কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বস আদৌ কি ভালো হবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির কারণে অনেক অফিসে কর্মীর কাজ চলে যাবে, এমন শঙ্কায় আছেন বিশ্বের নানা দেশের কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানের মালিক ও নির্বাহী কর্মকর্তারা এআই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজকর্ম বদলে নিচ্ছেন। এখন নতুন সংকট হচ্ছে এআই শুধু কর্মীদের চাকরি নয়, বস বা কর্তাব্যক্তিদের কাজও বদলে দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এআই ব্যবস্থাপক চালু করছে। এআই ব্যবস্থাপকেরা প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য সময়সূচি পরীক্ষা করে এবং ডেডলাইন মনে করিয়ে দেয়। নিয়মিত বার্তা পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের মতোই অনেক কাজ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্পিরার গবেষকেরা এআই ম্যানেজারে কাজ নিয়ে একটি গবেষণা ফলাফল পরিচালনা করেন। এআই ব্যবস্থাপকের কাজের সঙ্গে সত্যিকারের ব্যবস্থাপকদের কাজের তুলনা করেন তাঁরা। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। একটি দলের প্রশিক্ষণ দেয় মানব ব্যবস্থাপক। অন্য একটি দলের প্রশিক্ষক ছিল এআই ব্যবস্থাপক। আর শেষ দলটিকে এআই ও মানব ব্যবস্থাপক প্রশিক্ষণ দেয়।
কর্মীরা পরবর্তী দিনের কাজের পরিকল্পনা কেমন করে, তা নিয়ে পাওয়া তথ্যে বেশ চমক দেখা যায়। এআই ব্যবস্থাপকের অধীনস্ত কর্মীদের ৪৪ শতাংশ আগেই পরিকল্পনা করেন, ৪২ শতাংশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিস্টেমে লগইন করেন। যে কর্মীরা মানব ব্যবস্থাপকের অধীনে ছিলেন, তাঁরা ৪৫ শতাংশ আগেই পরিকল্পনা করেন, ৪৪ শতাংশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লগইন করেন। যাঁরা এআই ম্যানেজার ও মানব ব্যবস্থাপকের অধীনে একসঙ্গে কাজ করেন, তাঁদের পরিসংখ্যান বেশ চমকপ্রদ। ৭২ শতাংশ কর্মী পূর্বপরিকল্পনা করেন আর ৪৬ শতাংশ যথাসময়ে লগইন করেন।
এআই দিয়ে কাজ করানোর লক্ষ্যে ইউপিএস বা ডেলের মতো বড় অনেক প্রতিষ্ঠান এ বছর কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এআই দিয়ে ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কাজ অদলবদল করা ভুল হবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল থারম্যান। তিনি বলেন, মধ্যম ব্যবস্থাপনা স্তর যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। এই স্তর যদি বদলে যায়, তবে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হবে। কর্মীরা ধারাবাহিকতা রাখতে চান না, তাঁরা পরামর্শ বা উপদেশ পান না। যেসব বিষয়ে মানব ব্যবস্থাপকেরা এআই ব্যবস্থাপকের চেয়ে ভালো, তা নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এআই ব্যবস্থাপককে নজরদারির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে জানান তিনি। পল থারম্যান বলেন, এআই দিয়ে কর্মীরা দুপুরের খাবার খেতে অনেক বেশি সময় নেন বা পর্যাপ্ত সালাদ খান না, এমন নজরদারি করা যাবে না।
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক টিনা রহমানের ভাষ্যে, ‘যেসব কর্মী কাজ করতে করতে ব্যবস্থাপক হয়ে উঠেছেন, যাঁদের ব্যবস্থাপনার দক্ষতা নেই, তাঁদের এআই ব্যবস্থাপক প্রশিক্ষিত করতে পারে। আমরা একটি সমীক্ষায় কেন মানুষ চাকরি ছেড়ে দেন, তা জানতে চেষ্টা করেছি। উত্তরদাতাদের প্রায় শতভাগ বলেছেন, খারাপ ব্যবস্থাপনার কারণে সবাই চাকরি ছাড়ছেন। কর্মীদের যেভাবে পরিচালনা করা হয়েছিল, তা তাঁদের পছন্দ ছিল না। বেশির ভাগ কর্মী জানতেন না যে তাঁদের কাছ থেকে কী আশা করা হচ্ছে বা তাঁরা ভালো কাজ করছেন কি না।’ এআই ব্যবস্থাপক সেই সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কাজ করতে পারে। কাজের সুযোগ তৈরি করলেও এআই ব্যবস্থাপকদের সম্পর্কে কিছু উদ্বেগ আছে। সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস বোর বলেন, এআই ব্যবস্থাপককে কোম্পানির সব কাজ করতে দিতে পারেন, তবে সব তথ্য সফটওয়্যারে থাকলে যে কেউ তা হ্যাক করতে পারে। সব তথ্য ক্লোন করে মুক্তিপণ আদায় করতে পারে হ্যাকাররা।
সূত্র: বিবিসি