মুগ্ধকে নিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদন
বিক্ষোভকারীদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন এই ছাত্র, কয়েক মিনিট পরই তিনি মারা যান
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ফ্রিল্যান্সার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়ে গতকাল সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। ‘বিক্ষোভকারীদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন এই ছাত্র, কয়েক মিনিট পরই তিনি মারা যান’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও ফ্রিল্যান্সার মুগ্ধর পরিবারের স্বজনদের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। মুগ্ধকে নিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনটি এখানে তুলে ধরা হলো।
টি–শার্টের হাতা ব্যবহার করে জ্বালাপোড়া করা চোখ থেকে কাঁদানে গ্যাস মুছতে মুছতে ২৫ বছর বয়সী তরুণ মুগ্ধ ভিড়ের মধ্যে চিৎকার করছেন, বিক্ষোভ করা তরুণদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছেন। ১৫ মিনিট পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। রাজধানী ঢাকায় দুপুরের উত্তাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটি বুলেট তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়েছিল।
মুগ্ধর পুরো নাম মীর মাহফুজুর রহমান। বন্ধু ও বিক্ষোভকারীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাঁর যমজ ভাই স্নিগ্ধ—মীর মাহবুবুর রহমান—সিএনএনকে এসব জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘আমি শুধু তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আর আমি কেঁদেছিলাম।’
১৮ জুলাই মৃত্যুর আগে মুগ্ধর পানি দেওয়ার ভিডিওটি সারা বাংলাদেশের লাখ লাখ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর মনে আঘাত করে। নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে আরও বেশি মানুষ রাস্তায় নামতে উৎসাহিত হয়।
পরিবার বিচার চাইছে
আন্দোলনের পরে এখন এক শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক পরিবার এখন তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি চাইছে। যমজ মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ জন্ম থেকেই একসঙ্গে ছিলেন—খাওয়া, ঘুম আর একসঙ্গে পড়াশোনা, পোশাক ভাগাভাগি করার পাশাপাশি সব গোপনীয়তাও ভাগাভাগি করতেন তাঁরা।
স্নিগ্ধ বলেন, ‘সে শুধু আমার ভাই ছিল না, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। আমার শরীরের একটি অঙ্গ ছিল। আমরা একসঙ্গে সবকিছু করতাম।’ মুগ্ধ গণিতে স্নাতক ছিলেন। এরপর ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শ্রেণিতে পড়ছিলেন, আর তাঁর যমজ স্নিগ্ধ আইনে স্নাতক। এই দুই যমজ ইতালিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মোটরবাইকে ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা ছিল তাঁদের। ভ্রমণের জন্য টাকা জমাতেন তাঁরা। দুই ভাই অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইভআরে সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনের কাজ করতেন।
এখন, স্নিগ্ধ ও তাঁদের বড় ভাই দীপ্ত, যাঁর পুরো নাম মীর মাহমুদুর রহমান, মুগ্ধহীন এক ভবিষ্যতের মুখোমুখি। দুই ভাই মুগ্ধের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রটি রেখে দিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় এটি তাঁর গলায় ছিল। মুগ্ধের বিচ্ছুরিত রক্ত সেই অন্ধকার সময়ে দিনের প্রতীক হিসেবে পরিচয়পত্রটিতে শুকিয়ে গিয়েছিল। পরিচয়পত্রের ফিতাটি তাঁর ভাইয়েরা রেখে দিয়েছেন।
এখন, প্রতিবাদ আন্দোলনে মুগ্ধ যে প্রভাব ফেলেছেন, তার থেকে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন দুই ভাই দীপ্ত ও স্নিগ্ধ। স্নিগ্ধ বলেন, ‘তার (মুগ্ধ) কারণে মানুষ প্রতিবাদ করার শক্তি পেয়েছে। সে সব সময় বলত, “আমি আমার মা–বাবাকে একদিন গর্বিত করব।”’
প্রতিবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল ১৬ জুলাই ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদের মৃত্যু। আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। তার দুই দিন পর মুগ্ধ মারা যান।