রিয়াদের বয়স যখন আট, তখন প্রতিদিন তাঁর জন্য একটি ডিম বরাদ্দ ছিল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মা গোলমরিচ আর লবণ মাখিয়ে ডিমটি রিয়াদের ঘরে পাঠিয়ে দিতেন। আর ছেলে প্রতিদিন নিয়ম করে ডিমটি জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতেন। চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের যে এক দিন। তা ঘটল রিয়াদের বেলায়ও। একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলেন। তারপর কী হয়েছিল, সেটা এত দিন পর তিনি আর কাউকে জানাতে চান না! তবে রুশোর কথাই শুনি। একটা ডিম দিলে তাঁর নাকি খুব মন খারাপ হয়। তাঁর এক কথা, ‘একসঙ্গে দুই-তিনটা ডিমই যদি না খেলাম তবে আর খাওয়া কী।’ ডিম খেলে কী হয় আর না খেলেই বা কী হয়—এ জন্য কথা বলেছিলাম বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি ও পথ্যবিদ শামছুন্নাহার নাহিদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, শিশুদের শরীরের জন্য ভিটামিন ডি খুব জরুরি। শরীরে ভিটামিন ডি তৈরির জন্য প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে ডিম। পাশাপাশি শরীরে প্রোটিন সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ ভাত-রুটি থাকতে হবে খাদ্যতালিকায়।
সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে মানুষের হজমশক্তি কমতে শুরু করে। কারও যদি ডিম খাওয়ার পর হজমে গোলযোগ দেখা দেয়, তাহলে তালিকা থেকে ডিম বাদ দিতে হবে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিদিন কুসুম ছাড়া ডিম খেতে পারবেন।
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে, গর্ভাবস্থায় এবং যেসব মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাঁদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকে। তাঁরা প্রতিদিন এক বা একাধিক ডিম খেতে পারেন। সেটি নির্ভর করে যদি তাঁর অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
যাঁরা ওজন বাড়াতে চান, তাঁদের জন্য ডিম হতে পারে সহজ সমাধান। ওজন কম এবং হজমশক্তিও ভালো, তাঁরা নিয়ম করে ডিম খেতে পারেন এক বা একাধিক। শুধু ডিম নয়, ডিমের তৈরি খাবারও তাঁদের জন্য ভালো। খেতে পারেন ডিমের তৈরি পুডিং, হালুয়া, কেক এমন সব খাবার।
আর যাঁদের ওজন বেশি, ঝরাতে চান বাড়তি মেদ। তাঁদের ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। ডিমের এক গ্রাম ফ্যাট থেকে আসে প্রায় নয় ক্যালরি। তাই ওজন কমাতে ডিম বাদ দিতে হবে। আর ডিম যদি খেতেই হয়, তবে কুসুম ছাড়া।
যাঁরা আকর্ষণীয় দেহ গঠনের জন্য ব্যায়ামাগারে যান, তাঁদের নিয়মিত একাধিক ডিম খেতে বলা হয়। শরীরে মাংসপেশি তৈরির জন্য প্রয়োজন প্রোটিনের। সে ক্ষেত্রে কুসুম খেলে শরীরে জমা হবে অনাবশ্যক চর্বি। তাই ব্যায়াম শেষে ডিম খান, তবে কুসুম ছাড়া।
ডিম খাওয়ার ব্যাপারে খানিকটা সচেতনও হতে হবে কখনো কখনো। যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, হার্টের সমস্যা আছে, যকৃতে চর্বি জমে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাঁদের জন্য সম্পূর্ণ ডিম খুব ক্ষতিকর। খেতে হলে কুসুম ছাড়া খেতে হবে।
অনেকেই কাঁচা ডিম খেয়ে ফেলেন। তাঁদের ধারণা, এতে হয়তো অধিক প্রোটিন। কিন্তু সত্যি হলো, শরীরের জন্য ক্ষতিকর কাঁচা ডিম। কাঁচা খেলে ডিমের মধ্যে অ্যাভিডিন নামক যে উপাদান থাকে, সেটি হজমে গোল বাধায়। তাই খেতে হবে সেদ্ধ কিংবা রান্না করে।
l লেখক: চিকিৎসক