পুতিন এখন 'সুপারহিরো'
বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে রাশিয়ার তৈরি আলোচিত টিকাটিও রয়েছে। বিশ্বের সবার আগে রাশিয়ার টিকা অনুমোদনের ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে নিরাপত্তা নিয়ে যেমন উদ্বেগ তৈরি করেছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক ভুয়া তথ্য সৃষ্টি করছে। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রাশিয়ার টিকা ঘোষণা নিয়ে নানা কৌতুকপূর্ণ মিম ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ভাষার মিমগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করছেন। কিছু মিমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সুপারহিরো হিসেবে দেখানো হয়েছে। স্পাইডারম্যান, কোথাও আয়রন ম্যানের মতো পুতিন পৃথিবী রক্ষা করছেন—এমন মিমও দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি মিম হচ্ছে ভালুকের পিঠে চড়ে পিঠের ওপর বিশাল সিরিঞ্জ বহন করছেন পুতিন। এ মিমটির একটি সংস্করণে দাবি করা হচ্ছে, পুতিন নিজে এ মিমটি শেয়ার করেছেন। তবে তা সঠিক নয়।
রাশিয়ার টিকা ঘোষণার একটি পোস্ট ফেসবুকে ব্যাপক আকারে ছড়াচ্ছে, যাতে পুতিনকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। এ পোস্টটি ২ লাখের বেশি শেয়ার হয়েছে। পোস্টটি পুতিনের অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছে—অনেকে এ বিশ্বাস থেকে শেয়ার করছেন। তবে পুতিনের নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ওই পোস্ট করা হয়নি।
ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টটিতে রাশিয়ার টিকাকে মানুষকে মহাকাশের পথ দেখানো প্রথম সোভিয়েত কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ টিকাটি মাস্ক ও আইসোলেশন ছাড়াই ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ মুক্ত করার পথ দেখাবে এ তথ্য দেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার টিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এটি তৈরিতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রাশিয়াকে টিকা তৈরিতে মান অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ফেসবুকের আরেকটি জনপ্রিয় পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, রাশিয়া বারবার তাদের টিকা দিয়ে বিশ্বকে রক্ষা করেছে। তবে ইতিহাসবিদ ডোরা ভারগা বলেছেন, এটা অতিরঞ্জিত দাবি। ওই পোস্টে যেসব টিকা রাশিয়া তৈরি করেছে বলে দাবি করা হয়েছে তা ঠিক নয়।
রাশিয়ার তৈরি টিকা নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে একে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনে একে নিরাপদ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাশিয়া বিশ্বের প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা অনুমোদন দেওয়ার কথা জানায়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তাঁর এক মেয়ের শরীরেও টিকাটি দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার টিকা অনুমোদন পেলেও এর বিস্তৃত পরীক্ষা হয়নি বলে তাদের দাবি সম্পর্কে গবেষকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার টিকার বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোতে টিকা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহকে ‘ঈর্ষা’ বলে তুলে ধরে রাশিয়ার ওপর তথ্য আক্রমণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টিকার অনুমোদনের ঘটনাটি রাশিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল বিজ্ঞানের বিজয়। এটি বিদেশি টিকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কার্যকর। রাশিয়ার এ দাবির পক্ষে অবশ্য কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, পুতিনের কথা নিয়ে অনেক ফেসবুক পেজে নানা ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। পুতিন যেসব কথা বলেননি, সে ধরনের কথা নিয়েও রাশিয়ার পক্ষে নানা প্রচার চালানো হচ্ছে।
পুতিন ছাড়াও ফেসবুকে তাঁর টিকা গ্রহণ করা মেয়েকে নিয়েও নানা পোস্ট করা হচ্ছে। পুতিনের কোন মেয়ে টিকা পেয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে টিকা গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তার কিছু সময়ের জন্য সামান্য জ্বর আসার কথা বলা হয়েছে। তবে ভারতে তার মেয়েকে নিয়ে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে ছড়িয়েছে। কিন্তু ভিডিওতে যাকে দেখানো হচ্ছে, তিনি পুতিনের মেয়ে নয়।
রাশিয়ার টিকা নিয়ে নানা কথা ছড়ালেও এর কার্যকারিতা নিয়ে আশ্বস্ত করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ না হলেও রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকাটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি মানবদেহে প্রয়োজনীয় রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে পেরেছে। টিকাটি উদ্ভাবন করেছে রুশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সহযোগিতা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কমপক্ষে ২০টি দেশ তাদের টিকা নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে বলেছেন, রাশিয়ার টিকা নিয়ে তাঁর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে। মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, টিকা নিয়ে আলোচনা করছেন তাঁরা।