ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে, এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে।’ আজ থাকছে ১৩তম পর্ব।
পর্ব-১৩
গত পর্বে আমরা ফাইভারে অ্যাকাউন্ট তৈরির পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে আমরা শিখব কীভাবে ফাইভারে গিগ তৈরি করতে হয়।
প্রথম ধাপ
ওভারভিউ বিভাগে প্রথমেই আপনাকে গিগের একটি শিরোনাম দিতে হবে। ফাইভারে সাধারণত ‘I will’ এই শব্দটি দিয়ে গিগ শুরু হয়। যেমন আপনি যদি লোগো ডিজাইনার হন, তাহলে আপনার গিগটি হবে এমন ‘I will Design Logo for your company’। অর্থাৎ আপনার গিগ সাজাতে হবে ‘I will’ শব্দটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাক্য দিয়ে। এরপর গিগটির বিভাগ এবং উপবিভাগ নির্বাচন করতে হবে। সেবার ধরন বিভাগে আপনি কোন ধরনের সেবা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তা নির্বাচন করতে হবে। এরপর গিগ মেটাডেটা বিভাগে গিগ-এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ অপশনগুলো নির্বাচন করতে হবে। এবার আপনার গিগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ৬টি ট্যাগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি যে ধরনের গিগ তৈরি করবেন, সে ধরনের গিগ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের দেওয়া ট্যাগগুলো দেখে ধারণা নিতে পারেন। তবে কারও গিগ কখনোই নকল বা কপি করতে যাবেন না, এতে করে আপনার অ্যাকাউন্ট বাতিল হতে পারে। এ অংশটি শেষ হলে সেভ করে কনটিনিউ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
প্রাইসিং বিভাগে আপনাকে গিগের প্যাকেজ বানাতে হবে, অর্থাৎ যে সেবাটি দেবেন, তাঁর জন্য আলাদা তিনটি প্যাকেজ বানাবেন। চাইলে একটি প্যাকেজও বানাতে পারেন, তবে গিগের জন্য তিনটি প্যাকেজ থাকলে ভালো হয়। প্যাকেজ তৈরির পর সেগুলোর নাম, ক্লায়েন্টরা কোন ধরনের সেবা পাবে, তা উল্লেখ করার পাশাপাশি কোন প্যাকেজের জন্য কত দিন সময় লাগবে, তা–ও জানাতে হবে। প্রতিটি প্যাকেজের নিচে বেশ কিছু অপশন দেখাবে ফাইভার, প্যাকেজের বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অপশনগুলো নির্বাচন করতে হবে। এবার প্যাকেজগুলো ব্যবহারের জন্য আপনি কত টাকা নেবেন, তা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে। আপনি চাইলে প্যাকেজগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত সেবাও দিতে পারেন। এ জন্য এক্সট্রা সার্ভিস অপশনে সহায়ক সেবাগুলোর নাম লিখে সেভ এবং কনটিনিউ অপশন নির্বাচন করতে হবে।
তৃতীয় ধাপ
ডেসক্রিপশন বিভাগে আপনার তৈরি গিগটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য লিখতে হবে। আপনার গিগটি কোন কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে, কেনার পর ক্লায়েন্ট কোন ধরনের সহায়তা পাবে বা বিক্রয়োত্তর সেবার পরিধি কত দিন, তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। চাইলে আপনার তৈরি গিগের মতো যাঁরা গিগ বানান, তাঁদের দেওয়া তথ্যগুলো পড়ে দেখতে পারেন। এরপর গিগ বিষয়ে সচরাচর ক্লায়েন্টরা যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলোর উত্তর লিখতে হবে। সর্বোচ্চ ১০টি প্রশ্নের উত্তর এ বিভাগে যুক্ত করে দেওয়া যাবে।
চতুর্থ ধাপ
রিকোয়ারমেন্ট বিভাগে গিগ অর্ডার করলে আপনার যে ধরনের তথ্য বা সোর্স দরকার হবে, তার তথ্য উল্লেখ করতে হবে। যেমন কোনো ক্লায়েন্ট যদি ওয়েব ডিজাইনের জন্য আপনার গিগ কেনেন, তবে আপনাকে তার ওয়েবসাইটের ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ছবি বা নিবন্ধও পাঠাতে হবে। কারণ, এসব তথ্য ছাড়া আপনি নির্দিষ্ট সময়ে তার নির্দেশনামতো কাজ করতে পারবেন না। রিকোয়ারমেন্ট বিভাগে বিষয়গুলো আগে থেকে উল্লেখ করে দিলে কোনো ক্লায়েন্ট তথ্য সরবরাহ করতে রাজি না হলে আপনার গিগ অর্ডার করতে পারবে না।
পঞ্চম ধাপ
ইমেজ গ্যালারি বিভাগে আপনার সেবার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভিডিও এবং তিনটি ছবি যুক্ত করা যাবে। ছবিগুলো এমন হতে হবে, যেন সেগুলো দেখেই ক্লায়েন্টরা আপনার সেবা সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারেন। ছবিতে গিগের মূল তথ্যগুলো টেক্সট আকারে লেখার পাশাপাশি সহায়ক ছবি বা আইকন ব্যবহার করতে হবে। গিগ ইমেজগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই চেষ্টা করবেন গিগ ইমেজগুলোর মান যেন ভালো হয়। সেলারদের গিগ ইমেজের মানোন্নয়নে এই বিভাগে ফাইভারের ইমেজ ব্যবহারের নীতিমালা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। ভালো মানের গিগ ইমেজ বানানোর জন্য আপনি চাইলে নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।
গ্যালারি বিভাগের নিচে আপনি দুটি পিডিএফ ডকুমেন্ট যুক্ত করতে পারবেন। ফলে চাইলেই আপনার বিভিন্ন কাজ নিয়ে ডকুমেন্ট তৈরি করে পিডিএফ ফরম্যাটে যুক্ত করতে পারবেন, যা আপনার পেশাগত পোর্টফোলিও হিসেবে কাজ করবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার গিগটি পাবলিশ হয়ে যাবে এবং ফাইভার আপনাকে গিগটির লিংক দেবে। আপনি চাইলে প্রোফাইল বিভাগ থেকে যেকোনো সময়ে গিগটির মানোন্নয়ন করতে পারবেন। এমনকি গিগে কতজন ক্লিক করেছে বা ক্লায়েন্টদের মতামতও জানা যাবে।
অ্যাকাউন্ট চালুর শেষ ধাপে অনেকের কাছে ট্যাক্স ফরম চাইতে পারে ফাইভার। তবে চিন্তার কিছু নেই, আপনি যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী নন-অপশনটি নির্বাচন করে সেভ করে দিলেই ট্যাক্স ফর্মে কোনো তথ্য দিতে হবে না।
লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার
পরের পর্ব: প্রোফাইল সাজানোর কৌশল