শেষ আটের আগে সেরা একাদশ

আমার সেরা একাদশ নির্বাচন করলাম। এদের অনেককেই হয়তো এরই মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে, কিন্তু তার আগে তারা ফুটবল-বিশ্বকে মাতিয়ে গেছে তাদের অনন্য নৈপুণ্যে।

গোলরক্ষক
গিলের্মো ওচোয়া (মেক্সিকো): বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল ফ্রি এজেন্ট হয়ে, তবে মনে হয় না এরপর আর সেই অবস্থা থাকবে। ওচোয়া অসাধারণ কিছু সেভ করেছে, বিশেষ করে ব্রাজিলের সঙ্গে সেভগুলোর কথা তো বলতেই হবে। হল্যান্ডের সঙ্গেও ওচোয়া ছিল অসাধারণ, কেবল ওয়েসলি স্নাইডারের বিদ্যুৎগতির শটটাই ওকে পরাস্ত করেছে। এমন একজন গোলরক্ষক থাকলে দলের চিন্তা অনেকটাই কমে যায়।

ডিফেন্ডার
মরিসিও ইসলা (চিলি): ম্যানেজার হিসেবে এমন একজন ফুলব্যাক আপনি চাইবেন যে প্রতিপক্ষকে খেলার জায়গা দেবে না, প্রয়োজনে আক্রমণে সাহায্য করবে, আবার নিচেও নেমে আসবে। ইসলার মধ্যে এর সব গুণই আছে। আমি মনে করি চিলির এত দূর আসার পেছনে ওর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ব্রাজিলের জন্য ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মারিও ইয়েপেস (কলম্বিয়া): বয়স যে কোনো বাধা নয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কলম্বিয়া অধিনায়ক। দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের বয়স ত্রিশের কম হওয়ায় নিঃসন্দেহে তার অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় কোচের জন্য বড় সম্পদ। এখন পর্যন্ত কলম্বিয়া মাত্র ৩ গোল খেয়েছে, যার অন্যতম বড় কারণ অবশ্যই ইয়েপেস।
ডেভিড লুইজ (ব্রাজিল): দেশের মাটির বিশ্বকাপ পরীক্ষায় লুইজ যেভাবে উতরে গেছে তাতে আমি মুগ্ধ। ও খেলেছে সিংহের মতো, আর আত্মবিশ্বাসেরও কমতি ছিল না ওর মধ্যে, যেখানে অনেককে দেখেই মনে হয়েছে প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়েছে। বল পায়ে লুইজের খেলা দেখার মতো, বিশেষ করে ক্যামেরুনের সঙ্গে তৃতীয় গোলটি ফ্রেড করেছে ওর দুর্দান্ত এক ক্রস থেকে।

মিডফিল্ডার
ব্রায়ান রুইজ (কোস্টারিকা): ‘গ্রুপ অব ডেথ’ থেকে কোস্টারিকার দ্বিতীয় পর্বে উত্তরণের মূল নায়ক। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি দীর্ঘ কোস্টারিকা অধিনায়ক দলের প্রাণভোমরা। এমনকি ও যখন গোল করে না তখনো সে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ও সব সময় বক্সের ভেতর ঢোকার জন্য ওত পেতে থাকে আর ওর গতি আর আক্রমণাত্মক মনোভাব দলের খেলার ধরনের সাথে পুরোপুরি মানানসই।
লুইজ গুস্তাভো (ব্রাজিল): এখন পর্যন্ত সেলেসাওদের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তবে আমি চাইব ওকে যেন শুধু প্রতিপক্ষকে আটকানোর কাজেই না লাগানো হয়। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নেওয়ার মতোই দুর্দান্ত ওর পাস দেওয়ার ক্ষমতা। (এখন পর্যন্ত ও ৩৪ বার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়েছে, তার থেকে বেশি আছে কেবল গ্যারি মেদেল)। কলম্বিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে নিঃসন্দেহে ওর অভাববোধ করবে ব্রাজিল।
হামেস রদ্রিগেজ (কলম্বিয়া): রদ্রিগেজকে শুধু এ বিশ্বকাপের অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড় বলাটা ভুল হবে। বল পায়ে সে দুর্দান্ত আর তার পাসিংও নিখুঁত। চোটের কারণে বিশ্বকাপে খেলতে না-পারা রাদামেল ফ্যালকাওয়ের অভাব কলম্বিয়াকে একদমই বুঝতে দেয়নি রদ্রিগেজ। মাঝে মাঝে ওকে ধীরগতির মনে হয়, কিন্তু প্রতিপক্ষ বুঝতেই পারে না হুট করে ও কখন গতি বাড়িয়ে দেবে।
ডেলি ব্লাইন্ড (হল্যান্ড): সবাই হয়তো স্নাইডার, রবিন ফন পার্সি বা আরিয়েন রোবেনের কথা বলবে, কিন্তু ব্লাইন্ডের হাত ধরেই স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচে ফিরে এসেছিল হল্যান্ড। পার্সির গোলটা এত অসাধারণ ছিল যে সবাই ভুলে গেছে ব্লাইন্ডের ক্রসটা কী দুর্দান্ত ছিল। সে আমাকে মুগ্ধ করেছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তার ভূমিকা ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।

ফরোয়ার্ড
আরিয়েন রোবেন (হল্যান্ড): বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রোবেন আরও পরিণত হয়েছে, বায়ার্ন ও হল্যান্ড দুদলের হয়েই রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। খুবই কুশলী। স্পেনের সঙ্গে যেভাবে সে গোলটা করল সেটা এখনো আমার চোখে ভাসে। সবাই জানে সে ভেতরে ঢুকে বাঁ পায়ে শট নিতে পছন্দ করে। নিঃসন্দেহে তুরুপের তাস।
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা): আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় পর্বে গেছে তিন ম্যাচ জিতে, তিনটিতেই মেসি গোল করেছে। সে যদি নাইজেরিয়ার হয়ে খেলত, তারাই জিতত। তার অসাধারণ গোলগুলো ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। এর থেকে ভালো করা অসম্ভব।
নেইমার (ব্রাজিল): প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়েনি নেইমার। তাকে কখনো লুকিয়ে থাকতে দেখবেন না। তার ফিটনেসও অসামান্য। সেলেসাওদের বেশ কবার ওই বাঁচিয়ে দিয়েছে। নেইমার নিজের দায়িত্ব ঠিকই পালন করছে, কিন্তু ব্রাজিলের ওর ওপর এতটা নির্ভর করা উচিত নয়। সে খুবই সাহসী আর বল পায়ে তার দক্ষতা অনন্য।