সিজার দেখাল সে কেন দলে আছে

ব্রাজিলের মহাতারকা জিকো
ব্রাজিলের মহাতারকা জিকো

মারাকানায় কলম্বিয়া-উরুগুয়ে ম্যাচ দেখে গাড়ি চালিয়ে ফেরার পথে ভাবছিলাম পাঁচ মাস আগেও সবাই, আমি নিজেও, ভাবছিলাম চোটের কারণে রাদামেল ফ্যালকাওয়ের অনুপস্থিতি বিশ্বকাপে কলম্বিয়াকে ভালোই ভোগাবে। সেটাই ছিল স্বাভাবিক, ও দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের একজন। আর ওর গোলের ওপর ভর করেই তো বাছাইপর্ব উতরাল কলম্বিয়া। তবে ফ্যালকাওকে ছাড়াই এখন কলম্বিয়া নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে।
তবে আমি বিস্মিত হয়েছি, যেভাবে খেলে ওরা শেষ আটে জায়গা করে নিল। প্রশংসা ওদের করতেই হবে, গোমড়ামুখে বসে না থেকে ফ্যালকাওকে ছাড়াই খেলতে হওয়াটা মেনে নিয়েছিল ওরা। ফ্যালকাও যখন মাঠে ছিল, সবাই ওর জন্যই খেলত। ও না থাকাতে কলম্বিয়া এখন খেলছে দল হিসেবে, যার ফলে আমরা দেখলাম জেমস রদ্রিগেজ আর হুয়ান কুয়াদ্রাদোর উত্থান। ওদের কারণেই দল নতুনভাবে জ্বলে উঠেছে, যার কৃতিত্ব হোসে পেকারম্যানকে দিতেই হবে। আর্জেন্টাইন কোচই দলকে বুঝিয়েছিলেন ফ্যালকাওকে ছাড়াও দলের ভালো করা সম্ভব।
শুক্রবারের ব্রাজিলের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল কলম্বিয়া শুধু টানা চার ম্যাচ জিতেই খেলতে যাচ্ছে না, তাদের জায়গাগুলোও ছিল দুর্দান্ত। পেকারম্যানের দল গোল করেছে ১১টি, বিপরীতে হজম করেছে মাত্র দুটি। আমি অবাক হয়েছি বল নিয়ে ওদের কাজ দেখে, উরুগুয়েকে আক্রমণ করেছে ওরা, কিন্তু খেই হারায়নি।
রদ্রিগেজ আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। আমার মতে, এই বিশ্বকাপের অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড় ও। ওর বল পাস দেওয়ার ক্ষমতা দুর্দান্ত। মাঝেমধ্যে মনে হবে ওকে খুঁজে পাওযা যাচ্ছে না, কিন্তু হুট করে এসে দেখবেন গোল দিয়ে দিয়েছে। আমার বিশ্বকাপ একাদশে ও থাকবে নিঃসন্দেহে, চার ম্যাচে যে পাঁচ গোল করে তাঁকে সম্মান আপনার দেখাতেই হবে।
মারিও ইয়েপেসের খেলাও ভালো লেগেছে আমার, সত্যিকারের নেতার মতোই রক্ষণদুর্গ সামলায় ও। পাবলো আরমেরো মাঝেমধ্যে মারাত্মক ভুল করতে পারে, কিন্তু সন্দেহ নেই সে দারুণ প্রতিভাবান। কলম্বিয়া যেমনটা খেলেছে, সুয়ারেজ থাকলেও উরুগুয়েকে হারিয়ে দিত ওরা। বাছাইপর্বে তো হারিয়েছিলই একবার ৪-০ গোলে। সুয়ারেজ বক্সের মধ্যে ভয়ংকর, কিন্তু দলগতভাবে কলম্বিয়া তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।
আমি মনে করি, সুয়ারেজকে শাস্তি দিয়ে ফিফা ঠিক কাজটাই করেছে। যেখানে কোটি কোটি দর্শক বিশ্বকাপ দেখে, সেখানে ফিফার সুযোগ নেই এমন অখেলোয়াড়োচিত হিংস্র আচরণ মেনে নেওয়ার। আর এমন তো না যে ও এইবারই প্রথম এমন করল। আমার শুধু খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে শাস্তির ফলটা লিভারপুলকেও ভোগ করতে হবে। এখানে ক্লাবের তো কোনো দোষ নেই। সুতরাং নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক ম্যাচের ওপর কার্যকর হলেই বেশি ভালো হতো। তবে শাস্তি ওকে পেতেই হতো, এমন কাজ করতে আমি আমার কোচ বা খেলোয়াড়ি জীবনে কাউকে দেখিনি।
কলম্বিয়া এখন স্বপ্ন দেখতেই পারে। চিলি যেভাবে ব্রাজিলকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল, সেটা ওদের আরও অনুপ্রাণিত করবে। তবে আমি মনে করি না সেলেসাওরা পর পর দুই ম্যাচে জঘন্য খেলবে। চিলির বিপক্ষে ওদের খেলায় সৃষ্টিশীলতার অভাব ছিল, আর নেইমারও নিজের সেরাটা খেলতে পারেনি। শুরুতেই চোট পাওয়ায় ওর গতি কমে গিয়েছিল, চিলি রক্ষণভাগ সহজে ওকে আটকাতে পেরেছে। চিলি খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করেছিল ম্যাচের অনেকটা সময়ই, কিন্তু গোলের সামনে স্পেনের সঙ্গে ওরা যেমন ছিল, তেমন করে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।
ব্রাজিল কিছু সুযোগ ঠিকই তৈরি করেছিল, কিন্তু খেলায় পরিকল্পনার অভাব ছিল স্পষ্ট। তবে আমি চিন্তিত মার্কিং নিয়ে, বিশেষ করে ফুলব্যাকদের। মাঝমাঠে লুইজ গুস্তাভোর দুই হলুদ কার্ডের ফলে নিষিদ্ধ হওয়াটাও চিন্তার বিষয়। ও আমাদের সেরা ম্যান মার্কার, জেমস রদ্রিগেজকে আটকানোর জন্য ওকে পেলে ভালো হতো। কুয়াদ্রাদোকে নিয়েও ব্রাজিলের ভাবতে হবে। আমি স্কলারির হুলিও সিজারকে দলে রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, সেটা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। বেলো হরিজন্তেতে ও শুধু টাইব্রেকারেই দুর্দান্ত ছিল না, দ্বিতীয়ার্ধে অসামান্য একটা সেভও করেছে।
ব্রাজিলকে আরও ভালো খেলতে হবে, আর কমাতে হবে নেইমারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা। কলম্বিয়া চিলির মতো চাপ প্রয়োগ করে খেলবে না, কিন্তু রদ্রিগেজ যেমন খেলছে, অঘটনের স্বপ্ন ওরা দেখতেই পারে।