'বুলেটটা আমিই বুক পেতে নিলাম'
ঘটনাটা এখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক স্যাম ফেরিসের। সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে একটা প্রশ্ন করেই যে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠবেন, সেটা তাঁর কল্পনায়ও ছিল না। ক্রিকেট সাংবাদিকতার কল্যাণে জীবনে অনেক সংবাদ সম্মেলনে বসার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন করেই যে তিনি উল্টো কোনো ক্রিকেট অধিনায়কের প্রশ্নবানের মুখোমুখি হবেন সেটা ভাবতে পারেননি। তবে ধোনিকে করা নিজের প্রশ্নটিতে কোনো ‘ভুল’ ছিল না বলেই মনে করেন স্যাম।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে লেখা এক কলামে স্যাম লিখেছেন, ‘প্রশ্নটা মনে হয় যথেষ্ট ভালো ছিল। ২০১৪ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গোটা পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে ধোনি যেভাবে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছিল, সেটা আমার মাথায় ছিল বলেই প্রশ্নটা করেছিলাম। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম এমন প্রশ্ন করব।’
রঙিন জার্সিতে ধোনির অর্জনও নাকি স্যামকে এই প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, ‘এমন তো নয় যে সাদা বলের ক্রিকেটে ধোনির কোনো অর্জন নেই। ২০০৭ সালে তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন, ২০১১-তে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটাও তাঁর নেতৃত্বে হাতে তুলেছে ভারত। প্রশ্নটা করার আগে একটু যে নার্ভাস ছিলাম না, তা নয়। তবে আমি ঠিকঠাক প্রশ্নটা করতে চেয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, প্রশ্নটা যেন আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই করতে পারি। তবে প্রশ্নটা করার উদ্দেশ্য কখনোই তাঁকে অবসর নিতে উদ্বুদ্ধ করা ছিল না। আমি জানতে চেয়েছিলাম, তিনি খেলে যাবেন কি না। ধোনি একজন গ্রেট। গ্রেটদের অবসর নিতে উদ্বুদ্ধ করা আমার কাজের মধ্যে পড়ে না।’
ধোনি তাঁকে যখন মঞ্চে ডাকলেন তখন বেশ বিব্রতই হয়েছিলেন স্যাম। নিজেই বলছেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না, তিনি কী বলছেন। আমি তাঁর পাশে গিয়ে বসার মতো কেউ নই। প্রথমে যেতে চাইনি। পরে দেখলাম, তিনি সিরিয়াসলিই আমাকে ডাকছেন।’
সংবাদ সম্মেলনের অন্যপ্রান্তে অর্থাৎ মঞ্চে গিয়ে নাকি কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলেন স্যাম। আশঙ্কা করছিলেন কোনো তীব্র প্রতিক্রিয়ার। কিন্তু সে পথে না হেঁটে ধোনি রীতিমতো নাটকই করলেন। পাশে বসিয়ে, কান অবধি হেসে ধোনি উল্টো তাঁকেই প্রশ্ন করা শুরু করলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর ধোনি এমন প্রশ্ন নাকি ওই রাতেই ভারতীয় গণমাধ্যমের কাছ থেকে শোনার আশঙ্কা করেছিলেন।
‘অসাধারণ’ অভিজ্ঞতা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না স্যামের। ধোনির প্রশ্নবান শেষে নিজের চেয়ারে বসতেই ভারতীয় গণমাধ্যমের আক্রমণটা তাঁর কাছে কিছুটা বিব্রতকরই ঠেকেছে, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমের অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমি নাকি ভুল সময়ে “গুলি”টি ছুড়েছি।’
গুলি ছোড়ার জন্য ভুল সময় বেছে নেওয়ার প্রায়শ্চিত্তও সেদিনই সেরে ফেলেছেন স্যাম, ‘যে গুলি ছুড়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের আহত হওয়ার কথা ছিল, সেই ফিরতি বুলেটটা না হয় আমিই বুক পেতে নিলাম।’