মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে হতাশায় প্রতি পাঁচ কিশোরের একজন

অতিরক্তি স্মার্টফোন ব্যবহারে অল্প বয়সীদের মধ্যে হতাশা বাড়ে।রয়টার্স

শৈশব-কৈশোরের আনন্দঘন সময়ে শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, এখনকার কিশোরেরা মুঠোফোন অনেক বেশি ব্যবহার করে। যুক্তরাজ্যের নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, যেসব কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোন নিয়ে সমস্যার কথা বলে, তাদের উদ্বেগ, হতাশা বা অনিদ্রায় ভোগার আশঙ্কা তিন গুণ বেশি হতে পারে। যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি, সাইকোলজি এবং নিউরোসায়েন্সের বিশেষজ্ঞরা এমনটাই দাবি করছেন। তাঁরা মনে করেন, প্রতি পাঁচজন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে প্রায় একজনের স্মার্টফোন ব্যবহারসংক্রান্ত সমস্যা আছে। অনেক কিশোর-কিশোরী তাদের মুঠোফোন ব্যবহার কমানোর জন্য পরামর্শ গ্রহণ করছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক কিশোর-কিশোরীর মধ্যে দেখা যায়, যারা স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারকারী, তাদের মধ্যে উদ্বেগের লক্ষণ রয়েছে। অনেকেরই বিষণ্নতার লক্ষণ রয়েছে।

কিছু অ্যাপে নোটিফিকেশন বন্ধ করা কিংবা শোবার ঘরের বাইরে ফোন রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। স্মার্টফোনকে ডোন্ট ডিস্টার্ব বা এয়ারপ্লেন মোডে রেখে স্ক্রিনটাইম সীমিত করা যেতে পারে। একসঙ্গে কয়েকটি মুঠোফোন ব্যবহার বন্ধ করার মাধ্যমে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। শিশু-কিশোরদের হাতে প্রথম স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার সময় অভিভাবকেরা এসব কুফল সম্পর্কে তাদের সতর্ক করতে পারেন। অতিরিক্ত ব্যবহারের বিষয়ে শিশু-কিশোরদের সচেতন করার পরামর্শ দেন গবেষকরা।

অনেক অভিভাবক তাঁর সন্তানের অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারকে আসক্তি বললেও গবেষকেরা বিষয়টিকে এভাবে দেখছেন না। এই আসক্তির বিষয়টি ক্লিনিক্যাল শব্দ নয় বলে তাঁরা অন্য শব্দাংশের মাধ্যমে শিশুদের আচরণ বোঝানোর চেষ্টা করছেন। শিশু-কিশোরদের এই সমস্যাকে প্রবলেমেটিক স্মার্টফোন ইউজ (পিএসইউ) বা সমস্যাযুক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার হিসেবে অভিহিত করেছেন তাঁরা। মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণসংশ্লিষ্ট ক্ষতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করছেন তাঁরা। মুঠোফোন ব্যস্ত থাকা ও ব্যবহারের কারণে নিজের দায়িত্ব বা অন্য কোনো কার্যকলাপ অবহেলা করার বিষয়ে তাঁরা কথা বলছেন।

দুটি পৃথক গবেষণার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের এই আচরণ সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যাক্টা পেডিয়াট্রিকাতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় লন্ডন, ইস্ট মিডল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিমের পাঁচটি স্কুলের শিশুদের তথ্য ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের তথ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রায় ৬৫৭ জন কিশোর-কিশোরী এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের ১৯ শতাংশের মধ্যে পিএসইউ আচরণ দেখা যায়। এই ১৯ শতাংশের মধ্যে মুঠোফোনের ব্যবহারের কারণে ১২৩ জনের কিশোর-কিশোরী বা ৪৩ শতাংশের উদ্বেগের লক্ষণ দেখা যায়। এদের মধ্যে আবার ৫৬ শতাংশের মধ্যে হতাশা দেখা যায়।

যারা তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে সমস্যাযুক্ত সম্পর্কের কথা জানায়, তাদের বিষণ্নতার আশঙ্কা তিন গুণ বেশি। যেসব কিশোর-কিশোরীরা ফোন অত্যধিক ব্যবহার করে, তাদের ঘুমের ব্যাঘাত দেখা যায়। প্রায় ৬৪ শতাংশের অনিদ্রার লক্ষণ দেখা যায়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৩১ শতাংশ সমস্যার পর ব্যবহার কমাতে সাহায্য গ্রহণের কথা জানায়।

আরেকটি গবেষণাপত্র বিএমজে মেন্টাল হেলথে প্রকাশিত হয়েছে। সেই গবেষণায় লন্ডনের দুটি স্কুলের ১৩-১৬ বছর বয়সীরা অংশ নেন। ৬২ জন শিক্ষার্থীকে এক মাসের জন্য পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই গবেষণায় দেখা যায়, মুঠোফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুদের উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞানী নিকোলা কাল্ক বলেন, কিছু কিছু কিশোর-কিশোরীর জন্য অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার আসক্তির মতো দেখা যাচ্ছে।

যেসব কিশোর-কিশোরী ফোন অত্যধিক ব্যবহার করে, তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। অনিদ্রার লক্ষণ দেখা যায়। অধ্যাপক বেন কার্টার বলেন, কিশোরদের মধ্যে মুঠোফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। উদ্বেগ ও বিষণ্নতা দেখা যায়। দুশ্চিন্তা হচ্ছে দ্বিগুণ, বিষণ্নতা দেখা যাচ্ছে তিন গুণ। শিশু-কিশোরদের এসব সমস্যা পারিবারিক প্রচেষ্টা হিসেবে সবাই মিলে মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন গবেষকেরা।

সূত্র: ডেইলি মেইল