একটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের নতুন তথ্য জানা গেছে। নতুন গবেষণা বলছে, কোভিড মহামারির পরে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বেড়েছে। একে সমস্যামূলক আচরণ বলে সংজ্ঞায়িত করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকেরা ৪৪টি দেশের ১১, ১৩ ও ১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার শিশুর তথ্য নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা হয়।
‘স্কুলগামী শিশুদের স্বাস্থ্য আচরণ’ শিরোনামের এই সমীক্ষায় শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গড়ে ১১ শতাংশ উত্তরদাতা ২০২২ সালে এমনভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেছে, যা ছিল সমস্যাযুক্ত। ২০১৮ সালের তুলনায় এ ধরনের ব্যবহার ৭ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণা ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, ইউরোপের শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব প্রবল। উদ্বেগজনক হারে এই প্রভাব দেখা যাচ্ছে। অনলাইনের ব্যবহারকে স্বাস্থ্যকর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন গবেষকেরা।
গবেষকদের একজন যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জো ইনচলি বলেন, ১৩ বছর বয়সীদের মধ্যে অনলাইন ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যায়। এ সময়টা প্রাথমিক কৈশোর পর্ব। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে, যার কারণে সমস্যা তাদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে।
গবেষণায় আমরা দেখেছি এক-তৃতীয়াংশ কিশোর-কিশোরী অন্যদের সঙ্গে ক্রমাগত অনলাইন যোগাযোগ করছে। এর মানে সারা দিনের প্রায় পুরোটা সময় তারা বন্ধু ও অন্যদের সঙ্গে অনলাইনে সংযুক্ত থাকে। সব শিশু-কিশোরই যে অনলাইনে ক্ষতিকারক সময় ব্যয় করছে বিষয়টি এমন নয় বলেও মনে করেন গবেষকেরা। কিশোর-কিশোরীদের অনেকেই সমস্যাযুক্ত নয়। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সামাজিক সংযোগেরই জন্য ব্যবহার করছে।
সমস্যাযুক্ত শিশু-কিশোররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত। তারা এ মাধ্যমে সময় কাটানোর জন্য অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক ও ক্রিয়াকলাপ অবহেলা করে। ঘন ঘন তর্ক করে। অনলাইনে কতটা সময় ব্যয় করে, তা নিয়ে অসত্য কথা বলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইউরোপীয় শাখা নতুন গবেষণাটি প্রকাশ করেছে। ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স হেনরি পি ক্লুজ বলেন, ‘নতুন অনুসন্ধান পরিষ্কার করেছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণদের ওপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই রকমের প্রভাবই ফেলতে পারে। তরুণদের অনলাইনের সুস্থ ব্যবহার বিকাশে সহায়তা করা প্রয়োজন। এ জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের শিক্ষা বেশি করে দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও অভিভাবক সবাইকে তাঁদের ভূমিকা পালন করতে হবে। এটি স্পষ্ট যে আমাদের কিশোর-কিশোরীরা ক্ষতিকারকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে। এ জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন। নতুবা বিষণ্নতা, উদ্বেগ, খারাপ পড়াশোনা ও ফলাফল অর্জন করবে তারা।’
সূত্র: বিবিসি