ই-কমার্সের জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন নেই

সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন (ডান থেকে তৃতীয়)সংগৃহীত

ই-কমার্সের জন্য নতুন কোনো আইন প্রয়োজন নেই। পুরোনো আইন সংশোধন এবং ভোক্তা অধিকার ও প্রতিযোগিতা আইনের মাধ্যমেই দেশের ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি ‘খসড়া ডিজিটাল বাণিজ্য আইন, ২০২৩’ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। গতকাল রোববার এফবিসিসিআই মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন—এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবেশী বা উন্নত দেশগুলোয় যেভাবে ই-কমার্স ব্যবসা চলছে, বাংলাদেশেও সেভাবে ব্যবসা করতে দেওয়া উচিত। কিন্তু অংশীজনদের ছাড়াই এই আইনের খসড়া করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, এই আইনের দরকার নেই। কেননা, এর সবকিছুই বিদ্যমান আইনে আছে। এটি ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ডিজিটাল কমার্সে প্রতারণা করলে তিন বছরের জেল, কিন্তু মুদিদোকানে করলে কোনো শাস্তি নেই। এটা হয় না।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদের সঞ্চালনায় সভায় সংগঠনটির সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘চুরি মানেই চুরি। এটা অনলাইন বা অফলাইনে আলাদা করার দরকার নেই। অংশীজনদের মতামত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা এই আইন চাই না। ই-কমার্স সেল থাকার পর নতুন করে কর্তৃপক্ষ গঠনের কোনো দরকার নেই।’

সভায় ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিও) আলী আহম্মেদ বলেন, ফেসবুককে কেন্দ্র করে অনেকেই মৌসুমি ব্যবসা করেন। কিন্তু নতুন খসড়া অনুযায়ী, ডিবিআইডি (ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর) নেওয়ার বিধানের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসাই গড়ে উঠবে না। অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুব্রত বড়ুয়া বলেন, আলাদা কর্তৃপক্ষ না করে প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার আইনই যথেষ্ট। আইনটি পণ্যকেন্দ্রিক হলেও সেবা উপেক্ষিত। ওয়্যারহাউস, অভিযোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বাস্তবসম্মত নয়।

বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) সভাপতি নাজনীন নাহার বলেন, অতিমারিতে ই-কমার্সের অবদান বেশি। এর ৫১ শতাংশই নারী। আইনটি যে হারে খরচ বাড়াবে, তাতে পুরো ব্যবসাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অনলাইনে পরিবহনের টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইট সহজ ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির বলেন, বিদ্যমান আইনেই দোষীদের শাস্তি দেওয়া যায়।

আইনের খসড়া নিয়ে আরও আলোচনা করেন অনলাইনভিত্তিক বিকিকিনির ওয়েবসাইট বিক্রয় ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ঈশিতা শারমিন, ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবদুল হক, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকমের পরিচালক ইশরাত জাহান প্রমুখ।

অনলাইনে সভায় যুক্ত ছিলেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সোনিয়া বশির কবির, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, বেটার স্টোরিজের প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজ আনোয়ার প্রমুখ।