ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা কেন নৈশভোজ করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রযুক্তি–দুনিয়ার আলোচিত উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা। কয়েক মাস ধরে ট্রাম্পের বাসভবনে অনুষ্ঠিত একাধিক নৈশভোজের আয়োজনে অংশ নেন সুন্দর পিচাই, টিম কুকসহ অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো নামে বাসভবনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন সবাই।

হুট করেই যেন প্রযুক্তি–দুনিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ গুরুত্ব পাচ্ছেন। অথচ কয়েক বছর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে হারার পর প্রযুক্তি–দুনিয়া থেকে মোটামুটি একঘরে হয়ে পড়েন ট্রাম্প। ২০২১ সালে মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ ট্রাম্পের ওপর ফেসবুকের নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেন। গুগল থেকে শুরু করে তখনকার টুইটার (এখনকার এক্স ডটকম) থেকেও চাপের মুখে পড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বড় জয়ের পর প্রযুক্তিশিল্পের মনোযোগ পাচ্ছেন ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবন মার-এ-লাগোতে বেশ কয়েকজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তার উপস্থিতি দেখা গেছে। স্পেসএক্সের ইলন মাস্কসহ গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই ও অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুকের মতো প্রযুক্তিবিদদের সেখানে দেখা গেছে। মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুকে ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছেন তিনি। প্রযুক্তি–দুনিয়ার আলোচিত ব্যক্তিদের উপস্থিতিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প এক ভাষণে বলেন, ‘আমি অ্যাপলের টিম কুকের সঙ্গে ডিনার করেছি, তাঁদের প্রায় সবার সঙ্গেই ডিনার করেছি। বাকি সবাই আসছেন। আমার প্রথম মেয়াদে সবাই আমার সঙ্গে লড়াই করছিল। এখন সবাই আমার বন্ধু হতে চায়। হয়তো আমার ব্যক্তিত্ব বদলে গেছে বা অন্য কিছু হয়েছে!’

আরও পড়ুন

এসব বৈঠকের মাধ্যমে প্রযুক্তিশিল্প নিয়ে ট্রাম্পের নীতির ওপর ভূমিকা রাখতে চায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আচরণ, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–সংকট, ডেটার গোপনীয়তাসহ নানা বিষয়ে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ করছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের কারণে প্রযুক্তিবিশ্বের ওপর গুরুতর প্রভাব দেখা যাবে বলে এখন থেকে সবাই নৈশভোজের মতো আয়োজনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

১৩ ডিসেম্বর অ্যাপলের সিইও টিম কুক মার-এ-লাগো এস্টেটে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত নৈশভোজে অংশ নেন। সেই সাক্ষাতে ট্রাম্প অ্যাপলের চলমান কার্যক্রম নিয়ে আলাপ করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ট্যাক্স বিরোধ, আয়ারল্যান্ডের কাছে বকেয়া এক বিলিয়ন ইউরো ট্যাক্সসহ বিভিন্ন বিষয় টিম কুক ট্রাম্পকে অবহিত করেন। টিম কুক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও করনীতির বিষয়ে ট্রাম্পের অতীতের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। সে আয়োজনে ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে অ্যাপলের যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। জানা গেছে, নৈশভোজের সময় জাকারবার্গ ট্রাম্পকে মেটার রে-ব্যান স্মার্ট চশমা উপহার দেন। এ ছাড়া মেটা ট্রাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তহবিলে এক মিলিয়ন ডলার দান করেছে। ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে জাকারবার্গ ও মেটার। এ ছাড়া গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই গুগলের কার্যক্রম নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগল ক্রোমকে ভাঙতে চায়, সেই বিষয় তাঁদের আলাপে গুরুত্ব পেয়েছিল বলে জানা গেছে।

এ সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সাক্ষাতের কথা জানা গেছে। অ্যামাজন ট্রাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য এক মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ এড়াতে জেফ বেজোস ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছেন বলে শোনা যায়। কয়েক দিন আগে সফটব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসাইয়োশি সান প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র মাসাইয়োশির ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে