‘জ্ঞানকে শক্তিতে রূপান্তরের রাজ্যে স্বাগত’ কিংবা ‘জ্ঞানের জন্য আসো, সেবার জন্য যাও’। মূল ফটক থেকে শুরু করে এমন বাণী চোখে পড়বে ময়মনসিংহের গর্ব আনন্দ মোহন কলেজের বিভিন্ন প্রবেশপথে। এক দিন কলেজের এক আড্ডায় মুখোমুখি হই সুবর্ণা আলম, আলিজা তন্নি, আরেফিনা লিনা, অনিক হাসান, নাইমুর রহমান, মৌমিতা সরকার, তমালিকা কর্মকার, সজল ও রাশেদের। তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারি কলেজের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের কথা।
১৮৮৩ সালে উপমহাদেশের সমাজ সংস্কারক আনন্দ মোহন বসু প্রতিষ্ঠিত ‘ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন’টি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯০৮ সালে যাত্রা শুরু করে আজকের আনন্দ মোহন কলেজ নামে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৩ সালে সরকারীকরণ করা হয়।
‘আমাদের কলেজে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক কোর্সসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১৮টি বিষয় পড়ানো হয়।’ বলেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহানা সায়মা। আর আটপৌরে স্বপ্নের কথা শোনান গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মৌসুমী আক্তার, ‘পারিবারিক বাস্তবতায় এইচএসসি পড়ার সময়ই ঠিক করেছিলাম, স্নাতক পড়ার সুযোগ পেলে আনন্দ মোহনেই পড়ব। আমাদের কলেজের সুনাম শুধু বৃহত্তর ময়মনসিংহ নয়, গোটা বাংলাদেশেই রয়েছে। শিক্ষার্থী হিসেবে যা আমাকে গর্বিত করে।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এই কলেজের ছাত্র ছিলেন প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, নীহাররঞ্জন রায়, জাদুকর পিসি সরকার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম মোফাখখারুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম, বিশ্বভারতীর শিক্ষক অরবিন্দ পোদ্দার, লেখক যতীন সরকার, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শামসুর রহমান, বিচারপতি এম এ রশিদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখ।
‘অধিকাংশ শিক্ষার্থী কোনো না কোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। বিএনসিসি, রোভার স্কাউটসহ খেলাধুলা, সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সাফল্য আছে আমাদের কলেজের।’ বলতে থাকেন কলেজের স্নাতকপড়ুয়া অর্পিতা সাহা। শুধু সহশিক্ষা কার্যক্রম নয়, ফলাফলেও ধরে রেখেছে সাফল্যের ধারাবাহিকতা। সর্বশেষ স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল ঘাঁটলে দেখা যায়, কলেজটির ৬৯০ জন শিক্ষার্থী অর্জন করেছেন প্রথম শ্রেণী।
কলেজের অধ্যক্ষ এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিয়মিত ফল করছে। বর্তমানে প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর কলেজটিতে শিক্ষক রয়েছেন ২০১ জন। রয়েছে পাঁচটি আবাসিক হল। প্রায় ৫০ হাজার বই নিয়ে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। ইন্টারনেট ক্যাফে চালু করা হয়েছে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে কলেজটিকে করে তুলেছে অনন্য।’