‘সাকিব ভাই যেখানে আছে, সেখানে কীভাবে কী?’
সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ—মুমিনুল হক দায়িত্ব ছাড়ার পর টেস্টের পরবর্তী অধিনায়কের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন এ তিনজন। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক করা হয়েছে সাকিবকে, সহ–অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন লিটন দাস। অধিনায়কত্বের প্রশ্নটা অবশ্য উড়িয়েই দিলেন মিরাজ। ‘সাকিব যেখানে আছেন’—সেখানে এ প্রশ্ন ওঠেই না বলে মনে করেন তিনি।
সাকিবকে পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণার সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, তিনজনের মধ্য থেকে অধিনায়ক ও সহ–অধিনায়ক বেছে নিয়েছেন তাঁরা। সাকিব ও লিটন বাদে তৃতীয় ব্যক্তি মিরাজ, জানা গেছে এমন। একসময় অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মিরাজ মনে করছেন, দলের এখনকার পরিস্থিতিতে সাকিবই ‘সেরা’।
আজ বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির (বিএসপিএ) বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার নিতে আসা মিরাজ মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংবাদিকদের। সেখানেই এসেছিল অধিনায়কত্বের প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পাননি, এমন কথা শোনার পর একটু অবাকই হয়েছেন মিরাজ, ‘ভাই, “হয়নি” বলতে কী? সাকিব ভাই যেখানে আছে, সেখানে কীভাবে কী? সাকিব ভাই তো মনে করেন বাংলাদেশকে অনেক দিন নেতৃত্ব দিয়েছে। সাকিব ভাই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। বর্তমানে আমাদের দলের অবস্থা অনুযায়ী আমি মনে করি সাকিব ভাই “বেস্ট”।’
বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ দলে কোনো সংস্করণেই সহ–অধিনায়ক ছিলেন না কেউ। লিটনকে দায়িত্ব দিয়ে বিসিবি ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার পথেই দেরিতে হলেও একটু এগিয়েছে। মিরাজও বলছেন, তাঁদের মতো তরুণের জন্য ভবিষ্যৎটা পড়ে আছে, ‘(সাকিব ছাড়াও) আরও যে সিনিয়র আছেন, (তাঁদের) দায়িত্ব নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন ধীরে ধীরে খেলছি, তাঁদের দেখে শিখছি। তাঁদের দেখে শিখব, আমাদের অভিজ্ঞতা আরও ভালো হবে। অনেক সময় আছে। এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না।’
অধিনায়কত্বের ব্যাপার নিয়ে ভাবেননি বলেই জানালেন এ অলরাউন্ডার, ‘যেটা আপনি বললেন, নাম আছে। এটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা হলো কীভাবে পারফর্ম করতে হবে, দেশকে কীভাবে ভালো খেলে এগিয়ে নিতে পারব। আমি এটাই চেষ্টা করি সব সময় যে নিজে প্রতিনিয়ত পারফর্ম করার জন্য। যেটা আপনি বলেছেন, কখনো আমার মাথায়ও ঢোকেনি। কারণ, নিজের পারফরম্যান্স এবং দল কীভাবে ফল আনবে—এটা নিয়েই সব সময় চিন্তা করি।’
চোটের কারণে শ্রীলঙ্কা সিরিজ মিস করা মিরাজ আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলে। সম্প্রতি নেটে অনুশীলনে ফিরেছেন তিনি। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে খেলেছিলেন মিরাজ। দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেটও নিয়েছিলেন। সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বলেই জানেন, চ্যালেঞ্জটা কেমন হতে যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সর্বশেষ সফরে প্রথম টেস্টে ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার বাংলাদেশ হেরেছিল দুটি টেস্টই। এবার অবশ্য ভালো কিছু করার আশার কথাই শোনালেন মিরাজ, ‘তিনটা ফরম্যাটই আছে। শেষবার টেস্টে আমরা ও রকম ভালো করতে পারিনি, এবার আমরা চেষ্টা করব, যেহেতু সাকিব ভাই আছে, উনি ভালো পারফর্ম করছেন। আমাদের ব্যাটারদের যে “ব্যাড প্যাচ” চলছে, আশা করি দ্রুতই সেটা কাটিয়ে উঠবে।’
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাওয়া মিরাজ জাতীয় দলে বেশ কিছুদিন ধরেই মূলত ছিলেন অফ স্পিনার, সঙ্গে টুকটাক ব্যাটিং। তবে সম্প্রতি ব্যাটিংয়ে তাঁর উন্নতিটা স্পষ্টই। মিরাজ বলছেন, ব্যাটিং নিয়ে নিজেও ভাবছেন তিনি, ‘চেষ্টা করছি। ব্যাটিংটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমার চেয়ে দলের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেখানে ব্যাট করি, আমার জন্য ৫০ রান বা ১০০ রানের জুটি অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। আমি হয়তো এটা চিন্তা করেছি, কাজ করেছি কোচের সঙ্গে। কীভাবে আমার এখানে উন্নতি করতে হবে, কীভাবে ব্যাটিং ভালো করতে হবে। ছোট ছোট জিনিস উন্নতি করেছি, হয়তো এটা কাজে লেগেছে।’
আর বিএসপিএর পুরস্কার নিয়ে মিরাজের অনুভূতি, ‘আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা প্রতিবছর খেলোয়াড়দের অ্যাওয়ার্ডটা দেয়। যেহেতু এই বছর আমি পাচ্ছি অবশ্যই আমার অনেক ভালো লাগার বিষয়। এর আগে আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা পেয়েছে, এবার আমি পাচ্ছি। (আশা করি) ভবিষ্যতেও তারা এটি আয়োজন করবে এবং ক্রিকেটার বা অন্য খেলোয়াড়েরা উৎসাহিত হবে—তারাও এই অ্যাওয়ার্ড পেতে পারবে।’