পুরোনো ল্যাপটপে ঝুঁকছেন ক্রেতারা
নতুন ল্যাপটপ কম্পিউটারের দাম বাড়ার পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই এখন পুরোনো ল্যাপটপ কিনছেন। রাজধানী ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রির দোকানগুলোতে ঢুঁ মারছেন। চাহিদা এবং সাধ্যের সমন্বয় হলেই কিনে ফেলছেন পছন্দের ল্যাপটপ। এমনই এক দোকানে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের সঙ্গে। পুরোনো ল্যাপটপ কেনার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ল্যাপটপ ছাড়া এখন দৈনন্দিন কাজ করা কঠিন। কিন্তু একটা ভালো মানের নতুন ল্যাপটপ কিনতে অনেক টাকার দরকার। তাই অল্প দামে পুরোনো ল্যাপটপ কিনতে এসেছি। এতে টাকাও কিছুটা বাঁচবে আবার কাজও চলবে।’
বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো ল্যাপটপের দাম বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে ল্যাপটপের প্রসেসর, র্যাম ও এসএসডির (সলিড-স্টেট ড্রাইভ) ক্ষমতার পাশাপাশি ল্যাপটপটি কত দিন ব্যবহার করা হয়েছে, তা বিবেচনা করা হয়। ফলে পুরোনো ল্যাপটপগুলোর দাম কখনোই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয় না। তবে ভালো মানের পুরোনো ল্যাপটপগুলো একই যন্ত্রাংশের নতুন ল্যাপটপের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে কেনা যায়। আর এ কারণে সম্প্রতি পুরোনো ল্যাপটপের বিক্রি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
পুরোনো ল্যাপটপ কেনার আগে যা জানতে হবে
পুরোনো ল্যাপটপের দাম কম হলেও সব যন্ত্রাংশ ভালোভাবে কাজ না–ও করতে পারে। বিক্রয়োত্তর সেবাও মেলে না। ফলে অনেকেই না বুঝে পুরোনো ল্যাপটপ কিনে পস্তাতে থাকেন। এ জন্য কেনার আগে অবশ্যই ল্যাপটপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের তথ্য ভালোভাবে জানতে হবে। এ বিষয়ে হার্ডওয়্যার প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, পুরোনো ল্যাপটপ কেনার আগে অবশ্যই সেটি চালু করে প্রসেসর, র্যাম ও এসএসডির (সলিড-স্টেট ড্রাইভ) ক্ষমতা ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে। ল্যাপটপের পর্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই পর্দায় কোনো ডটবিন্দু বা আলো কমবেশি হয় কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে। ল্যাপটপের পর্দার কোনো অংশ ভাঙা বা স্ক্র্যাচ পড়লে সেটি না কেনাই ভালো। কি-বোর্ডের সব অংশ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা আলাদাভাবে পরখ করতে হবে। অনেক সময় ল্যাপটপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভালো থাকলেও টাচপ্যাড ঠিকমতো কাজ করে না। আর তাই ল্যাপটপের টাচপ্যাডও পরীক্ষা করতে হবে। বেশির ভাগ পুরোনো ল্যাপটপের ব্যাটারি, চার্জার বা পাওয়ার অ্যাডাপ্টরের কার্যকারিতা কম থাকে। আর তাই ল্যাপটপ কেনার আগে ব্যাটারি, চার্জার বা পাওয়ার অ্যাডাপ্টর ভালোভাবে কাজ করছে কি না, তা জানা প্রয়োজন। ল্যাপটপের চার্জ কতক্ষণ থাকে, সে বিষয়েও জানতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাটারি বদলে ফেলে ল্যাপটপ কিনতে পারেন।
তবে আপনি যদি ঘরে নিয়মিত ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তাহলে নতুন ব্যাটারি না কিনলেও চলবে। কিন্তু আপনি যদি বাইরে ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তবে ব্যাটারির কার্যকারিতা ভালোভাবে পরখ করতে হবে। ভবিষ্যতে ল্যাপটপের ব্যাটারি বদলানোর প্রয়োজন হলে কত খরচ হবে, তা–ও জানতে হবে। ল্যাপটপে প্রসেসরের গতি জানানোর পাশাপাশি হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা না থাকলে বিক্রেতাকে দিয়েই সেটি ইনস্টল করিয়ে নিলে ভালো হয়। ল্যাপটপ কেনার আগে হার্ড ড্রাইভের আকার ও র৵ামের ক্ষমতার মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে কি না, তা জানতে হবে। কারণ, হার্ডড্রাইভে অনেক জায়গা থাকলেও র্যাম কম থাকায় ল্যাপটপ ধীরগতিতে কাজ করে। পাশাপাশি ল্যাপটপের ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই, ওয়েবক্যাম ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা–ও পরখ করতে হবে।
ব্যবহৃত ল্যাপটপ বিক্রির সময় করণীয়
অনেকেই দীর্ঘদিনের ব্যবহার করা ল্যাপটপ বিক্রি করে নতুন মডেলের ল্যাপটপ কেনেন। তবে ব্যবহৃত ল্যাপটপ বিক্রির আগে বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই ল্যাপটপে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা ছবি অন্য স্থানে সরিয়ে সেগুলো মুছে ফেলতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ল্যাপটপে লগইন থাকা সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সাইনআউট করতে হবে। হার্ডডিস্কের ফাইল বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে উদ্ধারের সুযোগ থাকায় বিক্রির আগে ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক নতুন করে ফরম্যাট করতে পারেন।
নতুন ল্যাপটপের আমদানি ও বিক্রি কমেছে
দেশে নতুন ল্যাপটপের আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছেন কম্পিউটার ও প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রায়ানস কম্পিউটারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ হাসান। তিনি জানান, করোনা মহামারির পর নতুন ল্যাপটপ আমদানি প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি, প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে ভ্যাট বৃদ্ধি, আমদানিকারকের পক্ষে এবং রপ্তানিকারকের অনুকূলে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধের ৠণপত্র (এলসি) জটিলতার কারণে দেশে ল্যাপটপের দাম বেড়েছে। ফলে নতুন ল্যাপটপের বিক্রি কম হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ল্যাপটপের দাম কমতে শুরু করেছে। দেশে ২০২৩ সালের মধ্যে ল্যাপটপের দাম না কমলে এর বিক্রি আরও কমতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সহসভাপতি ও কম্পিউটার ও প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান স্টারটেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দেশে নতুন ল্যাপটপ বিক্রির পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে। আগে মাসে দুই থেকে তিনবার এলসি করা যেত। এখন তিন মাসেও একবার এলসি করা যাচ্ছে না। বাজারে পণ্যের সংকট থাকলে দামও বেড়ে যায়।’