করোনা রোধে 'বুস্টার' তৈরিতে নামছে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন
বিশ্বজুড়ে করোনার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) গতকাল বৃহস্পতিবার আগামী বছরে কোভিড-১৯ শটগুলোর জন্য ভ্যাকসিন কার্যকারিতা বুস্টারগুলোর (অ্যাডজুভান্টস) ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রিটিশ এ ওষুধ উৎপাদনকারী বুস্টার বা অ্যাডজুভান্টস উৎপাদন সম্প্রসারণকে সমর্থন করার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে, যা কোভিড -১৯-এর ভবিষ্যৎ ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে।
জিএসকের অ্যাডজুভান্টটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনভাইরাস বিরুদ্ধে পরীক্ষা চলা সাতটি ভ্যাকসিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে । এর মধ্যে গত এপ্রিলে আরেক ওষুধ নির্মাতা সানোফির তৈরি ভ্যাকসিনটিও রয়ছে।
প্রচলিত টিকার পদ্ধতিতে অ্যাডজুভান্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী অনাক্রম্যতা তৈরি করতে পারে। অ্যাডজুভান্টসের কারণে একটি ভ্যাকসিনে প্রোটিনের কম ডোজ লাগে বলে বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায়।
এ কর্মসূচির খরচের বিষয়টি প্রকাশ করেনি জিএসকে। তারা বলেছে, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় তারা উৎপাদনে যাবে এবং এর মুনাফা তারা ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে গবেষণা কাজে খরচ করবে।
জিএসকে গ্লোবাল ভ্যাকসিনের প্রেসিডেন্ট রজার কনর বলেন, 'আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাপী মহামারি মোকাবিলায় একাধিক ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে এবং আমরা তা করার জন্য বিশ্বজুড়ে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।'
সানোফির সঙ্গে সহযোগিতার পাশাপাশি জিএসকে চীনা বায়োটেক সংস্থা ক্লোভার বায়োফর্মাসিউটিক্যালস, শিয়ামেন ইনোভাক্স এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জোটগুলোতে সহায়তা করেছে।
অ্যাডজুভান্টস উৎপাদনের ঘোষণার জিএসকের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে।বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, একটি সফল ভ্যাকসিন তৈরি করতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে।
লকডাউন থেকে রক্ষা পাওয়ার ও অর্থনীতি সচল করার সর্বোত্তম আশা হিসেবে বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকার কয়েক ডজন ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে অর্থ সহযোগিতা করছে। ১০০টির বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বজুড়ে কাজ চলছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাত্র ১০টির মতো ভ্যাকসিন মানুষের ওপর পরীক্ষার পর্যায়ে এসেছে। এখন তা মানুষের ক্ষেত্রে নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা দেখা হচ্ছে, যাতে অধিকাংশ ভ্যাকসিনের ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে।
কিছু ভ্যাকসিন অবশ্য অ্যাডজুভান্টস ছাড়াই কাজ করে। এই ভ্যাকসিনগুলো এম-আরএনএ ভিত্তিক, যা তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও বায়োনটেক। এতে শরীরে জেনেটিক কোড প্রবেশ করিয়ে কোষকে ভাইরাস সদৃশ প্রোটিন তৈরি করতে নির্দেশ দেয়, যা রোগ প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখায়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভাইরাল ভেক্টর পদ্ধতিতে কাজ করছে, যাতে নিরীহ ভাইরাস মানব কোষকে ভাইরাসের মতো প্রোটিন তৈরি করতে বলে। এতেও অ্যাডজুভান্ট প্রয়োজন পড়ে না। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১২০ কোটি মার্কিন ডলারে ১০০ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জেএসকে বলেছে, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর কাছে এ সহায়কটিকে উপলব্ধি করা তাদের প্রচেষ্টার মূল অংশ হবে।