এবার আসছে সৌরশক্তিচালিত স্মার্ট পোশাক
আমরা যাঁরা নব্বই দশকে স্কুলে পড়েছি, তাঁরা সৌরচালিত ঘড়ি বা ক্যালকুলেটর দেখেছি। ক্যাসিও ব্র্যান্ডের ঘড়ির বড় আকর্ষণের নাম ছিল সৌরচালিত ব্যাটারি। এরপরে নদীতে অনেক স্রোত বয়ে গেছে। সৌরচালিত গাড়ি থেকে শুরু করে নানা যানবাহনের উপস্থিতি বেড়েছে সারা দুনিয়াতে। এবারে সৌরচালিত একটি পোশাকের নকশা উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন নকশা করা পোশাক তাপমাত্রা পরিবর্তনের খোঁজ দিতে পারে। চীনের নানকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী, পদার্থ বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদদের একটি দল মাইক্রো ফাইবারভিত্তিক মেটা-ফেব্রিক তৈরি করেছেন। এই পোশাক বাহ্যিক তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য শরীরের তাপমাত্রার মধ্যে সংযোগ করে তাপনিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে পুরো বিষয়টিতে তুলে ধরা হয়েছে। মেটা-ফেব্রিকের কাপড় নকশা করে এরই মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষাও চালিয়েছেন গবেষকেরা। নতুন এই পোশাককে স্মার্টওয়াচের মতো ‘স্মার্ট ক্লোথ’ বলা যায়, যা নিজে থেকেই স্মার্ট আচরণ করতে পারে।
বিজ্ঞানী জিইউয়ান ওয়াং জানান, এ ধরনের যন্ত্রে কম শক্তি খরচ হয়। পুরো ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও তাপনিয়ন্ত্রণের জন্য ১২ ঘণ্টা সূর্যের শক্তি ধারণ করতে পারে। ঠান্ডা বা কম তাপমাত্রায় এই পোশাক মানুষকে উষ্ণতা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে উষ্ণ তাপমাত্রায় মানুষকে শীতল থাকতে সাহায্য করতে পারে।
আগে এমন অনেক পোশাক গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করা হলেও বেশ কিছু সমস্যা ছিল। আগের বেশির ভাগ পণ্য বা পোশাক সাধারণ ব্যবহারের জন্য খুব ভারী ছিল। সায়েন্স জার্নালের সম্পাদক ব্রেন্ট গ্রোকলস্কি বলেন, পোশাক তৈরিতে যেমন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, তার সবই বেশ নমনীয়। পরিধেয় যন্ত্র সূর্যের শক্তির মাধ্যমে কাজ করে, তাই অতিরিক্ত শক্তির উত্সের প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মানবদেহকে রক্ষা করতে বেশ কার্যকর বলা যায়।
নতুন গবেষণায় গবেষকরা মাইক্রো ফাইবারভিত্তিক মেটা-ফেব্রিক ব্যবহার করেছেন, যা দিনের বেলা বিকিরণকারী স্তর হিসেবে কাজ করে। একটি মেটা–ফেব্রিক তৈরি করতে ইলেকট্রোক্যালোরিক প্রযুক্তির সঙ্গে নমনীয় সৌরকোষ যুক্ত করা হয়েছে। নতুন কাপড় বা ফেব্রিকের কেন্দ্রে একটি দ্বিমুখী ইলেকট্রোক্যালোরিক যন্ত্রের সঙ্গে জৈব ফটোভোলটাইক মডিউল যুক্ত করা হয়েছে। নমনীয় আকারের জন্য পোশাকে সহজেই যন্ত্র যুক্ত করে ফেব্রিকের সঙ্গে মেলানো যাচ্ছে।
এই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি পোশাক তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম। বিজ্ঞানী জিংঘি হুয়াং জানান, এই ধরনের পোশাককে থার্মোরেগুলেটরি পোশাক বলা হয়। পরিবেশের তাপমাত্রা পরিবর্তন হলেও মানবদেহের নিরাপত্তা ও আরামের গ্যারান্টি দিতে পারে এই পোশাক। এমনকি মেরু অঞ্চল ও মহাকাশের মতো চরম পরিবেশে মানুষের বেঁচে থাকার ক্ষমতা বাড়াতে এমন পোশাক বেশ কার্যকর বলা যায়।
নতুন পোশাক মানবদেহে ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রদান করে যখন বাইরের তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পরিবর্তিত ছিল। একটা দারুণ বিষয় হচ্ছে, এই যন্ত্র যেকোনো প্রচলিত পোশাকে যুক্ত করে তা স্মার্ট করে ফেলা সম্ভব। এই যন্ত্র যেকোনো পোশাকে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ঠান্ডা আবহ তৈরি করতে পারে।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট ডটকোডটইউকে