কোনো দরকার ছিল?
ম্যাচের পরিস্থিতি এবং সে সময় সাকিব আল হাসানের আউটের ধরন দেখে এ প্রশ্নটা উঠবে। তিন ওভার আগেই আউট হয়েছেন লিটন দাস। বাংলাদেশ তখন ৬ উইকেটে ১৬৩ রান নিয়ে চাপে। দ্বিতীয় সেশনটা ব্যাট করে কাটিয়ে দিতে না পারলে হারের সম্ভাবনাই বেশি।
উইকেটে ছিলেন বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন ও সাকিব। ইতিবাচক ব্যাট করে ততক্ষণে এক প্রান্তে বেশ ‘সেট’ হয়ে গেছেন সাকিব। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই উইকেট হারানোয় লোভ সংবরণ করে তাঁকে আরেকটু সাবধান হতেই হতো। তা না করে হুক-পুল খেলার ফাঁদে পা দিয়ে সাকিব আউট!
সকালের সেশনের শুরু থেকেই বল তোলার চেষ্টা করেছেন শ্রীলঙ্কার দুই পেসার আসিতা ফার্নান্দো ও কাসুন রাজিতা। লিটন ও সাকিব মিলে সকালের সেশনটা ভালো ব্যাট করে পার করেন। এরপর দ্বিতীয় সেশনে ৪৮ থেকে ৫২ ওভারের মধ্যে দুজনেই আউট।
আসিতাকে স্ট্রেট ড্রাইভ খেলতে গিয়ে তাঁর হাতে ফিরতি ক্যাচ দেন লিটন। ডান দিকে দারুণ রিফ্লেক্স দেখিয়ে ক্যাচটা ভালো ধরেছেন আসিতা। ৪৮তম ওভারে লিটনকে (১৩৫ বলে ৫২) তুলে নেওয়ার পর ৫২তম ওভারে ফার্নান্দোর পাতা ফাঁদেই পা দেন সাকিব।
ক্রিজে আসার পর থেকেই একটু উঠে আসা বল পুল করেছেন সাকিব। ফার্নান্দো তাই সাকিবের শরীর তাক করে বাউন্সার মারেন। কাঁধ বরাবর বলটা সাকিব চাইলেই ছেড়ে দিতে পারতেন। পুল খেলতে গিয়ে সেটাও ভালোভাবে খেলতে পারেননি। বল তাঁর গ্লাভসে লঙ্কান উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলার গ্লাভসে। আউট! ৭২ বলে ৫৮ রান করা সাকিবের এই ইনিংসটি নিয়ে আক্ষেপই থাকবে বেশি।
সাকিব-লিটন যাওয়ার পর বেশিক্ষণ টেকেনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। মোসাদ্দেক হোসেন হতাশ করেছেন দুই ইনিংসেই। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৬৯ রানে অলআউট হওয়ায় লিড দাঁড়ায় মাত্র ২৮ রানের। জয়ের মাত্র ২৯ রানের লক্ষ্য পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ৯.৩ ওভারে ২০ রান তুলতে বাকি ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে কোনো রান যোগ না করেই পড়েছে শেষ তিন উইকেট।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কা তাঁদের প্রথম ইনিংসে তুলেছে ৫০৬ রান। ১৪১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে কাল ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ৩৪ রানে চতুর্থ দিন শেষ করে বাংলাদেশ। আজ পঞ্চম ও শেষ দিনে সকালের সেশনে মুশফিকুর রহিম (২৩) আউট হলেও দারুণ ব্যাট করে বাংলাদেশকে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে টিকিয়ে রেখেছিলেন লিটন ও সাকিব।
কিন্তু মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে দুজন আউট হওয়ার পর হারের চোখ রাঙানিটা স্পষ্ট হয়ে পড়ে।
আঙুলে চোটের কারণে এই টেস্টে না খেলা স্পিনার নাঈম হাসানের জায়গায় মোসাদ্দেককে খেলানো হয়। স্পিন করতে পারেন এবং তার পাশাপাশি একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলানোই ছিল দলের পরিকল্পনা।
প্রথম ইনিংসে রান করতে না পারা মোসাদ্দেক আজ দ্বিতীয় ইনিংসে দাঁড়িয়ে গেলে পরিকল্পনাটা কাজে লেগে যেত। কিন্তু সাকিব আউট হওয়ার দুই ওভার পরই রমেশ মেন্ডিসের বলে অকারণে স্কয়ার লেগে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন মোসাদ্দেক (৯)।
পরের ওভারে টানা দুই বলে তাইজুল ও খালেদকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে অলআউট করেন আসিতা ফার্নান্দো। শ্রীলঙ্কার হয়ে ৬ উইকেট নেন পেসার আসিতা ফার্নান্দো। ২ উইকেট আরেক পেসার কাসুন রাজিতার। মেন্ডিস নেন ১ উইকেট।
চট্টগ্রাম টেস্টে ড্র করেছিল দুই দল। দুই টেস্টের এই সিরিজে মিরপুরে জিতলেই সিরিজ ১–০ ব্যবধানে জিতবে শ্রীলঙ্কা।