পুরস্কার পাওয়া ফ্রিল্যান্সাররা কীভাবে সফল হয়েছেন, চলুন জেনে নিই
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) গত শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন। এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ১৫ জন ফ্রিল্যান্সারকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। সংক্ষেপে শোনা যাক তাঁরা কীভাবে সফল ফ্রিল্যান্সার হলেন এবং সেরার সম্মাননা পেলেন।
মাহফুজুর রহমানের গড় আয় এখন মাসে প্রায় ১০ হাজার ডলার
২০১৮ সালে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন মো. মাহফুজুর রহমান। প্রথম আয় ২০২০ সালে ১৫ ডলার। কুষ্টিয়ার ছেলে মাহফুজুর বর্তমানে মাসে গড়ে ১০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেন বলে জানালেন। ঢাকার ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ২৮ বছর বয়সী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমার কাজের ক্ষেত্র ই-কমার্স খাত নিয়ে।’
পুরকৌশলী সাবিহা গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করেন
সাবিহা আরেফিন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করা শুরু করেন ২০১৪ সালে। সাবিহা বলেন, ‘প্রথমে ডেটা এন্ট্রির কাজ করতাম। প্রথম বছর কোনো আয় করতে পারিনি। পরের বছরেই প্রথম আয় করি।’ প্রথম কাজে সাবিহার আয় ছিল পাঁচ ডলার। এখন মাসে আয় এক থেকে দুই হাজার ডলার। স্থায়ী বসবাস ঢাকায় হলেও স্বামীর চাকরির কারণে মাঝেমধ্যে ঢাকার বাইরেও থাকতে হয় তাঁকে। ৩৩ বছর বয়সী সাবিহা পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। তবে এখন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করছেন।
লিড জেনারেশন নিয়ে কাজ করেন মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকী
২০১২ সালে কাজ শুরু মো. মামুনুর রশিদ সিদ্দিকীর। ডিজিটাল বিপণনের কাজই করেন বেশি। প্রথম কাজ থেকে তাঁর আয় ছিল ১২০ ডলার। এরপর ব্যক্তিগতভাবে কাজ ছেড়ে আউটসোর্সিং খাতে চাকরি শুরু করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই সন্তান চাকরি ছেড়ে ২০২২ সালে আবার ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ৩০ বছর বয়সী মামুনুর রশিদ ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী লিড জেনারেশন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করছেন। বর্তমানে তাঁর আয় ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার।
শেখ খাদিজা খানমের প্রথম দিকে আয় ছিল ঘণ্টায় ৮ ডলার
চট্টগ্রামের চকবাজারের বাসিন্দা শেখ খাদিজা খানম ২০১৮ সালে ফ্রিল্যান্সিং শেখা শুরু করেন। ২০২০ সাল থেকে কাজের শুরু। ওই বছরই প্রথম কাজ পান তিনি। খাদিজা বলেন, ‘ফেসবুক পেইড অ্যাড নিয়ে কাজ করে প্রতি ঘণ্টায় ৮ ডলার করে পেতাম। এখন মাসিক আয় দুই থেকে আড়াই হাজার ডলার।’ চট্টগ্রামের সরকারি মহিলা কলেজ থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে খাদিজা খানম এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়েই বেশি কাজ করছেন।
পড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন শাকিল আহমেদ
শাকিল আহমেদ এখনো পড়াশোনা করছেন। তিনি যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এম এম) কলেজের ছাত্র। গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। ২০১৫ সালে প্রথম কাজের জন্য ১০ ডলারের মতো আয় করেছিলেন। পড়ুয়া সাকিল আহমেদ শেষ দুই বছরের ফ্রিল্যান্সিংয়ে সবচেয়ে ভালো করছেন। বর্তমানে মাসে তাঁর আয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা। ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবেও কাজ করছেন।
রিয়াজুল কাজ করেন স্থানীয় এসইও নিয়ে
২০১৭ সালে কাজ শুরু করেন রিয়াজুল ইসলাম। প্রতি ঘণ্টায় ৩ ডলার হিসাবে প্রথম কাজ পেয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) নিয়ে কাজ করেন রিয়াজুল ইসলাম। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় ১০ হাজার ডলারের মতো। বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে গণিত বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি।
দুই সন্তান নিয়ে ভোলা থেকে ফ্রিল্যান্সিং করেন বিবি সাওদা
২০১৮ সালে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বিবি সাওদা। ২০১৯ সালে কাজ শুরু করেন। গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করেন শুরু থেকেই। প্রথম কাজে পেয়েছিলেন ৫ ডলার। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অনেক কাজ করেছেন। বর্তমানে কিছুটা কম। এখন বিবি সাওদার মাসিক আয় ৫০০ থেকে ১ হাজার ডলার। দুই সন্তানের মা বিবি সাওদা। তিনি বলেন, ‘পরিবারের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। দ্বীপজেলা ভোলা থেকেই আমি ফ্রিল্যান্সিং করি।’
ফ্রিল্যান্সিং শুরুর তিন মাস পর ৫ ডলার আয় করেছিলেন শ্রাবণ
ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি থেকে পড়াশোনা শেষ করা এ আর শ্রাবণ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছেন ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে। প্রথম কাজ পেয়েছেন তিন মাস পর। লোগো ডিজাইন করে প্রথম আয় ৫ ডলার। বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন বেশি। মাসে এখন তাঁর আয় ৫ থেকে ৭ হাজার ডলার।
জীবনবৃত্তান্ত লেখা মার্জিয়া আক্তারের কাজ
জামালপুরের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে। ওই বছরের এপ্রিলে প্রথম কাজ পান তিনি। প্রথম কাজে ৫ ডলার আয় করা মার্জিয়া আক্তার মাসে এখন ৭০০ থেকে ১ হাজার ডলার আয় করেন। জামালপুর থেকে পড়াশোনা শেষ করা মার্জিয়া গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষ। তবে এখন সাত বছরের সন্তান নিয়ে জীবনবৃত্তান্ত লেখার (সিভি রাইটিং) কাজ বেশি করছেন।
৫০ ডলারে শুরু, এখন সোয়াইবুলের মাসে আয় ৫ হাজার ডলার
২০১২ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং করছেন নওগাঁর সোয়াইবুল ইসলাম। তবে নিয়মিত কাজ শুরু করেন ২০১৭ থেকে। ওই বছরই ৫০ ডলারের প্রথম কাজ পান তিনি। নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলা থেকে ডিজিটাল বিপণন ও ভিডিও সম্পাদনা করে তিনি বর্তমানে মাসে আয় করছেন ৫ থেকে ৭ হাজার ডলার। ২৭ বছরের সোয়াইবুল ইসলাম রাজশাহী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
পণ্যের নকশা মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করেন মাহমুদুল হাসান
দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক মাহমুদুল হাসান ২০১২ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৩ সালের শুরুতে প্রথম কাজ পান তিনি। প্রথম কাজে ৯০ ডলার আয় করেছিলেন তিনি। গ্রাফিক ডিজাইনে কাজ করা মাহমুদুল হাসান বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের নকশা করে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করেন। ৩১ বছর বয়সী এই ফ্রিল্যান্সার মাসে আয় সাড়ে ১৬ হাজার ডলার আয় করেন।
গণিতের ছাত্র ফারজুক আহমেদ
সিলেটের বাসিন্দা ফ্রিল্যান্সার ফারজুক আহমেদ। ২০১৭ সালে কাজ শুরু করেন তিনি। ওই বছরই ৫ ডলারের প্রথম কাজ পান তিনি। বর্তমানে গুগল অ্যাডস নিয়ে কাজ করেন ফারজুক আহমেদ। সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র ফারজুক আহমেদের মাসিক আয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ ডলার।
এ ছাড়া খুলনা বিভাগ থেকে প্রিয়াঙ্কা গাইন ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শ্রেণিতে অনিক মাহমুদ পেয়েছেন সেরা ফ্রিল্যান্সারের পুরস্কার। ফ্রিল্যান্সিংয়ে অবদান রাখার জন্য ফাহিম উল করিমকে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া হয়।