বৈদ্যুতিক গাড়ি আগামীর বাহন

অডি ই-ট্রন ৫০ কোয়াট্রো মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি
সংগৃহীত

সারা বিশ্বেই বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারজাত শুরু করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে বিদ্যুচ্চালিত বা ইলেকট্রিক গাড়ি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। রাস্তায় জ্বালানি তেল ও গ্যাসে চলা গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা তাই এখনো খুব কম। সম্প্রতি অডি বাংলাদেশ তাদের ‘ই-ট্রোন ইলেকট্রিক এসইউভি’ দেশের বাজারে ছেড়েছে। অনেকের ধারণা আগামী দিনে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজার সম্প্রসারিত হবে। এর ব্যবহারও বাড়বে।

কেন বৈদ্যুতিক গাড়ি? বাংলাদেশে অডির অনুমোদিত প্রতিনিধি প্রোগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপনা আবদুল্লাহ আর রাকিব এ ব্যাপারে জানান, ইলেকট্রিক গাড়ির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি পরিবেশবান্ধব। তাই এটি ব্যবহারে পরিবেশের কম ক্ষতি হয়। তাই বৈশ্বিক উষ্ণতা, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, কালো ধোঁয়া নির্গমন এবং আরও অনেক সমস্যার সমাধান রয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির কাছে। বিশ্বের মধ্যে বাষুদূষণের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান সবার ওপরের দিকে। তাই ঢাকার মতো শহরের জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ি বড় সুবিধাই হতে পারে।’

পরিবেশের সুরক্ষার কথা চিন্তা করলে প্রচলিত জ্বালানিচালিত গাড়ির চেয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি ভালো।  আবদুল্লাহ আর রাকিবের মতে, দক্ষতার দিক দিয়েও বৈদ্যুতিক গাড়ি অনেক এগিয়ে। বৈদ্যুতিক মোটর ইন্টারনাল কমবাসশনে চলা ইঞ্জিনগুলোর চেয়ে বেশি কার্যকর। যার অর্থ, একই পরিমাণ শক্তি নিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি অনেক বেশি দূরত্বে যেতে পারে। বৈদ্যুতিক গাড়ি এক রাতেই সম্পূর্ণ চার্জড হয়ে যাবে। তাই সকালে কোনো ফুয়েল স্টেশনে না গিয়েই গন্তব্যে যাত্রা শুরু করা যাবে। গাড়ি কেনার সময় প্রথম যে চিন্তা মাথায় আসে, তা হলো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানির খরচ। এসব দিক বিবেচনা করে বৈদ্যুতিক গাড়ির খরচ তুলনামূলক কম।

গাড়ি কেনার পর জ্বালানি খরচ ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। আর যত সময় যায়, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আরও বাড়তেই থাকে। গাড়ির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়তে থাকে। ইলেকট্রিক গাড়ির কিছু ক্ষেত্রে এসব খরচ কম। তবে কিছু দৈনন্দিন খরচ, যেমন অটো বিমা, কাঠামোগত মেরামত, ব্রেক, টায়ার পরিবর্তন ইত্যাদি আইসিই এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি যে গাড়িই ব্যবহার করেন না কেন, আপনাকে এসব ব্যয় বহন করতেই হবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য ব্যাটারির বিষয়ে একটু সচেতন থাকতে হবে। ব্যবহার করার ফলে গাড়ির ব্যাটারি প্যাকটি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। ব্যয়ের ক্ষেত্রে এটি এক বিরাট বড় ধাক্কা। বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যাটারি থাকে। প্রতিনিয়ত চার্জ দেওয়ার ফলে ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।

বর্তমানে ঢাকা শহরে তেমন কোনো বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার বাণিজ্যিক চার্জিং স্টেশন নেই। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ির মালিকদের গাড়ি চার্জ দেওয়ার কাজটা কঠিন হয়ে যাবে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ বিষয়গুলো সহজলভ্য হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার আরও বাড়বে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার নতুন একটি অটোমোবাইল নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যার লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব যানকে পরিবহনব্যবস্থায় বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করা। ২০৩০ সাল নাগাদ অন্তত ১৫ শতাংশ নিবন্ধিত বৈদ্যুতিক গাড়ির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২০-এর খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, জ্বালানিসাশ্রয়ী যানবাহন (ইইভি) প্রস্তুতের পেছনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর অবকাশের (ট্যাক্স হলিডে) সুপারিশ করা হয়েছে।