সেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনেই ফিরে এল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষা আবার শুরু হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল বুধবার ঘোষণা করেছে, করোনার সম্ভাব্য চিকিৎসার অনুসন্ধানে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আবার শুরু হবে।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষা বন্ধ করার নেপথ্যের তথ্য তুলে ধরে ‘দ্য গার্ডিয়ান’–এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কয়েকটি দেশের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ছোট আকারের স্বল্প পরিচিত স্বাস্থ্যসেবা বিশ্লেষণ সংস্থা থেকে পাওয়া ত্রুটিযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের কোভিড -১৯ নীতি এবং চিকিৎসা পরিবর্তন করেছে।
ভারতের এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৫ মে নিরাপত্তা পর্যালোচনার কথা বলে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন তারা বলছে, যেভাবে পরীক্ষা চলছিল, তা পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই।
সম্প্রতি চিকিৎসা সাময়িকী 'ল্যানসেট'–এ প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ দেখে জাতিসংঘের এ সংস্থাটির পক্ষ থেকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষা বন্ধ করা হয়। নিবন্ধে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগীদের ওষুধটি দেওয়া হলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
সলিডারিটি ট্রায়ালের নির্বাহী গ্রুপ তাদের অধীনে থাকা কয়েক শ হাসপাতালে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ করে।
‘গার্ডিয়ান’–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষা বন্ধ যে নিবন্ধের কারণে, বিখ্যাত মেডিকেল জার্নালে তা প্রকাশযোগ্য কি না, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। বিশ্বের কয়েকটি নামীদামি চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত মূল গবেষণার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
গত সোমবার ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ করেছিল কোভিড-১৯ রোগীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সাধারণত বাতের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বেশ কিছু জনপ্রতিনিধি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ওষুধটিকে সমর্থন করেছেন এবং সরকারকে ব্যাপকভাবে তা কেনার জন্য প্ররোচিত করেছেন।
কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশংসায় মেতেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি নিজেও কয়েক ডোজ খেয়েছিলেন। তাঁর প্রচারের পরই যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ কোভিড-১৯ রোগীদের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া শুরু করেছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, এ ওষুধ কার্যকর নয়, বরং তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে এ ওষুধ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কয়েক দশকের পুরোনো ওষুধটির পরীক্ষাগারের প্রাথমিক আশাব্যঞ্জক ফল ও প্রদাহবিরোধী অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এর ব্যবহার শুরু হয়।
ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকী 'দ্য ল্যানসেট' গত সপ্তাহে ৯৬ হাজার রোগীর একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করে, যাতে হাইড্রোক্সিক্লোকুইন ও ক্লোরোকুইন ব্যবহারে রোগীদের মৃত্যু এবং হার্টের ছন্দ সমস্যার ঝুঁকি বেশি দেখানোর কথা বলা হয়।
‘গার্ডিয়ান’–এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, সার্জিস্ফিয়ার নামের যে প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে, সেখানকার কর্মীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক এবং প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট মডেল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘ল্যানসেট’ ও ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’ সাময়িকীতে সার্জিস্ফিয়ারই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গবেষণার ডেটাবেস সরবরাহ করেছিল।
‘গার্ডিয়ান’ তদন্ত করে দেখেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সার্জিস্ফিয়ারের প্রধান নির্বাহীর সহযোগিতায় রচিত কোভিড -১৯–এর একাধিক গবেষণার জন্য ডেটা সরবরাহকারীদের অনেকেই কল্পকাহিনি লেখক। তাঁরা এ পর্যন্ত তথ্য বা গবেষণাপদ্ধতি (মেথডলজি) সম্পর্কে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের দাবি, বিশ্বব্যাপী এক হাজারের বেশি হাসপাতাল থেকে বৈধভাবে প্রাপ্ত তথ্য ও বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলেোর ভিত্তিতে তাঁরা এ গবেষণা করেছেন।
গত মঙ্গলবার অবশ্য ‘গার্ডিয়ান’–এর অনুসন্ধান শুরুর পর ‘ল্যানসেট’ তাদের প্রকাশিত গবেষণা সম্পর্কে ‘উদ্বেগ প্রকাশ’ করেছে।
‘গার্ডিয়ান’ বলছে, তাদের তদন্তে উঠে এসেছে, সার্জিস্ফিয়ারের কর্মীদের খুব কম বা আদৌ বৈজ্ঞানিক পটভূমি নেই। যদিও সার্জিস্ফিয়ার বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্রুত বর্ধমান একটি হাসপাতালের ডেটাবেস চালানোর দাবি করে, এটির প্রায় কোনো অনলাইন উপস্থিতি নেই। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী স্বপন দেশাইয়ের নাম তিনটি মেডিকেল কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত।