চেন্নাইয়ে ১৯৯৫ সাফ গেমসে ২০০ মিটারে সোনা জিতেছিলেন কিশোরগঞ্জের স্প্রিন্টার মাহবুব আলম। কাল জুনিয়র অ্যাথলেটিকসের বালক বিভাগে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের পর লং জাম্পেও সোনা জিতল তাঁরই জেলার উজ্জ্বল সূত্রধর। এ সাফল্যই একদিন মাহবুবকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে কিশোরগঞ্জের কিশোরের
l জুনিয়র মিটে দ্রুততম বালক। একটু পর লং জাম্পেও সোনা। এতটা কি আশা করেছিলে?
উজ্জ্বল সূত্রধর: আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ঢাকায় ভালো কিছু করতে পারব। দুটি ইভেন্টেই সোনা জেতার পর তাই অনেক আনন্দ পেয়েছি।
l ভালো করার এই আত্মবিশ্বাস কোথায় পেলে?
উজ্জ্বল: বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। আমি ২০০৫ সালে প্রথম গোচিহাটা স্কুলে ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হই। তখন খেলার মর্ম অতটা বুঝিনি। পরের দুই বছর খেলিইনি। কারণ তখনো খেলায় উৎসাহ পেতাম না। কিন্তু এরপর স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। ওটা কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এরপর আন্তস্কুল, জেলা পর্যায়, আন্তকলেজে ১০০, ২০০ মিটার ও লং জাম্পে চ্যাম্পিয়ন হই। আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্যায়েও আমি চ্যাম্পিয়ন। এই ধারাবাহিক সাফল্যই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।
l এর আগে কখনো অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে দৌড়েছ?
উজ্জ্বল: না। শুধু ঘাসের মাঠে, খালি পায়ে দৌড়েছি। এক জোড়া রানিং শু কেনার সামর্থ্য আমার ছিল না। আজই প্রথম রানিং শু পরলাম। এটা আজ আমাকে একজন দিয়েছেন। কাল (পরশু) বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঢুকে আনন্দে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। টিভিতে এই স্টেডিয়াম কত দেখেছি। ঢুকে এত ভালো লাগল, কী বলব। ট্র্যাকে একটু দৌড়ালাম। হাঁটলাম। ঈশ্বরকে ডাকলাম। মোবাইলে কয়েকটা ছবিও তুলেছি।
l তোমার অ্যাথলেট হওয়ার পেছনে কার অনুপ্রেরণা বেশি?
উজ্জ্বল: বাবা কৃষ্ণচন্দ্র সূত্রধরই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। উনি এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। বাবার ইচ্ছা ছেলে বড় খেলোয়াড় হবে। কিন্তু আমি একটু অলস প্রকৃতির। বাবা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে আমাকে ডেকে দেন। বলেন, দৌড়াবি না? কিন্তু আলসেমির কারণে কখনো উঠি, কখনো উঠি না।
l কেন আলসেমি করো?
উজ্জ্বল: আমার কোনো কোচ নেই, কোনো গাইডলাইন নেই। তাই কোনো তাড়া থাকে না নিজের মধ্যে।
l তোমার জেলা থেকে উঠে এসেছেন সাফে সোনাজয়ী স্প্রিন্টার মাহবুব আলম। সেটা জানো?
উজ্জ্বল: জানি। মাহবুব ভাই যখন খেলেন তখন আমার জন্মই হয়নি। আমি যখন আন্তস্কুলে খেলি ২০১১ সালে, তখনই প্রথম মাহবুব ভাইয়ের কথা শুনি। অনেকে বলে, আমি নাকি মাহবুবের মতো দৌড়াই। উনি বেঁচে নেই বলে আফসোস হয়। মাহবুব ভাইকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল আমার।
l নিজেকে একদিন কোথায় দেখতে চাও?
উজ্জ্বল: আমার বিমানবাহিনীতে ঢোকার খুব শখ। একদিন মাহবুব ভাইকেও ছাড়িয়ে যেতে চাই। কিন্তু এ জন্য সবার আগে দরকার ভালো প্রশিক্ষণ, একজন কোচ। ফেডারেশনের কাছে একটাই চাওয়া আমি যেন সেই সুযোগ পাই।
l ঢাকায় আসার আগে কেমন প্রস্তুতি নিয়েছিলে?
উজ্জ্বল: একদমই অনুশীলনের সময় পাইনি। আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল এপ্রিলে। পরীক্ষা শেষ হলো ৩১ মে। পরীক্ষার পর কিশোরগঞ্জ থেকে সোজা ঢাকায় এসেছি। প্র্যাকটিস ছাড়াই এই রেজাল্ট। প্রস্তুতি নিতে পারলে আরও ভালো করতে পারতাম।
l পদক দুটি কাকে উৎসর্গ করলে?
উজ্জ্বল: দুটোই বাবাকে উৎসর্গ করেছি। বাবা ভীষণ খুশি হয়েছেন। বাবার সঙ্গে একটু আগেও কথা হয়েছে। ফোনে এসব শুনে কোনো কথা বলেন না। বাবাও কাঁদে। আমিও কাঁদি।