ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হলো দক্ষতা

রাজধানীর ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট দেড় দশকের বেশি সময় ধরে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষণের বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের বর্তমান চাহিদা, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সফল হওয়ার কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে ১৬ অক্টোবর প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাহিতুল ইসলাম

প্রথম আলো:

এই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রবণতা বেশি এবং কেন?

মনির হোসেন: বর্তমানে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল বিপণন, গ্রাফিকস, ইউআই বা ইউএক্স (ইউজার ইন্টারফেস বা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স) ডিজাইন, ডেটা সায়েন্স, ক্লাউড ও সাইবার নিরাপত্তার মতো বিষয়ের প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রবণতা বেশি। এগুলো দ্রুত বর্ধনশীল খাত, যেখানে চাকরির সুযোগ বাড়ছে এবং ফ্রিল্যান্সিং ও আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা রয়েছে।

প্রথম আলো:

ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের শুরুটা কবে? কেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করলেন?

মনির হোসেন: ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। দেশের তরুণদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ তৈরি করে বেকারত্ব দূর করা ছিল আমার মূল লক্ষ্য। আজ আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের প্রায় এক লাখের বেশি তরুণ স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে কাজের সুযোগ পেয়েছেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে কোন বয়সীদের সংখ্যা কত?

মনির হোসেন: আমাদের প্রশিক্ষণার্থীদের বেশির ভাগেরই বয়স সাধারণত ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে যেকোনো বয়সের মানুষই আমাদের কোর্সগুলো করতে পারেন। কারণ, প্রযুক্তির এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা সব বয়সেই অনেক বেশি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

প্রথম আলো:

এখন পর্যন্ত কতসংখ্যক মানুষ আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন? বর্তমানে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা কত?

মনির হোসেন: আমাদের প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে প্রায় সাত হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই পেশাজীবন শুরু করা যায়?

মনির হোসেন: আমি মনে করি, যেকোনো বিষয়ে ভালোভাবে দক্ষ হলে খুব দ্রুত পেশাজীবন শুরু করা যায়। তবে আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল বিপণন, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও সম্পাদনা ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দ্রুত পেশাজীবন শুরু করা সম্ভব। আমাদের কোর্সগুলোয় বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ ও ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে (অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট) কাজের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ব্যাপারে আপনারা কি কোনো সহায়তা করেন?

মনির হোসেন: হ্যাঁ, আমরা আমাদের প্রতিটি কোর্সের সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিই। প্রতিটি কোর্সে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার কৌশল, প্রোফাইল তৈরি ও প্রকল্প পরিচালনার অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের সহায়তা করা হয়ে থাকে। যার ফলাফল হিসেবে আমাদের প্রতিটি ব্যাচেই অনেক ছাত্রছাত্রী কোর্স চলার সময় থেকেই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট থেকে আয় করা শুরু করেন।

প্রথম আলো:

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে বর্তমানে কোন কোন বিষয়ের চাহিদা বেশি?

মনির হোসেন: বর্তমান মার্কেটপ্লেসগুলোয় হাজারো রকমের কাজ পাওয়া যায়। তবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ তৈরি, গ্রাফিকস ও মোশন ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ভিডিও সম্পাদনা, এডিটিং, ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন ও এসইওর চাহিদা একটু বেশি। এই বিষয়গুলোয় দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার জন্য কী পরামর্শ দেবেন?

মনির হোসেন: ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হলো দক্ষতা, অধ্যবসায় ও সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা। নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ করে তোলা, নিয়মিত যোগাযোগ ও গ্রাহকদের চাহিদা বুঝে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম আলো:

বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ থেকে ১৪ শতাংশ কাজ হয়। এই হার কি সন্তোষজনক? বাড়ানোর জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন?

মনির হোসেন: ১৪ শতাংশ অবশ্যই সন্তোষজনক। তবে এই হার আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। নতুন নতুন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদান ও ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের সক্ষমতা আরও অনেক বাড়ানো যেতে পারে।

প্রথম আলো:

আপনার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মনির হোসেন: আমাদের লক্ষ্য হলো দেশব্যাপী ও আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষতার মান বাড়ানো। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও নতুন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ।