তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদান ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে কল করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এর জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার ঘটনাও বাড়ছে। সাইবার অপরাধীরা নানা কৌশলে ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সময়ে সচরাচর হওয়া হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণার ১১টি কৌশল দেখা যাক। জানা যাক কীভাবে এগুলো এড়ানো যাবে।
হোয়াটসঅ্যাপে নিকটাত্মীয় সেজে প্রতারকেরা অর্থ হাতিয়ে নেয়। ভুয়া পরিচয় দিয়ে তারা বিভিন্ন প্রতারণার কৌশল নেয়। সাধারণত ফোন চুরি হয়ে যাওয়া বা বিপদে পড়েছে, এমন কারণ জানায়। এরপর অর্থ পাঠানোর অনুরোধ করে। তাই অপরিচিত নম্বর থেকে নিকটাত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে টাকা চাইলে পরিচয় যাচাই করে নিতে হবে।
ই-মেইলসহ বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্টের ‘টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ চালু থাকলে ভেরিফিকেশন কোডের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় প্রতারকেরা হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে দাবি করে, ভুলবশত ব্যবহারকারীর নম্বরটি কোনো একটি অ্যাকাউন্টে যুক্ত করেছে। এ জন্য হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া ভেরিফিকেশন কোডটি প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।
অনেক সময় নামকরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপহার কার্ড ও গিফট ভাউচার বিনা মূল্যে পেতে একটি লিংক ছড়িয়ে দেয় হ্যাকাররা। সেই লিংকে ক্লিক করে উপহার গ্রহণের কথা বলা হয়। তবে এসব ক্ষতিকর লিংকে ক্লিক করলে ব্যবহারকারীর যন্ত্রে র্যানসমওয়্যারের হামলা ঘটে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ব্যবহারকারীরা।
হোয়াটসঅ্যাপে এখন কিউআর কোড পাঠিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। হেয়াটসঅ্যাপে এসব কিউআর কোড স্ক্যান করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে হ্যাকাররা। তবে কিউআর কোড স্ক্যান করলেই ক্ষতিকর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পাশাপাশি হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
উন্নত সুবিধাসহ ভুয়া সংস্করণের হোয়াটসঅ্যাপ গোল্ড যন্ত্রে নামানোর জন্য লিংক পাঠিয়ে প্রতারণা করে হ্যাকাররা। এই ভুয়া সংস্করণে বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুবিধা বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে বলে দাবি করে কৌশলে ব্যবহারকারীকে বিভ্রান্ত করা হয়৷ সেই লিংকে ক্লিক করলে হ্যাকিংয়ের শিকার হন ব্যবহারকারীরা।
বিশাল অঙ্কের টাকা লটারিতে জিতেছেন বলে হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়া বার্তা পাঠায় হ্যাকাররা। সেই টাকা উত্তোলনের একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয়। এসব লিংকে ক্লিক করলেই হ্যাকিংয়ের ফাঁদে পড়েন ব্যবহারকারীরা।
দাতব্য সংস্থার ভুয়া পরিচয় দিয়ে হ্যাকাররা হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে থাকে। সেখানে অসহায় মানুষদের সাহায্যে নির্দিষ্ট হিসাবে (অ্যাকাউন্ট নম্বর) টাকা পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। এ ধরনের প্রতারণা কৌশল থেকে সাবধান থাকতে হবে। অর্থ দান করলে দাতব্য সংস্থা যাচাই করে তারপর টাকা পাঠাতে হবে।
সম্প্রতি ভিডিও কলে প্রতারণার ঘটনা বাড়ছে। হ্যাকাররা ভিডিও কল দেওয়ার পর ব্যবহারকারী সেটি গ্রহণ (রিসিভ) করলে অপর প্রান্তের ব্যক্তি অশালীন অবস্থায় নিজেকে তুলে ধরে। এরপর সেই কল রেকর্ড করে ও স্ক্রিনশট নেয়। পরবর্তী সময়ে এসব ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে প্রতারকেরা। তাই হোয়াটসঅ্যাপে অপরিচিত নম্বর থেকে ভিডিও কল এলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে খণ্ড ও পূর্ণকালীন চাকরির কথা বলা হয়। এসব চাকরির শর্তও থাকে খুবই সহজ। এমনকি বেশি বেতনের কথাও বলা হয়। এরপর সেই চাকরি করতে ইচ্ছুক হলে জামানত হিসেবে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ চাওয়া হয়। কখনো কখনো কোনো লিংকে ক্লিক করে ফরম পূরণ করার কথা বলা হয়। এ ধরনের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রের ভুয়া পরিচয় দেওয়া হয়। অ্যাকাউন্টের সমস্যা সমাধানে লিংক পাঠানো হয়। কখনো কখনো ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয়। এ ধরনের প্রতারণা কৌশল থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে এখন প্রতারণা চলছে হোয়াটসঅ্যাপে। চোখ বড় হয়ে যাওয়ার মতো লাভ দেবে, ক্রিপ্টোকারেন্সির এমন স্কিমে বিনিয়োগ করার বার্তা পাঠানো হয়। সঙ্গে সেই স্কিমের ভুয়া প্রশংসাপত্র, লেখচিত্র ও ওয়েবসাইটের ঠিকানাও পাঠানো হয়। এসব বার্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। স্বল্প সময়ে ধনী বানিয়ে দেবে, এমন বার্তা পেয়ে কোনোভাবেই কোথাও কোনো অর্থ পাঠানো যাবে না।
সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ