বেশ ভালোভাবেই চলছিল গাড়ি। সময়মতো দাওয়াতে উপস্থিত হওয়া যাবে ভেবে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন রায়হান আহমেদ। কিন্তু বিধি বাম। হঠাৎ করেই সমস্যা দেখা দেয় গাড়িতে, কিছুক্ষণ পর বন্ধও হয়ে যায়। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও গাড়ি স্টার্ট করা গেল না। আশপাশে কোনো গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপও নেই। ফলে পরিবার নিয়ে বেশ বিপদেই পড়েন তিনি। যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁদের অনেকেরই চলতি পথে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ সমস্যার কারণ ও সমাধানের কৌশল জানাচ্ছেন জেবি অটোর হেড অব অপারেশন শাহ আলম রাসেল।
হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয় যেসব কারণে
রাস্তায় বেশ কিছু কারণে হঠাৎ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বেশি গিয়ারের সাহায্যে কম গতিতে গাড়ি চালালে বা গিয়ার বক্স সিজ করলে অনেক সময় ইঞ্জিনের সমস্যা দেখা দেয়, ফলে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। আবার দীর্ঘ সময় বেশি গতিতে চালানোর ফলে ইঞ্জিনে লুব্রিক্যান্ট ঘাটতি হলেও এ সমস্যা হতে পারে। স্পার্ক প্লাগ ঠিকমতো কাজ না করলে বা তেলের ট্যাংকে পানি ঢুকলে গাড়ি বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি স্টার্ট হয় না। তেলের ট্যাংকে বাতাস ঢোকার ছিদ্র বন্ধ হয়ে তেল নিষ্কাশনের সমস্যা হলেও মাঝেমধ্যে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল বা গ্যাস না থাকলে রাস্তার মধ্যে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সিএনজিচালিত গাড়িতে অবশ্যই গ্যাসের পাশাপাশি তেল ভরতে হবে। কারণ, গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর তেলের সংযোগ না পেলে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি না থাকলে ইঞ্জিন গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে গাড়ি। অনেক সময় নিম্নমানের বা ভেজাল ইঞ্জিন অয়েলের কারণেও এ সমস্যা হয়।
ব্যাটারির চার্জ বা ইগনিশন সুইচের সমস্যার পাশাপাশি গাড়ির স্টার্টার মটরে জ্যাম বা সংযোগ দুর্বল (কানেকশন লুজ) থাকলে অনেক সময় গাড়ি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। নতুন গাড়িতে এই সমস্যা সাধারণত কম হয়। গাড়ির নিষ্কাশন পাইপে (এক্সজস পাইপ) ময়লা জমার কারণেও গাড়ি বন্ধ হতে পারে।
যা করতে হবে
রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগে প্রথমেই গন্তব্যে পৌঁছানোর মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি আছে কি না, তা দেখতে হবে। এরপর ইঞ্জিন অয়েল, রেডিয়েটর আর ব্যাটারির পানির পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। গাড়িতে অবশ্যই পানি রাখতে হবে, সেটি পান করার জন্যই হোক আর রেডিয়েটরে দেওয়ার জন্যই হোক। ইঞ্জিন বন্ধ রেখে দীর্ঘক্ষণ গাড়ির ভেতরের লাইট, এসি বা সিডি-ডিভিডি ব্যবহার করলে দ্রুত ব্যাটারির চার্জ কমে যায়। আর তাই গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে ব্যাটারির চার্জ ও ইগনিশন সুইচের কার্যকারিতা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। গাড়ির নিষ্কাশন নল (এক্সজস পাইপ) সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
স্টার্টার মটরের কারণে রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে লোহার দণ্ড দিয়ে স্টার্টার মটরের যে অংশ ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত করা থাকে, সেখানে আস্তে আস্তে আঘাত করতে হবে। এ সময় নিজে বা অন্য কারও সাহায্য নিয়ে নিয়মিত ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে হবে। পুশ স্টার্ট গাড়ি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে রিমোট–কি মনিটরের কাছে রেখে পুশ করতে হবে। রিমোট–কি পুশ বাটনে লাগিয়ে আস্তে করে পুশ করেও অনেক সময় গাড়ি স্টার্ট করা যায়।
গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই নিয়মিত ইঞ্জিন মিটার দেখতে হবে। মিটারের কাটা যদি সি এবং এফ–এর মাঝামাঝি থেকে ওপরে উঠে যায়, তাহলে বুঝতে হবে গাড়ির ইঞ্জিন বেশি গরম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইঞ্জিন ঠান্ডা করে পুনরায় গাড়ি চালাতে হবে।