স্যাম অল্টম্যান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কী ভাবছেন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান। ১৮ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে এক বক্তৃতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও বর্তমান পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা প্রকাশ করেছেন।
গত কয়েক বছর ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যামের জন্য বিস্ময়কর কিংবা বিতর্কিতভাবে কেটেছে। চ্যাটজিপিটি নামের জাদুর বাক্সকে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে চমক তৈরি করেছেন। আবার নিজের কোম্পানি থেকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বরখাস্ত হয়েছেন। বড় ভাষার প্রযুক্তিগত মডেলের প্রশিক্ষণের জন্য সংবাদপত্রের নিবন্ধ ব্যবহার নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এর মামলার মুখে পড়েছেন। চ্যাটজিপিটি বা এআই-দুনিয়ার মুখপাত্র হিসেবে এরই মধ্যে স্যাম নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম উপলক্ষে দাভোসে ১৫ থেকে ১৯ জানুয়ারি অনেক বিশ্বনেতা থেকে শুরু করে প্রযুক্তি-দুনিয়ার আলোচিত ব্যক্তিরা অবস্থান করেছেন। সেখানে নিজের বক্তব্যে স্যাম অল্টম্যান আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) বা কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির সঙ্গে নানা চাপের কথা প্রকাশ করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এআইয়ের ব্যাপক ব্যবহারের কথা তিনি বলেন। মানুষ এআই ব্যবহার করার সময় নৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্যাম। এআই নিয়ে বিভিন্ন বিপদ শনাক্তের কথাও বলেছেন।
কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি নিয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘একটি বিষয় আমি কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ করেছি। আমরা খুব শক্তিশালী এআই তৈরি করতে যত কাছে যাচ্ছি, তত সবাই উত্তেজিত হচ্ছে। এটি খুব চাপের বিষয় বটে। আমরা যদিও দায়িত্বশীল থাকার চেষ্টা করছি। বিশ্ব যতই এজিআই তৈরির কাছাকাছি যাচ্ছে ততই চাপ ও উত্তেজনার মাত্রা বেড়ে চলেছে। আমরা খুব শক্তিশালী এআইয়ের কাছাকাছি যাচ্ছি। আমি আরও অদ্ভুত সব জিনিস আশা করছি। অনেক প্রস্তুতি নিয়ে স্থিতিস্থাপক কোনো পরিকল্পনা অদ্ভুত উপায়ে ভুল হতে পারে। এসব নিয়ে চিন্তা করার জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। জেনারেটিভ এআই এমন একটি ব্যবস্থা, যা কখনো সঠিক, কখনো কখনো সৃজনশীল, প্রায়ই এতে ভুল হয়। আপনি এই সরঞ্জামকে আপনার গাড়ি চালাতে দেবেন না। কিন্তু আপনি কী বিষয়ে লিখতে হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বা আপনি যে কোডটি পরীক্ষা করতে চান, তার জন্য আপনাকে সাহায্য করছে এই টুল, যে জন্য আপনি খুশি।’
মানুষ এআইয়ের নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম বলে বিশ্বাস করেন স্যাম। তিনি বলেন, ‘মানুষ নানা সরঞ্জাম সম্পর্কে জানে ও সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বোঝে। ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটিকে তাদের নিজেদের জন্য উপযোগী করার উপায় খুঁজে পেয়েছে। তারা বুঝতে পারছে, কিসের জন্য এই টুল ব্যবহার করা উচিত নয়। এমনকি উন্নত এআই মডেল বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ওপেনএআই কিছু বিষয়ে বেশ ভালো, তবে জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্নে ভালো নয়। এখন প্রযুক্তিগত প্রশ্নের চেয়ে কঠিন একটি প্রশ্ন আছে। এআই-দুনিয়ায় নানা নিয়ম আছে। তার অবস্থা, তার সীমা কী হবে, তা কে ঠিক করবে? এক দেশ বনাম অন্য দেশের মধ্যে তা কীভাবে কাজ করবে—এই প্রশ্ন আছে। আমি কী করতে পারব, কী পারব না? এটি একটি বড় সামাজিক প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন কিন্তু এটাই। আমি মনে করি, এই নতুন টুলের সীমিত ক্ষমতা আর নানা ত্রুটি থাকার পরও মানুষেরা দুর্দান্তভাবে ব্যবহার করছে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য নানাভাবে ব্যবহার করছে। নানাভাবে ব্যবহার করার উপায় খুঁজে পাচ্ছে। নিজেরাই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারছে। এআই নিয়ে এখন জানাশোনা কিছুটা সহজ হয়েছে। কারণ, মানুষেরা এখন নানা কাজে ব্যবহার করছে। আমি মনে করি, যেকোনো নতুন প্রযুক্তি বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়ার দারুণ একটা উপায়।’
এআই কতটা মানুষের কাজ প্রতিস্থাপন করবে, তা নিয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘আমরা মানবতাকে আগে গুরুত্ব দিচ্ছি। মানুষ সত্যিকার অর্থে অন্য মানুষ কী চিন্তা করে, তা নিয়ে ভাবে। এটি আমাদের মধ্যে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। স্যাম অল্টম্যান এআই নিয়ে আশাবাদী হলেও মানবতার জন্য সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে সতর্ক করেন।’ তিনি বলেন, ‘এআইয়ের একটি অংশ রয়েছে, যা বেশ সঠিক। এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যা স্পষ্টতই খুব শক্তিশালী। আর আমরা জানি না, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না—সামনে ঠিক কী ঘটতে চলেছে। সব নতুন আর বড় প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে। কল্পনা করা সহজ যে এআই বিশ্বের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এ ক্ষেত্রে ভুলও হতে পারে। ‘অসতর্ক থাকা বা চাপ অনুভব না করা খুব খারাপ হবে। আমার ভালো লাগছে যে ব্যবহারকারীরা এআই নিয়ে চিন্তায় আছে। ওপেনএআইতে আমাদের নিজস্ব চিন্তা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, চিন্তার মাধ্যমে আমরা পরিচালনা করতে পারি। পরিচালনার একমাত্র উপায় হলো প্রযুক্তিকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া। সমাজ বা প্রযুক্তিকে বিকশিত হতে দিন। ধাপে ধাপে খুব শক্ত মতামত ও নিয়মতান্ত্রিক সংশোধনের মাধ্যমে এই সিস্টেম তৈরি করুন। এতে অসাধারণ সুযোগ তৈরি হবে। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা এআইকে নিরাপদ করার কাজ করছি। আমরা প্রযুক্তিটিকে বিশ্বের সামনে রেখেছি। যেন ব্যবহারকারীরা অভ্যস্ত হয়। সমাজ হিসেবে আমাদের সময় আছে, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সময় আছে—কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা বের করার জন্য আলোচনা করতে হবে।’
স্যাম আরও বলেন, ‘এটি ভালো যে মানুষেরা এআই প্রযুক্তির খারাপ দিক নিয়ে ভয় পায়। আবার এটি ভালো যে আমরা নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে কথা বলছি। আমরা অতীত থেকে অনেক শিক্ষা নিতে পারি। কীভাবে প্রযুক্তিকে নিরাপদ করা হয়, সমাজের বিভিন্ন অংশ কীভাবে নিরাপদ মানে তা নিয়ে জানতে পারি। অন্যদিকে আমাদের মতো কোম্পানি ও একই ধরনের কাজ করে এমন অন্যান্য ব্যক্তির প্রতি বিশ্বের সাধারণ চাপ ও অস্বস্তি রয়েছে, যার জন্য আমি সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, এক দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা যেন অন্য দেশে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করে।’
সূত্র: টেকওপিডিয়া