চ্যাটজিপিটি নিয়ে স্যাম অল্টম্যান নিজেই কেন বিব্রত
ওপেনএআই নিজেদের চ্যাটজিপিটি নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির জন্য কয়েক বছর ধরে আলোচিত নাম। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যানও প্রযুক্তি দুনিয়ায় বেশ পরিচিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি এক আলোচনায় অংশ নেন স্যাম। আলোচনায় দেখা যায়, জিপিটি-৪ ও এর কাজ নিয়ে বেশ সমালোচনা করেছেন স্যাম। তিনি আরও বেশি প্রভাবশালী মডেল তৈরির ইঙ্গিত দেন।
বর্তমানে চ্যাটজিপিটি বিশ্বকে বদলে দিয়েছে বলে আলোচিত, সেটি নিয়ে রীতিমতো স্যাম বিব্রত বলে জানিয়েছেন। তবে স্যাম ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য এআইয়ের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ২০১৫ সালে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেন স্যাম অল্টম্যান। গেল কয়েক বছরে চ্যাটজিপিটি, ডাল-ই আর সোরার মতো জনপ্রিয় এআই পণ্য প্রকাশ করেন। কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্য তৈরি করে আলোচিত তিনি। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রভাষক রবি বেলানির কাছে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সবাই চ্যাটজিপিটি নিয়ে আশাবাদী হলে স্যাম এখনো খুশি নন বলে জানান। জিপিটি-৪–নির্ভর যে মডেল, তার কর্মক্ষমতা স্যামকে তেমন আকর্ষণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন। স্যাম বলেন, চ্যাটজিপিটি আসলে অসাধারণ কিছু না। চ্যাটজিপিটি কিছুটা বিব্রতকরও বটে। জিপিটি-৪ সব মডেলের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ও নির্বোধ ধরনের। কিছুটা বিব্রতকর বিষয় হলো, এআই লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) এরই মধ্যে প্রযুক্তির দুনিয়ায় অনেক পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে। চ্যাটজিপিটি ফরচুন ৫০০ কোম্পানির মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজের জন্য ব্যবহার করে। সপ্তাহে প্রায় ১০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী এই মডেল ব্যবহার করছেন। প্রায় ৩০ কোটি চাকরির স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় অবদান রাখছে। স্যামের বক্তব্য, একটি ভালো এলএলএম সমাজ ও বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। জিপিটি-৪ পরবর্তী প্রজন্মের মডেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকবে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল তৈরির জন্য খরচের বিষয়টি একেবারেই গুরুত্ব দেন না স্যাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বছরে ৫০ কোটি, ৫০০ কোটি কিংবা ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার খরচ নিয়ে চিন্তা করি না। আমি সত্যিই চিন্তা করি না। আমরা এমন একটি গতিপথে থাকতে চাই, যেখানে শেষ পর্যন্ত আমরা সমাজের জন্য কিছু তৈরি করতে পারব। আমরা এজিআই তৈরি করছি। এটি বেশ ব্যয়বহুল একটা কাজ। তবে এ কাজ সমাজের জন্য খুব মূল্যবান হবে।’
স্যাম এআই প্রযুক্তির বিকাশের জন্য খরচ করতে চান অনেক বেশি। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে এআই অনেক পরিবর্তন আনবে বলে জানান তিনি। তিনি এআইয়ের মাধ্যমে ২০৩০ সালের বিশ্ব অর্থনীতির আকার আরও ১৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি = ১ ট্রিলিয়ন) মার্কিন ডলার বাড়বে বলে জানান।
কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগকে স্যাম মানবাধিকার বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার যেখানেই তৈরি করা হোক না কেন, কম্পিউটার ব্যবহার বিশ্বজুড়ে ন্যায়সংগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মিশনের মূল বিষয়ের একটি হচ্ছে, আমরা চ্যাটজিপিটিকে বেশি ছড়িয়ে দিতে বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছি। বিশ্বের জন্য কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা এমন একটি বিশ্বে পৌঁছেছি, যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার করাকে মানবাধিকার হিসেবে চিন্তা করা যায়। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে কীভাবে তা বিতরণ করা যায়, তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’ বিশ্ব অর্থনীতিতে এআই ও অটোমেশন ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন স্যাম। অর্থনৈতিকভাবে কম উন্নত দেশে কম্পিউটার পরিকাঠামোতে বিনিয়োগের জন্য সহায়তার প্রয়োজন হবে।
স্যাম অল্টম্যান আরও বলেন, ‘এআই প্রযুক্তি বা অন্য কোনো প্রযুক্তির সব যে ভালো, তা মনে করা যাবে না। আমি বিশ্বাস করি, গড়পড়তাভাবে ভালো হবে। তবে আমি মনে করি, অন্য কোনো সরঞ্জামের মতো এআইয়ের অপব্যবহার হবে। আপনি একটি হাতুড়ি দিয়ে দুর্দান্ত জিনিস করতে পারেন, আবার আপনি একটি হাতুড়ির আঘাতে হত্যাও করতে পারেন। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি, এআইয়ের অপব্যবহার করে ডিপফেক, ফিশিং স্ক্যাম ও স্বয়ংক্রিয় সাইবার আক্রমণ করা হচ্ছে। এ ধরনের আরও হুমকির উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
সূত্র: টেকোপিডিয়া