ডুডলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে গুগল
আজ গুগলের হোমপেজে গেলে দেখা যাবে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বসে ছবি আঁকছেন এক শিল্পী। তাঁকে না চেনার কথা নয়। তিনি আমাদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তাঁর ১০৬তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতেই গুগল এ ডুডল প্রদর্শন করছে। আজ ২৯ ডিসেম্বর শিল্পীর ১০৫তম জন্মবার্ষিকী এবং ১০৬তম জন্মদিন।
বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুগলে (www.google.com) গেলে কিংবা সরাসরি (www.google.com.bd) ঠিকানায় ঢুকলে চোখে পড়বে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে করা ডুডলটি।
ডুডলটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি গাছের নিচে বসে তুলি হাতে ছবি (গুগল লেখা) আঁকছেন জয়নুল আবেদিন। পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন কাঁধে কলস বহনকারী এক ব্যক্তি। শিল্পীর তুলিতে ফুটে উঠেছে গুগল লেখাটি।
বিশেষ দিন, ঘটনা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানাতে বা স্মরণ করতে গুগল নিজেদের হোমপেজে বিশেষ লোগো প্রদর্শন করে। এটা ডুডল হিসেবে পরিচিত। গুগল সার্চের মূল পাতায় প্রদর্শিত লোগোটির নিচে থাকে সার্চ বার। ডুডলের ওপর ক্লিক করলে ওই বিষয়সংক্রান্ত সব তথ্য দেখায় গুগল।
গুগলের ডুডল পেজে শিল্পীর জীবনী তুলে ধরে বাংলায় লেখা হয়েছে ‘শুভ জন্মদিন’।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-৭৬) বাংলাদেশের চিত্রকলার বিকাশে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। ঢাকায় ১৯৪৮ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা তাঁর জীবনের এক মহান কীর্তি। এরই মাধ্যমে দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আধুনিক শিল্পচর্চার যাত্রা শুরু হয়।
১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার) কেন্দুয়ায় এ দেশের চারুশিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ, প্রকৃতি ও মানুষের চিত্রকর, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রণী এই শিল্পী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা। মা জয়নাবুন্নেছা ছিলেন গৃহিণী। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারের কাছ থেকেই। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফলসহ আরও কত কি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। শিল্পকলার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহের কারণে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় আর জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে মা নিজের গলার হার বিক্রি করে সে সময় ছেলেকে কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে জয়নুল আবেদিনও মায়ের সেই ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ব্রহ্মপুত্র নদের প্লাবন অববাহিকার শান্ত-সুনিবিড় মনোরম পরিবেশে। তাঁর শৈল্পিক মনন নির্মাণে প্রকৃতির প্রভাব ছিল অসামান্য ও সুদূরপ্রসারী। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি পেয়েও তিনি বলতে ভালোবাসতেন, ‘নদীই আমার শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক’। শিল্পীর আঁকা দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা ছাড়াও বিদ্রোহী, মুক্তিযোদ্ধা, গুন টানা, সাঁওতাল রমণী, সংগ্রাম, গ্রামীণ নারীর চিত্রমালা শীর্ষক ভাস্কর্য এদেশের শিল্পকলার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলার প্রকৃতি, জীবনাচার, প্রাচুর্য, দারিদ্র্য এবং বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা তাঁর তুলি আর ক্যানভাসে মূর্ত করে তুলেছিলেন। দীর্ঘ ছয় মাস ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জয়নুল আবেদিন।