বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা-অসুবিধা
বৈদ্যুতিক গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার পাশাপাশি জার্মানি ও জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তৈরি করছে বৈদ্যুতিক গাড়ি। বাংলাদেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির দেখা তেমন একটা মেলে না। তবে এ বছর বিলাসবহুল বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে এনেছে প্রোগ্রেস মোটরস।
অডি ই-ট্রন কোয়াট্রো মডেলের স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল বা এসইউভি ক্যাটাগরির এই গাড়িটি একবার পূর্ণ চার্জে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে।
ডুয়েল ইলেকট্রিক মোটর সুবিধার আওডি ই-ট্রন কোয়াট্রো মডেলের গাড়িটি ৫৪০ নিউটন মিটারে (এনএম) ২৩০ কিলোওয়াট বা ৩১৩ হর্সপাওয়ার(এইচপি) শক্তি উৎপাদন করায় মাত্র ৬.৮ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম গাড়িটির পুরো ব্যাকডালাজুড়ে রয়েছে টেইললাইট। আরও রয়েছে ২০ ইঞ্চি অওডি অ্যালয় হুইল, ইলেকট্রিক স্টিয়ারিং, ফাইভ-লিংক এডাপটিভ এয়ার সাসপেনশন সুবিধা।
এ ছাড়া দেশে তৈরি হচ্ছে ছোট আকারের হ্যাচবেক ডিজাইনের বৈদ্যুতিক গাড়ি। ‘পালকি’ নামের এই গাড়ি মাত্র ৫ লাখ টাকায় কেনা যাবে। পাশাপাশি ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের আরেকটি মডেল রয়েছে গাড়িটির, যেটি মাত্র ২ ঘণ্টা চার্জ দিয়ে ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে। ফলে পালকি গাড়ি বিলাসবহুল না হলেও গাড়ির ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখে নেওয়া যাক—
পরিবেশদূষণ কম
বৈদ্যুতিক গাড়িতে কোনো প্রকার জ্বালানি শক্তির ব্যবহার না হওয়ায় গাড়ি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় না। ফলে পরিবেশ রক্ষায় এই গাড়িগুলো ভূমিকা রাখে। আর তাই পরিবেশ দূষণ রোধ এই গাড়িগুলো তুলনাহীন।
যাতায়াত খরচ কম
বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তা আকারে ছোট কিন্তু বেশি বিদ্যুৎ ধারণ করতে পারে। আর তাই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো একবার চার্জে ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। সাধারণত বৈদ্যুতিক গাড়িতে প্রতি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে খরচ হয় ২ থেকে ৪ টাকা, যা অন্যান্য জ্বালানি খরচের প্রায় অর্ধেক। শুধু তা-ই নয়, এই গাড়িগুলো একবার চার্জ দিয়ে স্বল্প দূরত্বে প্রায় এক সপ্তাহের মতো ব্যবহার করা যায়।
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম
জ্বালানি ব্যবহার হয় না বলে গাড়িতে ইঞ্জিন অয়েল, অয়েল ফিল্টারসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয় না। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম হয়। তা ছাড়া বেশির ভাগ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে ৩ থেকে ৮ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকে। ফলে নিশ্চিন্তে দীর্ঘদিন বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করা যায়।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
বৈদ্যুতিক গাড়িতে সাধারণত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফলে বুট স্পেস এবং সামনের ইঞ্জিন বেতে অতিরিক্ত স্টোরেজ পাওয়া যায়। এ ছাড়া সানরুফ, মুনরুফ, কিক বুট ওপেনার, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, বিগ স্ক্রিন ডিসপ্লে, স্বয়ংক্রিয় পার্কিংসহ নানা সুবিধা মিলে থাকে।
শব্দদূষণ হয় না
ইঞ্জিনের বদলে মোটরের শক্তিতে গাড়ি চলায় শব্দ কম হয়। বেশির ভাগ বৈদ্যুতিক গাড়িই নিঃশব্দে পথ চলতে পারে। তবে রাস্তায় গাড়ির উপস্থিতি বোঝানোর জন্য কৃত্রিম শব্দ ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে অনেক গাড়িতে।
ব্যাটারির পুনর্ব্যবহার
ব্যাটারিচালিত গাড়িতে শক্তির পুনর্ব্যবহার করা হয়। আর তাই গাড়ি চালানোর সময় থ্রটল ছেড়ে দিলে অথবা ব্রেক ধরলে চাকার ঘূর্ণন শক্তি থেকে ব্যাটারিতে শক্তি জমা হয়। পরে এ শক্তি ব্যবহার করে গাড়ি চলতে পারে। তা ছাড়া ব্যাটারি পুরোনো হয়ে গেলে ব্যাটারির উপাদান পরিবর্তন করে নতুনের মতো ব্যবহার করা যায়।
নিবন্ধন ফি বেশি
বৈদ্যুতিক গাড়ির বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ সংশোধনের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। এই সংশোধন অনুযায়ী বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটরের কার্যক্ষমতাকে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ‘কিউবিক সেন্টিমিটার’ বা সিসি এর সঙ্গে তুলনা করে নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন খরচ সাধারণ গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ মডেলের আওডি ই-ট্রন কোয়াট্রো মডেলের ৭১ কিলোওয়াট সমৃদ্ধ গাড়ির নিবন্ধন খরচ প্রায় দুই লাখ টাকা যা একটি ৬ হাজার সিসি গাড়ি নিবন্ধনের খরচের সমান। এই গাড়িতে অগ্রিম আয়করও দিতে হবে ২ লাখ টাকা।
গাড়ির দাম বেশি
বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর দাম বেশ চড়া। বিআরটিএ এর নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন পুরোনো বৈদ্যুতিক গাড়ি দেশে আমদানি করা যাবে না। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দামও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে।
রাস্তায় মিলবে না চার্জিং স্টেশন
বৈদ্যুতিক গাড়ি দেশে আসা শুরু করলেও এখনো দেশে কোনো বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন চালু হয়নি। বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে হবে। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বেশ বিপদে পড়তে হবে।
ঘটতে পারে দুর্ঘটনা
বৈদ্যুতিক গাড়িতে চার্জারের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করা হয়। তাই ভালো মানের সার্কিট ব্রেকার বা নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্ণ চার্জ হতে বেশি সময় প্রয়োজন
দেশে চার্জিং স্টেশন না থাকার কারণে বৈদ্যুতিক গাড়িকে পুরোপুরি চার্জ দিতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যুৎ সমস্যা হলে গাড়ির চার্জ ঠিকমতো করা যায় না।