প্রচণ্ড রোদ আর গরমকে উপেক্ষা করে আমরা ছুটে চলেছি। এ সময় আমরা ভুলে যাই ত্বকের কথা। কিন্তু এই দাবদাহে ত্বককে হেলাফেলা করা ঠিক নয়। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল বলেন, ‘গরমে সাধারণত ঘামাচি, রোদে পোড়া ত্বক, ব্রণ, ত্বকের শুষ্কতাসহ পেপিউলার আর্টিকারিয়া রোগ বেশি হয়। একটু সতর্ক হলে এড়ানো সম্ভব ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা। এই যেমন বাইরে যাওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, সুতির কাপড় পরা ইত্যাদি। প্রচণ্ড রোদে যতটা বাইরে কম থাকা যায়, ততই ভালো।’
গ্রীষ্মে ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন হরষিত কুমার।
ঘামাচি হলে
শীতল স্থানে যতটা সম্ভব থাকতে হবে। রোদে বেশিক্ষণ যাতে বাইরে থাকতে না হয়, তাই কাজগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করতে হবে।
ঘরের দক্ষিণ দিকের জানালা খোলা রাখতে হবে।
পাতলা সুতি কাপড় পরতে পারেন।
ঘামাচি হয়ে গেলে পাউডার দেওয়া যেতে পারে।
রোদে পোড়া ত্বক
দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের আলোর নিচে থাকলে রোদে ত্বক পুড়ে যায়। সমস্যাটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে হয়ে থাকে।
অবশ্য ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
বাইরে বা ভ্রমণে যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরনের লোশন বা ক্রিম ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। আর কেমিক্যাল সানস্ক্রিন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
গ্রীষ্মকালীন র্যাশ
লালচে বা বাদামি র্যাশগুলো সাধারণত কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু সতর্কতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হালকা ও পাতলা কাপড় পরলে গরমে শরীরের ঘাম বাষ্প হয়ে যায়।
ঘন ক্রিম অথবা অয়েন্টমেন্ট যেটা ঘর্মগ্রন্থির নালিকে বন্ধ করে দেয় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রতিদিন গোসল করতে হবে।
ব্রণ
ঘর্মগ্রন্থির নালি বন্ধ হয়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে ব্রণ হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে ব্রণ বেশি হয়।
ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। সকালে এবং কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
ব্রণে হাত দেওয়া যাবে না।
গ্রীষ্মকালীন ব্রণ সাধারণত পাঁচ-ছয় সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়। তবে এর পরও থাকলে চর্ম বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধে
পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে। ভ্রমণে অথবা বাইরে জরুরি কাজে বের হলে সঙ্গে পানির বোতল রাখাটা বেশ উপকারী। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি খেতে হবে। চা-কফি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রতি সপ্তাহে দুবার আলতো করে ত্বক ঘষলে ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ করা যায়। এসপিএফ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
পায়ে সমস্যা
গ্রীষ্মকালে পায়ে বিভিন্ন ধরনের একজিমা, ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
চামড়ার জুতা কিংবা খোলা স্যান্ডেল পরতে পারেন, যা আপনার পায়ে বাতাস ঢুকতে সাহায্য করবে।
পা ঘেমে গেলে জুতা পরিবর্তন কিংবা ঘাম শুকিয়ে নিয়ে আবার জুতা পরতে হবে।
মশার উপদ্রব
ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন মশাবাহিত চর্মরোগ গ্রীষ্মকালে একটু বেশি দেখা যায়। এগুলোকে বলা হয় পেপিউলার আর্টিকারিয়া। এটি প্রতিরোধে বাড়িতে দরজা-জানালায় নেট লাগাতে পারেন। বাড়িতে থাকা কোনো টব বা পাত্রে পানি জমতে দেবেন না।
গ্রন্থনা: হাবিবুল ইসলাম