নির্বাচনের বছরে যেভাবে গুজব মোকাবিলা করছে উইকিপিডিয়া
২০২৪ সালকে বিশ্ব নির্বাচনের বছর বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে বলা যায়, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠী এ বছর নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন। ভোট দেওয়ার সময় প্রার্থী ও দল নিয়ে যাচাই-বাছাই করবেন ভোটাররা। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রার্থী বা দল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য এখন সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য অনেক ভোটারের মতামত তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলো সদ্য। ভারতসহ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষই যখন অনলাইনে তথ্য খুঁজবেন, তখন সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য হবে মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া। তাই উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে ভুল তথ্য বা গুজব ছড়ানোর শঙ্কাও বেশি থাকে। কিন্তু উইকিপিডিয়া কীভাবে অনলাইন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে গুজব মোকাবিলা করছে?
উইকিপিডিয়া কীভাবে মিথ্যা তথ্য, গুজব প্রভৃতি মোকাবিলা করছে, বিশেষ করে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, তা জানতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের অ্যান্টিডিজইনফরমেশন স্ট্র্যাটেজি লিড কোস্টানজা সিউব্বা ক্যানিগ্লিয়া। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী উইকিপিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা তুলে ধরে নিবন্ধ লেখেন এবং অবশ্যই যথাযথ সূত্রের উল্লেখ করেন। ক্যানিগ্লিয়া বলছেন, স্বেচ্ছাসেবকেরা সব সময় তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। উইকিপিডিয়ার নীতি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, সেটিও খেয়াল রাখেন। উইকিপিডিয়ার কনটেন্ট মডারেশনের এই পুরো প্রক্রিয়া যেমন উন্মুক্ত থাকে, তেমনি স্বচ্ছও হয়।
কোস্টানজা সিউব্বা ক্যানিগ্লিয়া জানান, উইকিপিডিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তা করা হচ্ছে। উইকিপিডিয়ায় এআই ব্যবহারের মৌলিক সূত্রও রয়েছে। এআইয়ের ক্ষেত্রে ‘ক্লোজড-লুপ’ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ এআই ব্যবহৃত হলেও মানুষ সেটিতে যুক্ত থাকেন। এআইয়ের কাজে তাঁরা নজর রাখেন। প্রয়োজনে মানোন্নয়ন করেন, সম্পাদনা করেন। ২০০২ সাল থেকে মানুষই উইকিপিডিয়ার আধেয় তৈরি করেন। তবে এখন অনেকে তাঁদের কাজ সহজ করতে এআই ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। উইকিপিডিয়ায় তথ্যের নির্ভুলতার জন্য স্বেচ্ছাসেবকেরা অনেক এআই টুল ব্যবহার করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লুবট এনজি ও এসটি৪৭প্রক্সিবট নামের বট, গ্যাজেটস, ইউজারস্ক্রিপ্টস এবং টুইনকল, লাইভআরসি, রিয়েল টাইম রিসেন্ট চেঞ্জেস, পেজ কিউরেশন নামের এক্সটেনশন। এ ছাড়া হাগল, ভ্যানডাল ফাইটার ও অটো উইকি ব্রাউজার নামে সম্পাদনার প্রোগ্রামও ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি দ্রুত কোনো ভুল শনাক্তে চেকউইকি, কপিপেট্রোল, এক্সটুলস, গ্লোবাল ইউজার কন্ট্রিবিউশন নামে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহৃত হয়।
স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে এসব টুল তৈরির জন্য উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের একটি দলও রয়েছে। উইকিপিডিয়ায় অনবরত কোনো আইপি ঠিকানা বা অ্যাকাউন্ট থেকে ভুল তথ্য দেওয়া হলে ও নিয়ম লঙ্ঘন করলে সেই আইপি ঠিকানা ও অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে পরে কোনো সম্পাদনা করার সুযোগও থাকে না৷ ক্লুবট এনজি দিয়ে এ ধরনের ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়।
ক্যানিগ্লিয়া জানান, উইকিপিডিয়ার মূল বিষয় হলো নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিবন্ধ লেখা। যার ফলে যথাযথ সূত্র উল্লেখ করতে হয় এবং সেগুলো কোনো সম্পাদনা পক্ষপাতিত্ব ছাড়া নির্ভুলভাবে প্রকাশ করা হয়। নির্বাচনের মতো বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে উইকিপিডিয়ার সম্পাদকেরা সব প্রকাশিত তথ্য যাতে নির্ভুল ও যথাযথ থাকে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকেন। এ ছাড়া প্রশাসকেরা কোনো পেজকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধও রাখতে পারেন।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস