিই অনেক বড় কাজ করেছি। হয়তো সব কাজ করেনি মেটা, কিন্তু মেটা শিল্প খাত ও বিশ্বকে নতুন দিক দেখিয়েছে বলবে। এই ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা মেটার শুরু থেকেই পথ দেখিয়েছে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করছে।’
মেটার বিবর্তন ও রিব্র্যান্ডিং নিয়েও আলাপ করেন মার্ক জাকারবার্গ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে ২০০৪ সালে নিজের কক্ষে বন্ধুদের নিয়ে ফেসবুক চালু করেছেন জাকারবার্গ। ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই জাকারবার্গ আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।
ফেসবুকের কারণে মার্ক জাকারবার্গ দুই দশক ধরে বিশ্ব প্রযুক্তি নেতাদের একজন। ২০১২ সালে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম এবং ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করে। পরে সব প্রতিষ্ঠান এক হয়ে মেটার অধীনে কাজ শুরু করে। ২০২১ সালে মেটা যাত্রা শুরু করে। মেটা আসলে মেটাভার্স বা ভার্চ্যুয়াল মহাবিশ্ব, যার মাধ্যমে মার্ক জাকারবার্গ ডিজিটাল ও বর্তমান বিশ্বকে একীভূত করার দিকে মনোনিবেশ করছেন।
ভবিষ্যতের দুনিয়ার জন্য নানা ধরনের যন্ত্রের সম্প্রসারণ ও পরিধেয় প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে মেটা। সফটওয়্যার বিকাশের পাশাপাশি মেটা নানা ধরনের যন্ত্র তৈরি করছে। কোয়েস্ট মিক্সড-রিয়েলিটি হেডসেটসহ সম্প্রতি উন্মোচিত ওরিয়ন এআর (অগমেন্টেড রিয়েলিটি) চশমা মেটা তৈরি করেছে। এনভিডিয়ার এআই চিপস আর পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে মেটা। পরিধেয় প্রযুক্তির বাজারে প্রতিযোগিতার সঙ্গেল তাল মিলিয়ে চলছে মেটা। মেটার হেডসেটের প্রতিযোগীর মতোই অ্যাপলের ভিশন প্রো হেডসেটসহ আলোচিত অনেক প্রযুক্তি অবশ্য বাজারে তেমন আলোড়ন তৈরি করতে পারছে না। বাজারে এসব যন্ত্র ভালো না করলেও মেটা লেগে আছে চমক তৈরির জন্য। এআর চশমাকে মেটার বর্তমান উদ্ভাবন বলা হচ্ছে। জাকারবার্গ বলেন, ‘আমরা কখনোই নিজেদের শুধু একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ওয়েবসাইট হিসেবে ভাবিনি।’
প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্য নেতাদের মতো নিজের প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন মার্ক জাকারবার্গ। স্টিভ জবসের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার সংযোগ ঘটেছিল। ইলন মাস্ক নানাভাবে মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ ও পৃথিবীর বাইরে মানবতার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। জাকারবার্গ মেটার মাধ্যমে মানুষের অনলাইন ও অফলাইন সংযোগের সীমানা দূরে নিয়ে যেতে চান। ডিজিটাল দুনিয়ায় মানুষের যোগাযোগের উপায়কে পুনর্নির্মাণ করার ক্ষেত্রে জাকারবার্গ নিজের নামকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া