২১ বছর বয়সেই ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা তানভীর, মাসে আয় ৫ লাখ টাকা
তানভীর সুরুজ। পড়াশোনা করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগে। এখন সবে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। তবে এরই মধ্যে পেশাগত সাফল্য পেয়েছেন। মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সফলতার পর তানভীর সুরুজ এখন উদ্যোক্তা। পড়াশোনার পাশাপাশি মাসে আয় করেন পাঁচ লাখ টাকা। গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন তানভীর।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় বাড়ি তানভীরের। বাবা মুনসুর আলী কৃষক, নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। মা নুরুন নাহার গৃহিণী। দুই–ভাই বোনের ছোট তানভীর। বোন বিউটি খাতুন মেহেরপুরের একটা প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর জন্ম তানভীরের। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার ও গেমসের প্রতি ভালোলাগা ছিল তানভীরের। সেই ভালোলাগা থেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু তাঁর। এখন অনলাইনে নিজের কোম্পানি খুলেছেন এবং ন্যূনতম মাসিক আয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার হিসাবে যা পাঁচ লাখের বেশি।
একসময় তানভীরের সময়ই কাটত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে গেমস খেলে। ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে তানভীর পরিচিত হলেন গ্রাফিক ডিজাইন ও ডিজিটাল বিপণন বিষয়ের সঙ্গে। এরপর তানভীর এসব বিষয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর কথা ভাবেন। সেই সময়ে সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলেটি তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠলেন।
দেশের অনেক উদ্যমী তরুণের মতো তানভীরও ঝুঁকে পড়লেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে। শুরুতে বড় সমস্যা ছিল বাবা-মাকে বোঝানো যে ফ্রিল্যান্সিং আসলে কী। কারণ, তাঁরা ভাবতেন এতে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া মেন্টর না থাকাটাও ছিল একটি বড় সমস্যা।
২০১৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজের শুরু তানভীরের। তবে প্রথম আয় করেন ২০২০ সালে। এভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নেন তানভীর। পাশাপাশি পড়াশোনাও চলতে থাকে। ২০২৩ সালে সাহস করে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকানায় নিবন্ধন করে একটি অনলাইন কোম্পানি গড়ে তোলেন তানভীর। নাম ইকমক্যারি এলএলসি। কোনো কোনো মাসে ইকমক্যারি থেকে তাঁর আয় ১৫ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। তাঁর প্রতিষ্ঠান মূলত বিদেশি গ্রাহকদের জন্য পণ্য গবেষণা, অনলাইন দোকান চালু করে দেওয়া, ই-কমার্স বিপণনসহ নানা সেবা দিয়ে থাকে। আবার অ্যামাজন, ওয়ালমার্টসহ বিভিন্ন বড় ই–কমার্স সাইটে পণ্যও বিপণন করে এই ইকমক্যারি এলএলসি।
নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করার পর তানভীরের মনে হলো, ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে। সেই সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপন, মেন্টরিং এসবও তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি নিজের ও পরিবারের স্বপ্নপূরণের জন্য। একটা সময় মনে হলো স্বপ্নটা আরেকটু বড় করে নিই। ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে সম্পূর্ণ একটি ইকোসিস্টেমের খোঁজ করছিলাম। এমন সময়ে জানতে ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের কথা। ভর্তি হয়ে গেলাম এই বিভাগে। এরপর থেকে ব্যবসা আরও এগিয়ে চলছে। এখন আমার প্রতিষ্ঠানে অন্যরাও কাজ করছে।’
তানভীর সুরুজ নিজের প্রতিষ্ঠানে চার বন্ধুকে নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁদের নিজেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তানভীর বলেন, ‘আমি নিজে পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করব। তরুণদের কর্মসংস্থান করে দিতে চাই। আমি সব সময়ই কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। স্বপ্ন দেখি, আমার কোম্পানিতে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’