৯৪ বছরের মধ্যে ঘরে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বাজে হার
উলভারহ্যাম্পটনে মলিনা স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজার পর মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছিলেন ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যম 'চ্যানেল ফোর'কে সত্য কথাটাই বললেন টটেনহাম তারকা, 'ভুলে যাওয়ার মতো রাত।
এই ভোলার চেষ্টাটুকু ইংল্যান্ড সমর্থকদের। হাঙ্গেরির সমর্থকেরা কিন্তু এই রাত মনের ফ্রেমে গেঁথে রাখবেন। মার্কো রসির দল নির্মমতায় যেন পঞ্চাশ দশকের সেই সর্বজয়ী হাঙ্গেরির স্মৃতি ফিরিয়েছিল মাঠে। গোটা ম্যাচে গোলপোস্টে মাত্র পাঁচটি শট রেখে চারটিতেই গোল!
রাতটা কেইনের ভুলে থাকার চেষ্টা করা তাই অস্বাভাবিক কিছু না। নেশনস লিগে হাঙ্গেরির কাছে ইংল্যান্ড যে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে।
১৯২৮ সালের পর অর্থাৎ, গত ৯৪ বছরের মধ্যে ঘরের মাঠে এই প্রথম চার গোল ব্যবধানে হারল ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে তাঁরা সর্বশেষ চার গোল ব্যবধানে হেরেছিল সে বছরেরই মার্চে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে (৫-১)।
শুধু কী তাই, ২০১৪ সালের পর এই প্রথম টানা চার ম্যাচে জয়বঞ্চিত ইংল্যান্ড, দলটির কোচ হিসেবে গ্যারেথ সাউথগেটের জন্যও এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। নেশনস লিগে 'এ৩' গ্রুপে ৪ ম্যাচে দুই ড্রয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা সাউথগেটের দল এখন অবনমনের শঙ্কায়। দুটি হারই হাঙ্গেরির বিপক্ষে।
নেশনস লিগে প্রথম মুখোমুখিতে ১-০ গোলে জিতেছিল হাঙ্গেরি। আজ ফিরতি মুখোমুখিতে দানিয়েল গাজদাগ-রোলান্ড সাল্লাইরা হাঙ্গেরি সমর্থকদের নষ্টালজিক করেছেন। ১৬ ও ৭০ মিনিটে সাল্লাইয়ের দারুণ ফিনিশিংয়ে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। শেষ ১০ মিনিটে ইংল্যান্ড আরও বাজে পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। সোল্ট নাগাইয়ের দুরপাল্লার শটে ৮০ মিনিটে আবারও গোল হজম করে ইংল্যান্ড।
দুই মিনিট পরই স্বাগতিকরা দশ জন! লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার জন স্টোনস। ৮৯ মিনিটে গাজদাগের গোলে বড় জয় নিশ্চিত হয় হাঙ্গেরির। কিন্তু ঠিক কতটা বড়?
গত ৬৯ বছরের মধ্যে ঘরের বাইরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় হাঙ্গেরির। সর্বশেষ জয়টি বিখ্যাত ; ১৯৫৩ সালে ওয়েম্বলিতে ফেরেঙ্ক পুসকাস-স্যান্দর ককসিস-ন্যান্দর হিদেকুটিদের 'ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স'খ্যাত হাঙ্গেরি ৬-৩ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ইংলিশদের।
সেই হারের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁদের বিপক্ষে কোনো দলই চার গোল করতে পারেনি। প্রায় সাত দশক পর তা করে দেখাল সেই হাঙ্গেরিই।
৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে 'এ৩' গ্রুপের শীর্ষে হাঙ্গেরি। ইতালিকে ৫-২ গোলে হারিয়ে দুইয়ে উঠে এসেছে জার্মানি। ৪ ম্যাচে জার্মানির সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। ৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ইতালি।
গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও গত ইউরোয় ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ড। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে আশার বীজ বুনেছে ইংলিশরা। কিন্তু মলিনা স্টেডিয়ামে বাজে হারের পর ইংল্যান্ড কোচ সাউথগেটকে ছাঁটাইয়ের দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
কেইন অবশ্য সমর্থকদের সান্ত্বনা দিলেন, 'দীর্ঘ সময় পর আমরা বড় ব্যবধানে হেরেছি। এ নিয়ে এত না ভেবে মাথা ঠান্ডা রাখা উচিত। আমাদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কোত্থেকে এসেছি তা ভুললে চলবে না। সব ম্যাচেই নিখুঁত খেলা যায় না।'