চলতি পথে গাড়ির চাকা ফেঁসে গেলে যা করবেন
চলতি পথে গাড়ি থেমে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে চাকা ফেঁসে যাওয়া বা পাংচার হওয়া অন্যতম। পাংচার হলে গাড়ি বা মোটরসাইকেলের হাওয়া বের হয়ে যায়। তখন চাকা আর স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে পারে না। মহাসড়কে উচ্চগতিতে গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ পাংচার বা চাকা ফেটে যাওয়া যেকোনো বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই জেনে নিই চাকা পাংচার হলে করণীয় কী?
গতি নিয়ন্ত্রণ করা
চলন্ত গাড়ি বা মোটরসাইকেলের যেকোনো চাকা পাংচার হলে চালককে প্রথমেই গাড়ির গতি কমাতে হবে। পাংচার হয়েছে বোঝার সঙ্গে সঙ্গে ইমার্জেন্সি লাইট জ্বালিয়ে দিন। এবার থ্রটল ছেড়ে দিয়ে স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরে ব্রেকে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে গতি কমানোর চেষ্টা করুন। গতি নিয়ন্ত্রণে এলে গাড়ি বা মোটরসাইকেলটিকে রাস্তার পাশে দাঁড় করাতে হবে।
পাংচার কিট ব্যবহার করা
নতুন মডেলের গাড়িগুলোতে অতিরিক্ত চাকার বদলে পাংচার কিট বা ইনস্ট্যান্ট জেল থাকে। যদি আপনার গাড়িতে এই ধরনের সুবিধা থাকে, তবে খুব সহজেই আপনি চাকার পাংচার বা লিক হওয়া আটকে দিয়ে ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবেন। কিট বক্সে জেলের পাশাপাশি চাকায় হাওয়া দেওয়ার বৈদ্যুতিক যন্ত্রও থাকে। প্রথমে চাকার নজেলের ক্যাপটি খুলে জেলটি ঢেলে দিতে হবে। তারপর হাওয়া দেওয়ার যন্ত্রের সাহায্যে চাকায় হাওয়া দিয়ে হাওয়ার পরিমাপ জেনে নিতে হবে। এই যন্ত্রে চাকার বাতাসের পরিমাণ কত, তার নির্দেশক থাকে। পরে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর পর গাড়ির চাকার পাংচার স্থায়ীভাবে সারিয়ে নিতে হবে।
যদি পাংচার কিট না থাকে, তবে জাগের সাহায্যে যে পাশের চাকা পাংচার হয়েছে, সে পাশ উঁচু করতে হবে। জাগটি চালকের পাশে প্রথম যাত্রীর আসনের নিচে অথবা পেছনে বুট স্পেসের মেঝের নিচে থাকে। এ ছাড়া গাড়ির মেঝের নিচের খোপে টুলবক্স থাকে। টুলবক্সে চাকা খোলার সহায়ক যন্ত্র পাওয়া যাবে। এ পদ্ধতিতে চাকা খোলা কষ্টসাধ্য। তা ছাড়া গাড়িতে অতিরিক্ত চাকাও থাকতে হবে। চাকার স্ক্রুগুলো খুলে চাকাটি বের করে নিয়ে নতুন চাকা যুক্ত করে স্ক্রুগুলো শক্ত করে এঁটে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখেও ঝটপট শিখে নিতে পারেন ঝটপট চাকা বদলানোর কৌশল।
রাস্তার পাশে থাকে ‘হাওয়া’ দোকান
মহাসড়কগুলোতে চলাচলের সময় রাস্তার পাশে হলুদ বা লাল রঙের ট্যাংক দেখা যায়। ছোটখাটো এসব দোকানে চাকায় হাওয়া দিতে অথবা পাংচার সারানোর কাজ করানো যায়। পাশাপাশি এয়ার ফিল্টার বা এসি ফিল্টারেও হাওয়া দিয়ে পরিষ্কার করার সুযোগ রয়েছে।
জেনে নিন চাকার পুরুত্ব
চাকা যত পুরোনো হয় আর বেশি দূরত্বে পাড়ি দেয়, তত চাকার ক্ষয় বেশি হয়। তাই যাত্রা শুরু করার আগে একটি দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে টায়ারের মাঝখানের খাঁজকাটা অংশে ধরুন। যদি দেশলাইয়ের কাঠির ওপরের অংশ পুরোপুরি টায়ারের খাঁজকাটা অংশে ঢুকে যায়, তাহলে টায়ারের অবস্থা ভালো আছে। যদি কাঠির ওপরের অংশ টায়ারের সমান থাকে, তাহলে নিরাপদ চালানোর জন্য আপনার টায়ারটি বদলানো জরুরি। সাধারণত একটি টায়ারের মেয়াদ চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে যা টায়ারের গায়ে উল্লেখ থাকে। তাই চাকার তথ্যগুলো জেনে নেওয়া জরুরি। চাকার গায়ে উৎপাদনের তারিখ স্পষ্ট অক্ষরে লেখা থাকে। সাধারণত ২০২০ বা ২২২১ এভাবে করে উল্লেখ করা থাকে। এখানে প্রথম দুটি সংখ্যা উৎপাদনের বছরের সপ্তাহ এবং পরের দুটি সংখ্যা উৎপাদনের বছরকে নির্দেশ করে।
ব্যবহার করুন টায়ার সিলেন্ট
ছোটখাটো পাংচারেও যাত্রাপথকে নিরাপদ রাখতে টায়ারে সিলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সিলেন্ট ব্যবহারের ফলে তৎক্ষণাৎ কোনো ছিদ্র হলেও হাওয়া অল্প বের হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। চাকা প্রতি ভালো মানের সিলেন্ট ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যায়। একবার চাকায় সিলেন্ট ভরে দুই বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
টিপিএমএসে জানা যাবে চাকায় হাওয়ার পরিমাণ
টায়ার প্রেশার মনিটর সিস্টেম বা সংক্ষেপে টিপিএমএস হালনাগাদ মডেলের গাড়িগুলোতে থাকে। তবে যেকোনো গাড়িতেই এই সিস্টেম যুক্ত করা যায়। অতিরিক্ত এই যন্ত্রের চারটি ক্যাপ চারটি টায়ারের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং একটি ডিসপ্লে গাড়ির ড্যাশবোর্ডে যুক্ত করা যায়। এতে প্রতিটি চাকায় কী পরিমাণ হাওয়া আছে সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা মেলে। এর দাম এক থেকে দুই হাজার টাকা।
রাখুন জরুরি ইনফ্লেটর
দুরের যাত্রাপথে গাড়িতে একটি ইনফ্লেটর বা ডিফ্লেটর যন্ত্র রাখা যেতে পারে। এতে যেকোনো প্রয়োজনে গাড়ির চাকায় হাওয়া দেওয়া যাবে। পাওয়ার ব্যাংকের মতো দেখতে এই ডিভাইস একটি কেব্লের সাহায্যে অল্প সময়ে টায়ারকে পূর্ণ হাওয়া দিতে বা হাওয়া বের করে দিতে পারে। ছোট এবং হালকা হওয়াতে সহজেই এটি বহন করা যায়। চাকায় কতটুকু হাওয়া প্রবেশ করল তা যন্ত্রের ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হয়। মডেল এবং এসি/ডিসি সুবিধা অনুসারে যন্ত্রটির মূল্য দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
রয়েছে অ্যাপভিত্তিক জরুরি সেবা
যদি সব উপায় ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সেবা পাওয়ার জন্য রয়েছে অনলাইন অ্যাপ। ‘যান্ত্রিক’ অ্যাপে গাড়ির অবস্থান জানিয়ে দিয়ে পেতে পারেন শর্ত সাপেক্ষে ‘রোড সাইড অ্যাসিস্ট্যান্ট’ সেবা।
চাকার ওপরেই যেহেতু মোটরবাইক বা গাড়ি ভর করে এগিয়ে যায়, তা–ই স্বল্প বা দীর্ঘ যেকোনো দূরত্ব পাড়ি দিতে অবশ্যই চাকার বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। নিরাপদ যাত্রায় ঈদ হোক আনন্দের।