আমার কলাম যাঁরা পড়ছেন তাঁরা তো জানেন আমি বলেছিলাম, বিশ্বকাপ জেতা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে, যার মধ্যে প্রতিপক্ষের ভুলও সহায়ক। কিছুদিন ধরে ব্রাজিলের সঙ্গে তাই হচ্ছে। মেক্সিকোর সঙ্গে ব্রাজিলের ম্যাচ হতাশাজনক ছিল বললেও কম বলা হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ভুল যেভাবে চোখে পড়েছে তাতে আমরা এবং সমর্থকেরা বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। তবে অবস্থা আরও সঙ্গিন হতো যদি ক্রোয়েশিয়া ক্যামেরুনকে ৪-০ গোলে না হারাত। সোমবারের ম্যাচ এখন তাই শুধু নিয়মরক্ষার।
ক্যামেরুন আহামরি কোনো দল নয়, ব্রাজিলের তাই সুযোগ থাকছে বড় ব্যবধানে জেতার পাশাপাশি দলের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর। ১৯৭৮ সালের পর এবারই প্রথম ব্রাজিল গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট হাতে না নিয়ে। ওদের দরকার শুধু ড্র, কিন্তু আমি মনে করি ব্রাজিলের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই খেলা উচিত। সেটা শুধু এটা ভেবে নয় যে দ্বিতীয় পর্বে কাকে পাচ্ছি আমরা, এ জন্য যে গ্রুপ শীর্ষে থেকে শেষ করাটা দলের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দেবে।
ব্রাজিলের আসলে কী হয়েছিল মেক্সিকোর সঙ্গে খেলার দিন? হাল্কের অনুপস্থিতি দলকে ভুগিয়েছে, যেটা আমি আশা করিনি। আমি ভেবেছিলাম রামিরেস খেলবে মাঝখানে, ডান দিকে নয়। ওকে ওখানে খেলিয়ে লুইস ফেলিপে স্কলারি নিজের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। নেইমারকে মার্কিং করতে মেক্সিকোর সুবিধা হয়েছে, বাঁ দিকে অস্কার ছিল বিচ্ছিন্ন।
সবচেয়ে দরকারি পরিবর্তনটাই স্কলারি করেননি। সেদিন পাওলিনহো যেমন খেলেছে, আমি নিশ্চিত ও সেটা ভুলে যেতে চাইবে। গত বছরের পাওলিনহো যে কিনা আক্রমণ ও রক্ষণ দুই দিকেই ছিল সৃষ্টিশীল, তার কেবল ছায়া হয়ে ছিল যেন ও। পাওলিনহোর জায়গায় খেলা উচিত ছিল রামিরেসের, আর হাল্কের বদলে খেলতে পারত উইলিয়ান। আমি বুঝলাম না স্কলারি কেন অনুশীলনে আর প্রীতি ম্যাচে ওকে খেলিয়ে দরকারের সময় ডাকলেন না।
টটেনহামে পাওলিনহো খুব একটা ভালো মৌসুম কাটায়নি। ওর খেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ছন্দে নেই ও, সঙ্গে রয়েছে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি। যার ছাপ ছিল ব্রাজিলের মাঝমাঠে, মেক্সিকো তো সেই সুযোগে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। খেলা ছিল গোলশূন্য, অনেকে বলতেই পারে মেক্সিকো কেবল দূর থেকেই শট নিয়েছে। তাতে কী? কিছু শট তো ছিলই গোল বরাবর। অন্য কোনো দল যাদের ওয়েসলি স্নাইডার বা লিওনেল মেসির মতো খেলোয়াড় আছে তারা তো ঠিকই জায়গা বানিয়ে নেবে।
পাওলিনহো আর গুস্তাভোর মধ্যেও অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল, গুস্তাভো মেক্সিকোর খেলোয়াড়দের চাপে না রেখে নিচে নেমে আসছিল। আক্রমণভাগে ফ্রেড একেবারেই ভালো করতে পারছিল না বলে নেইমারকে চেষ্টা করতে হচ্ছিল ব্যতিক্রমী কিছু করার। ব্রাজিল যেভাবে মাঠের শেষ তৃতীয়াংশে দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করতে ব্যর্থ হচ্ছিল সেটা ভালো লাগেনি। যে কয়টা ক্রস করা হলো ডিফেন্ডাররা সহজেই ফিরিয়ে দিচ্ছিল। আর অল্প যে কয়টা সুযোগ পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলো তো গিলের্মো ওচোয়াই ফিরিয়ে দিচ্ছিল। সেদিন ও আসলেই দুর্দান্ত খেলেছে। দলে চমক নেই, অনেক কিছুই প্রতিপক্ষ সহজে অনুমান করে ফেলছে। কিন্তু কিছু ভালো দিক অবশ্যই আছে। ব্রাজিল শেষতক লড়ে গেছে, কিছু সুযোগের সৃষ্টিও করেছে। আর অবশ্যই মেক্সিকোর মতো ড্রয়ের জন্য খেলেনি।
ক্যামেরুনের নিজেদের অনেক সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে শেষ ম্যাচে লাল কার্ড পাওয়া আলেক্স সংয়ের অভাববোধ করবে ওরা। আবার নিজেদের মধ্যেও প্রায় হাতাহাতি হয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ওরা ব্রাজিলকে সহজে জিততে দেবে। সে হিসেবে মেক্সিকোর সঙ্গে ড্রটা ছিল বাস্তবতা অনুধাবন। স্পেনকে দেখে সবারই আসলে শিক্ষা হওয়া উচিত। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় প্রতিযোগিতা এখন ঢের বেশি। স্পেনের সঙ্গে খেলার সময় আমি ভাবছিলাম, ওরা বল নিয়ে জালে কেন ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছে বক্সের বাইরে থেকে শট না নিয়ে?
ডিয়েগো কস্তার জন্য খারাপ লেগেছে। স্পেনের মতো করে ও কখনো খেলেনি। বরং ডেভিড ভিয়া ফিট থাকলে আরও ভালো খেলত। তবে আমি চাই ব্রাজিল ওদের দেখে শিখুক। সেলেসাওদের অন্যদের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বকাপ জিততে হবে, ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ এমন হবে না ব্যাপারটা।