প্রথম ইনিংসে ১৬২ রানের লিড নিয়ে থামল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৬৫ রানে গুটিয়ে গেছে স্বাগতিকেরা, মেহেদী হাসান মিরাজ ৫৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৬৮ রানের ব্যবধানে উইন্ডিজ হারিয়েছে শেষ ৭ উইকেট।
অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিন নতুন বলে বাংলাদেশের বোলিং ছিল প্রশংসনীয়। এক বছরের বেশি সময় পর টেস্ট দলে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজও নতুন বল হাতে পেয়ে উইকেটের আশায় মোস্তাফিজের হাতেই বল তুলে দিয়েছেন সাকিব। কিন্তু মোস্তাফিজের কাছ থেকে আগেরদিনের সেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং না পেলেও খালেদ আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইবাদত হোসেনের সৌজন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শেষ সেশনের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই থামাতে পেরেছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় নতুন বলটা পুরোনো হওয়ার আগে আরেক পেসার খালেদ আহমেদকে বোলিং আনেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত উইকেট আসে সেই খালেদের হাত ধরেই। ব্যক্তিগত ৯৪ রানে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট। দ্বিতীয় সেশনের বাকি দুই উইকেট এসেছে মিরাজের দুর্দান্ত অফ স্পিনে।
ব্যক্তিগত ৭৫ রানে দিনের দ্বিতীয় সেশন শুরু করেছিলেন উইন্ডিজ অধিনায়ক ব্রাফেট। নতুন বলের চ্যালেঞ্জটা সামলে নিয়ে আরেকটি শতকের পথেই তিনি এগোচ্ছিলেন। ব্রাফেটের ইনিংসের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের লিডও দীর্ঘ হচ্ছিল। খালেদ এসে এক প্রান্ত থেকে রান থামিয়ে চাপ সৃষ্টি করেন। উইকেটে যতটুকু ঘাস আছে, সেটিই ব্যবহার করছিলেন দারুণভাবে। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের অফ স্টাম্পের বাইরে খালেদ ছিলেন ধারাবাহিক। সেখান থেকেই কখনো নাকল বল, কখনো সিমিং ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করেছেন।
ধারবাহিকতার উপহারটা পেয়েছেন ইনিংসের ৯০তম ওভারে। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে আসা বলটি নিচু হয়ে ব্রাফেটের প্যাডে আঘাত করে। ২৬৮ বল খেলে ৯৪ রান করা ব্রাফেট এলবিডব্লিউ হন তাতে। এ নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ষষ্ঠ বার নড়বড়ে নব্বইয়ে কাটা পড়লেন ব্রাফেট। খালেদ উইকেট পেতে পারতেন এর আগের বলেও। প্রায় একই লাইনে করা নাকল বলটি ব্ল্যাকউডের ব্যাট ছুঁয়ে যায় কাভারে। কিন্তু পয়েন্ট ও কাভার ফিল্ডার দৌড়ে এসেও বলের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
অন্যদিকে ব্ল্যাকউড আউট হতে পারতেন মিরাজের করা ৯৭তম ওভারে। এলবিডব্লুর জোরালো আবেদনে আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় বেঁচে যান উইন্ডিজ সহ-অধিনায়ক। মিরাজ রিভিউ নিতে চাইলেও প্রথম স্লিপ থেকে সহ-অধিনায়ক লিটন দাসের অনীহায় রিভিউ নেননি সাকিব। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, আউট ছিলেন ব্ল্যাকউড। ইনিংসের ১০০তম ওভারে ইবাদতও ব্ল্যাকউডের আউটসাইড-এজ খুঁজে নেন। কিন্তু বল যায় স্লিপ ফিল্ডারদের ধরাছোঁয়ার বাইরে দিয়ে। ১২১ বল খেলে সেই ব্ল্যাকউডই অর্ধশতক পূর্ণ করেন।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে এ সময়টা স্বস্তিতে ছিল তা কিন্তু নয়। ইবাদত-মিরাজের যুগলবন্দীতে স্বাচ্ছন্দ্যে এগোয়নি উইন্ডিজ ইনিংস। ব্রাফেটের বিদায়ে ক্রিজে আসা বাঁহাতি কাইল মেয়ার্সকে দেখেই মিরাজকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেয়ার্সকে তিনবার আউট করেন মিরাজ। ১০১তম ওভারে ৭ রান করা মেয়ার্সকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে দুজনের মুখোমুখি লড়াইয়ে এবারও জিতলেন মিরাজ, সে উইকেট বাংলাদেশ পায় রিভিউ নিয়ে। উইকেটের খাতা খোলার পর নিজের দ্বিতীয় উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি মিরাজকে। পরের ওভারেই জশুয়া ডা সিলভার আউটসাইড-এজ খুঁজে পান নেন তিনি। ৯ বলে ১ রান করেই ড্রেসিংরুম ফিরতে হয় উইন্ডিজ উইকেটকিপারকে।
চা-বিরতির পর তৃতীয় ওভারে মিরাজ পান তাঁর তৃতীয় উইকেট—১৫ বল খেলে কোনো রান না করেই আউটসাইড-এজড হন আলজারি জোসেফ। উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানের ক্যাচটিও ছিল বেশ ভালো। পরের ওভারে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে কেমার রোচকে ড্রাইভের প্রলোভনে ফেলেন ইবাদত, স্লিপে ভুল করেননি লিটন দাস।
গুড়াকেশ মোতিকে নিয়ে এরপর এগোচ্ছিলেন ব্ল্যাকউড। তাঁর উইকেটেও আছে মিরাজের অবদান, খালেদের বলে কাভারে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ-অধিনায়ক ফেরেন ১৩৯ বলে ৬৩ রান করে।
মিরাজের পরের শিকার জেইডেন সিলস, সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু। সিলস রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে কাজে আসেনি সেটি। মোতি অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ২৩ রান করে।