পারিশ্রমিক ঠিক করবেন যেভাবে

ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনা করে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে হবেপেক্সেলস
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরু কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার থেকে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে ২০তম পর্ব।

পর্ব-২০

আপওয়ার্কের মতো মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজের বাজেট বা পারিশ্রমিক সাধারণত কাজের পরিমাণ, জটিলতা, প্রয়োজনীয় সময় এবং কর্মীদের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে ফাইভারের মতো গিগনির্ভর মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সাররাই নিজেদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে বিভিন্ন সেবা ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকে।

অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সাধারণত ঘণ্টাপ্রতি বা নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজের সুযোগ মিলে থাকে। কাজের ধরন অনুযায়ী ক্লায়েন্টরা কাজ করিয়ে থাকেন। একইভাবে ফ্রিল্যান্সাররাও নিজেদের সুবিধামতো পদ্ধতিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন

ঘণ্টাপ্রতি কাজের পদ্ধতিতে ফ্রিল্যান্সাররা নিজের দক্ষতা অনুযায়ী ঘণ্টাপ্রতি কাজের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেন। এ ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসের সাধারণ ফ্রিল্যান্সারদের ঘণ্টাপ্রতি কাজের তথ্য পর্যালোচনা করে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে পারেন। যেমন গ্রাফিকস ডিজাইন নিয়ে কাজ করা নতুন ফ্রিল্যান্সাররা প্রতি মাসে ১০০ থেকে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করা ফ্রিল্যান্সারদের ঘণ্টাপ্রতি কাজের তথ্য পর্যালোচনা করে নিজের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে পারেন। তবে মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরুর সময় ঘণ্টাপ্রতি কাজের পারিশ্রমিক কম হলে ভালো হয়। পরে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করতে হবে।

আরও পড়ুন

মার্কেটপ্লেসে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়। কারণ, ক্লায়েন্ট যদি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোনো কাজের অর্ডার দেয়, তবে আপনার মনে হতেই পারে—পারিশ্রমিক কি কম হয়ে গেল? আবার নিজে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দিলে মনে হয়, যদি কাজ না পাই? এই বিভ্রান্তি শুধু নতুনদের নয়, অনেক অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। তবে চিন্তার কিছু নেই, মার্কেটপ্লেসে থাকা বিভিন্ন কাজের পারিশ্রমিক পর্যালোচনা করে আপনি বিভিন্ন কাজের জন্য নিজের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে পারবেন।

ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কোনো কাজের প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রথমেই পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবেন না। প্রথমে কাজের বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রয়োজনে ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনা করে কাজটির খুঁটিনাটি তথ্য এবং জমা দেওয়ার সময় জানতে হবে। এরপর কাজটি আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালোভাবে করতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত হয়ে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে হবে। আপনার প্রস্তাবে রাজি হলে কাজের বিস্তারিত তথ্য, সময়সীমা এবং আপনার কাজের পরিকল্পনা ক্লায়েন্টকে জানিয়ে কাজ শুরুর জন্য সম্মতি নিতে হবে। এর ফলে কাজ জমা দেওয়ার সময় কোনো সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন

পারিশ্রমিক নির্ধারণের আগে

যেকোনো কাজের পারিশ্রমিক নির্ধারণের আগে কাজটি কীভাবে করতে হবে, সে বিষয়ে আপনাকে গবেষণা করতে হবে। অর্থাৎ কাজটি করার পাশাপাশি ভুল সংশোধন, ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মিটিংয়ের (প্রজেক্ট সময়কালীন) জন্য কত ঘণ্টা কাজ করতে হবে, তার আনুমানিক সময় নির্ধারণ করতে হবে। এবার মোট কর্মঘণ্টাকে আপনার ঘণ্টাপ্রতি কাজের পারিশ্রমিক দিয়ে গুণ করলেই পুরো কাজের পারিশ্রমিক কত হবে, তা জানা যাবে। ধরে নিই, পুরো কাজ করতে আপনার মোট ৫০ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হবে। আপনার ঘণ্টাপ্রতি কাজের পারিশ্রমিক যদি ১০ ডলার হয়, তবে ৫০০ ডলারের বিনিময়ে আপনি কাজটি করার প্রস্তাব দিতে পারেন। তবে আপনি চাইলে কাজের জটিলতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নিতে পারেন।

ফাইভার গিগের দাম নির্ধারণের আগে মার্কেটপ্লেসটিতে একই ধরনের গিগ নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের গিগগুলোর দাম সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি গিগ তৈরিতে আপনার কত ঘণ্টা সময় খরচ হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করতে হবে।

আরও পড়ুন

আলোচনা

ক্লায়েন্টরা সাধারণত আপনার নির্ধারিত পারিশ্রমিকে কাজ করাতে আগ্রহী হন না। বেশির ভাগ সময়ই ক্লায়েন্টরা বলে থাকেন, ‘তোমার প্রোফাইলে থাকা পারিশ্রমিক অনুযায়ী আমি কাজ করাব না। আমি আরও কম পারিশ্রমিকে তোমাকে দিয়ে কাজ করাতে চাই।’ এ ধরনের ঘটনা সাধারণত নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। অনেক সময় ঘণ্টাপ্রতি কাজের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করলে পুরোনো ক্লায়েন্টরা এ ধরনের কথা বলে থাকেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনাকে ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনা করে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে হবে। তবে বড় বা নিয়মিত ক্লায়েন্টের কাজের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিকে কিছুটা ছাড় দিতে পারলে ভালো হয়।

মনে রাখতে হবে, পুরোনো এবং দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের পারিশ্রমিক নিয়ে বেশি ঝামেলা করেন না ক্লায়েন্টরা। তবে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের পারিশ্রমিক কমানোর জন্য সব সময়ই চেষ্টা করেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে রাগ না করে কৌশলে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে হবে। পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন

নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়ার সময় কাজটিকে বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত করে পারিশ্রমিক উল্লেখ করতে হবে। একসঙ্গে পুরো কাজের প্রস্তাব দিলে ক্লায়েন্টের মনে হতে পারে আপনি বেশি পারিশ্রমিক দাবি করছেন।
আপনার পুরোনো ক্লায়েন্টদের তথ্য জানানোর পাশাপাশি তাঁদের ব্যবসা উন্নয়নে আপনার কাজ কীভাবে সাহায্য করেছে, তা নতুন ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে। এতে আপনার ওপর ক্লায়েন্টের ভরসা বৃদ্ধি পাবে এবং পারিশ্রমিক নিয়ে বেশি আলোচনা করবেন না।

‘তোমার অর্ধেক পারিশ্রমিকে একই কাজ অন্য ফ্রিল্যান্সাররা করতে চাচ্ছে। তুমি এত বেশি পারিশ্রমিক দাবি করছ কেন?’ মার্কেটপ্লেসে এই প্রশ্ন কমবেশি সব ফ্রিল্যান্সারকেই মুখোমুখি হতে হয়। প্রশ্নের উত্তরে কাজটির বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা উপস্থাপন করে অন্যদের থেকে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে হবে।

না বলতে শিখুন। কাজ করতে গেলে এমন অনেক ক্লায়েন্ট পাবেন, যাঁদের বাজেট আপনার চাহিদার অর্ধেকের চেয়েও কম। সেসব ক্লায়েন্টের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা করে আসলে খুব একটা লাভ হয় না। এ ধরনের ক্লায়েন্টের কাজ না করাই ভালো। তবে পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনার সময় ক্লায়েন্টের সঙ্গে কখনোই তর্ক করা যাবে না।

লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার

পরের পর্ব: ফ্রিল্যান্স কাজে পেশাদারত্ব

আরও পড়ুন