স্মার্টফোনের নকশায় পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা কেন?

খাপ ছাড়াই যাতে স্মার্টফোন ব্যবহার করা যায়, সেই চেষ্টা নির্মাতাদেরছবি: অ্যান্ড্রয়েডপুলিশ

স্মার্টফোনের নকশায় দিন দিন অভিনবত্ব ও নান্দনিকতা বাড়ছে। ২০২৪ সালে বাজারে আসা দামি ‘ফ্ল্যাগশিপ’ স্মার্টফোনে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম ও স্টেইনলেস স্টিলের মতো উপকরণের ব্যবহার ফোনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি নান্দনিকতাও বাড়িয়েছে। এসব উপকরণ ব্যবহারে ফোনের দামও বেড়ে যায়। তবে প্রশ্ন হলো, এত উন্নত উপকরণ ও নিখুঁত নকশার পরও কেন ব্যবহারকারীদের ফোন সুরক্ষায় ভারী কভার ব্যবহার করতে হয়?

সামান্য দুর্ঘটনায় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় ব্যবহারকারীরা এক হাজার ডলারের বেশি দামের স্মার্টফোনেও কেস বা খাপ ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব খাপ প্রকারান্তরে ফোনের আসল সৌন্দর্য ঢেকে দেয়। ফলে ফোন নির্মাতাদের দীর্ঘ গবেষণা ও উন্নত নকশার কাজ কার্যত অদৃশ্য হয়ে যায়।

স্মার্টফোন নকশার এই বাস্তবতা নতুন করে ভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে। ২০২৪ সালে বাজারে আসা কিছু জনপ্রিয় ফোনের উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যেমন, গুগল পিক্সেল–৯ প্রো দেখতে খুব সুন্দর, তবে ব্যবহারিক দিক থেকে এটি খুব পিচ্ছিল। ঘাম থাকা হাতে ফোনটি ধরে রাখা বেশ কঠিন। ফোনের বড় ক্যামেরা বাম্প মজবুত হলেও এটি পড়ে গেলে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একইভাবে, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রাতেও টাইটেনিয়াম ফ্রেম ব্যবহৃত হয়েছে, তবে রঙের স্থায়িত্ব ধরে রাখতে নকশাগত কিছু ছাড় দিতে হয়েছে। এ ধরনের নকশার কারণে প্রায় প্রতিটি ফোনেই সুরক্ষার জন্য কভার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। বিশেষত ভাঁজযোগ্য (ফোল্ডেবল) ফোনগুলো তো কভার ছাড়া ব্যবহার করার ঝুঁকি নেওয়াই যায় না। ফলে স্মার্টফোনের নকশায় টেকসই উপকরণ ব্যবহারের বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গুগল পিক্সেল ৮এ এবং অ্যাপল আইফোন ১৬—এ বছরের নতুন এই ফোন দুটি নকশার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের উদাহরণ। পিক্সেল ৮–এর ম্যাট প্লাস্টিক পেছনের অংশ একদিকে যেমন আরামদায়ক, অন্যদিকে তেমনই টেকসই। হালকা ওজন ও উজ্জ্বল রঙের বৈচিত্র্য ফোনটিকে ব্যবহারবান্ধব করে তুলেছে। অন্যদিকে, আইফোন ১৬–এর ম্যাট ফিনিশ ফোনটিকে পিচ্ছিল হওয়া থেকে রক্ষা করে।

স্মার্টফোন নির্মাতারা যদি ফোনের নকশায় টেকসই এবং ব্যবহারকারীর প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেন, তবে কেসের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে আসতে পারে। এতে বাড়তি আনুষঙ্গিক পণ্য কেনার প্রয়োজন যেমন কমবে, তেমনি ইলেকট্রনিক বর্জ্যও কমবে। তবে বর্তমান আনুষঙ্গিক পণ্যের বিশাল বাজার এবং কেস নির্মাতাদের প্রভাবের কারণে নকশায় বড় পরিবর্তন আনা সহজ হবে না। তবু পিক্সেল ৮এ এবং আইফোন ১৬–এর নকশায় পরিবর্তন প্রমাণ করে যে স্মার্টফোনের নকশায় কার্যকর ও ব্যবহারবান্ধব পরিবর্তন সম্ভব।

স্মার্টফোনের নির্মাতারা যদি তাদের পণ্যকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের উপযোগী ও সুরক্ষিত রাখতে পারেন, তাহরে কেসের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে। নকশায় এই পরিবর্তন আনতে পারলে স্মার্টফোন–শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।

সূত্র: অ্যান্ড্রয়েডপুলিশ ডটকম